ঢাকা ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দায়ীদের শনাক্ত করুন

ভল্টের ১২ হাজার ভরি স্বর্ণ গায়েব
দায়ীদের শনাক্ত করুন

দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা এখনো খুব দুর্বল। ক্ষমতাসীনরা দুষ্টচক্র গড়ে তুলে জনগণের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। পতিত ফ্যাসিস্ট আমলে অবস্থা এত খারাপ হয় যে, ব্যাংকের ভল্টে রাখা স্বর্ণ ও মূল্যবান আসবাবও গায়েব করা হয়েছে। এখন জানা যাচ্ছে, সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি স্বর্ণের হদিস নেই।

পুরো ব্যাংকব্যবস্থায় এখনো অস্বস্তি রয়েছে। ব্যাংকগুলো থেকে খোয়া যাওয়া অর্থ উদ্ধার করা যাবে কি না তা নিশ্চিত নয়। বড় বিষয় হলো, রাঘববোয়াল যারা এই অপকর্মে জড়িত; তাদের শাস্তির বিষয়টি। অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস পার হতে চললেও বিগত সরকারের অলিগার্কদের এখনো আইনের আওতায় আনা যায়নি। বিচারের মুখোমুখি করা তো দূরের কথা। অথচ এদের বিচার করা না গেলে ব্যাংক খাতে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা পুরোপুরি মেরামত করা সম্ভব নয়। এর জেরে আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়ে যাবে।

সমবায় ব্যাংকের স্বর্ণ উধাওয়ের খবর প্রকাশ্যে আনেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা। পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বার্ডের বার্ষিক পরিকল্পনা সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে তিনি আরো জানান; ব্যাংকটির আরো বহু সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে। যারা একসময় এই ব্যাংকে ছিলেন তারা এগুলো আত্মসাৎ করেছেন। ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, একটি অসাধুচক্র ব্যাংকের সম্পদ আত্মসাৎ করতে দুষ্টচক্র গড়ে তোলে। ঋণের বিপরীতে নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট লিমিটেড ১৩ হাজার ২২৫ ভরি স্বর্ণ জামানত রাখে। ১০ বছরেও তারা ঋণ পরিশোধ করেনি। এ সুযোগে ৩০তম ব্যবস্থাপনা কমিটিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ঋণের বিপরীতে মেয়াদোত্তীর্ণ স্বর্ণ বিক্রি করা হবে। এরপর নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট লিমিটেডের পক্ষ থেকে স্বর্ণ ফেরত পেতে সমবায় ব্যাংক বরাবর ১ হাজার ৯৮৪টি আবেদন জমা হয়। এর মধ্যে মাত্র তিনটি আবেদন ছিল সঠিক। দশ বছর আগে দেয়া ব্যক্তির স্বাক্ষরের মিল নেই, জাতীয় পরিচয়পত্রেও ঘাপলা ছিল।

সম্পদ সংরক্ষণে ব্যাংকের ভল্ট নিরাপদ ভাবা হয়। এ কারণে মানুষজন স্বর্ণ অলঙ্কার, জমির দলিলসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র জমা রাখেন। মাফিয়া হাসিনার শাসনামলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শুরু করে প্রায় সব ব্যাংকে আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। তার সাথে শুরু হয় ভল্ট থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া যাওয়া। এমনকি বিমানবন্দর থেকে কাস্টমসের নিরাপদ হেফাজত থেকেও স্বর্ণ খোয়া যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিগত সরকারের সময় ব্যাংক লুটপাটের একটি ঘটনাও তদন্ত হয়নি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তারা সরকারের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। সব জায়গায় ছিল এদের দাপট। দুর্নীতিবাজদের দাপটে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কাজ করতে পারেনি। এখন খবর বেরুচ্ছে, লুটপাট চক্রের সাথে খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থার লোকজনও জড়িত ছিলেন। ভল্টে থাকা স্বর্ণ-রৌপ্য হাওয়া হওয়ার ঘটনাগুলোর কোনো তদন্ত হয়নি। বিচারের আওতায় আনা বহু দূরের কথা।

অন্তর্বর্তী সরকার ধীরে কাজ করছে বলে মনে করা হচ্ছে। একটি গণ-অভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন খাতে যত দ্রুত সংস্কার কার্যক্রম হওয়ার কথা; তা দৃশ্যমান নয়। বিশেষ করে ব্যাংক লুটপাটকারী চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান দেখা যাচ্ছে না। আইনের আওতায় আনার বিষয়টিও সেভাবে এগোচ্ছে না। ভল্ট থেকে স্বর্ণ গায়েব হয়ে যাওয়া ব্যাংক ব্যবস্থায় যে অসংখ্য অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে; তার ক্ষুদ্র একটি অংশ। আসলে এ ধরনের প্রত্যেকটি ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হওয়া উচিত। হোতাদের শিগগির বিচারের আওতায় আনতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত