যে কারণে থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন পেতংতার্ন
রায়হান আহমেদ তপাদার
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
থাইল্যান্ড এখনো একটি ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রে ভরা দেশ। গত বছরের ২০ মার্চ তাই পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়া হয়েছিল এবং পরের ৪৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তার কারণে ১৪ মে নির্বাচনের দিন ঘোষিত হয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গেই তার জন্য প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রয়ুত চ্যান-ও-চা’?র অধীনে আধা-সামরিক নেতৃত্বের শাসনের অবসানের দাবিতে তাইল্যান্ডে বর্তমানে নাগরিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রিত্বের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সবচেয়ে কৌতূহলোদ্দীপক রাজনৈতিক প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন পেতংতার্ন শিনাওয়াত্রা। ইনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার কন্যা এবং তাইল্যান্ডের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইংলাক চিন্নাওয়াতের দাদার মেয়ে, যাদের দুজনকেই যথাক্রমে ২০০৬ ও ২০১৪ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়েছিল- এই ধরনের ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে তাই জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যতের জন্য বাজিগুলি এখন উল্লেখযোগ্যভাবে উচ্চমাত্রার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই জাতীয় রাজনীতির অস্থির গতিশীলতা ফেউ তাইয়ের পক্ষে সামরিকপন্থি জোটের দ্বারা প্রভাবিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থিতাবস্থা ভাঙতে একটি চ্যালেঞ্জ হিসাবে কাজ করে। পেতংতার্নের মনোনয়নকে জনসাধারণ একটি ইতিবাচক ও স্বাগত ঘটনা হিসাবে
দেখা হয়েছিল। তাই, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সামরিক প্রভাবকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে না পারলে বিরোধীরা আকস্মিকভাবে এই ধরনের পরিবর্তন করতে সক্ষম হবে না বলে ধারণা করেছিলেন বিশ্লেষকরা। শেষ পর্যন্ত থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ধনকুবের থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেছে দেশটির পার্লামেন্ট।
৩৭ বছর বয়সী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা হবেন দেশটির সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। এর আগে তার ফুফু ইংলাক সিনাওয়াত্রা থাইল্যান্ডের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্রেথা থাভিসিনকে সাংবিধানিক আদালত পদচ্যুত করেছেন। এর দুদিন পর পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে নতুন ও সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছে দেশটির পার্লামেন্ট। নতুন ও সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন। ফিউ থাই পার্টির নেতা স্রেথা থাভিসিনকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণে পার্লামেন্টের ৪০ জন সিনেটর একটি পিটিশন দাখিল করেছিলেন। চলতি বছর সাংবিধানিক আদালতের বিচারকেরা ছয়-তিন ভোটে পিটিশনটি গ্রহণ করেন। স্রেথার বিরুদ্ধে অভিযোগ, দুর্নীতি ও আদালত অবমাননার দায়ে ২০০৮ সালে ছয় মাসের কারাদণ্ড পাওয়া সাবেক আইনজীবী পিচিট চুয়েনবানকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন তিনি। পিচিটের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি আদালতের কর্মীদের একটি ব্যাগে ২০ লাখ বাথ অর্থাৎ ৫৫ হাজার ২১৮ ডলার ঘুষ দেয়ার চেষ্টা করেন। ওই সিনেটরদের যুক্তি, দণ্ডপ্রাপ্ত পিচিটকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়ার মধ্য দিয়ে নৈতিকতার মান লঙ্ঘন করেছেন স্রেথা। সমালোচকদের অনুমান ছিল এটি। ২০০৭ সালে ফিউ থাই পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও ধনকুবের থাকসিন সিনাওয়াত্রার সঙ্গে পিচিটের যোগাযোগ তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হতে সহায়তা করে। সম্প্রতি স্রেথাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অপসারণ করেন ব্যাংককের সাংবিধানিক আদালত। গত ১৬ বছরের মধ্যে তিনি হলেন থাইল্যান্ডের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী, যাকে সাংবিধানিক আদালত ক্ষমতাচ্যুত করলেন। যদিও পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী স্রেথাও একই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
পার্লামেন্টের ৪৯৩ আসনের মধ্যে তাঁর দল ও জোটের আসন ৩১৪টি। প্রধানমন্ত্রী হতে বর্তমান আইনপ্রণেতাদের অন্তত অর্ধেক সংখ্যকের সমর্থন প্রয়োজন ছিল তার। পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে পেতংতার্নের পক্ষে ৩১৯টি ভোট পড়ে, আর বিপক্ষে পড়ে ১৪৫টি। তাই সহজেই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন পেতংতার্ন। পেতংতার্ন ব্যাংককের চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। উং-ইং ডাকনামেও পরিচিত পেতংতার্ন। ৩ বছর আগে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি। এর আগে তিনি পারিবারিক হোটেল ব্যবসা পরিচালনায় সহায়তা করতেন। পেতংতার্নের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ২০২১ সালে। ওই সময় ফিউ থাই পার্টির ইনক্লুশন অ্যান্ড ইনোভেশন অ্যাডভাইজরি কমিটির প্রধান হন তিনি। ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে দ্বিতীয় সন্তানের মা হন পেতংতার্ন। নির্বাচনে তিনি ছিলেন একজন জনপ্রিয় প্রার্থী। পেতংতার্ন থাকসিন পরিবার থেকে দেশের শীর্ষ পদে আরোহণ করা তৃতীয় ব্যক্তি। তার বাবা থাকসিন থাই রক থাই পার্টি থেকে ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী হন।