শস্যবীজের দাম আকাশচুম্বী

মো. সাইফুল ইসলাম

প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

কৃষিপ্রধান দেশে কৃষকের আগ্রহ দিন দিন কমেছে। এক্ষেত্রে কৃষি উৎপাদনের অত্যাবশ্যকীয় উপকরণের মাত্রাতিরিক্ত দাম বিশেষত মৌসুমি ফসলের বীজ বপনকালে বীজের উচ্চমূল্য কৃষকদের জন্য হয়ে উঠেছে প্রধান বাধা। সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএডিসি এবং বাজারের আড়তদাররা বীজের দাম কমানোর আশ্বাস দিলেও আমরা দেখছি শস্যবীজের দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। দেশের জনগণের একটি বিশাল অংশ তাদের জীবনধারণের জন্য কৃষির ওপর নির্ভর করে। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য দূরীকরণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষি খাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সর্বশেষ আদমশুমারি তথ্য মতে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১১.৩৮ শতাংশ এবং কৃষিতে নিয়োজিত জনশক্তি ৪৫.৪ শতাংশ। যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আলু গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপণ্য। আলু চাষে দেশের কৃষকদের আগ্রহও দীর্ঘদিনের। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আলুর বীজের উচ্চমূল্য তাদের জন্য তৈরি করেছে নানা সমস্যা। সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বর মাস আলুর বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। অথচ এই মৌসুমের আগমনে প্রত্যাশিতভাবে আলুর বীজের মূল্য কমানোর পরিবর্তে, তা আকাশচুম্বী পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একসময় সরকারি ও বেসরকারি কোল্ডস্টোরেজে বীজ সংরক্ষণ করা হলেও, বর্তমানে এসব বীজের মূল্য বৃদ্ধির জন্য কোনো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর নেই বললেই চলে। বাজার বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এবং বিভিন্ন আড়তদার বর্তমানে যে দামে আলুর বীজ বিক্রি করছে, তা কৃষকদের চাহিদার তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে বেশি। এই উচ্চমূল্যের কারণে চাষিরা আলুর মতো গুরুত্বপূর্ণ ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারাচ্ছে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে হুমকিস্বরূপ।

কৃষকদের ভাষ্যমতে, শুধু আলুর বীজই নয়; ধান, গম, পেঁয়াজ, রসুন, সরিষাসহ বিভিন্ন মৌসুমি শস্যবীজের দামও মৌসুমের সময় বেড়ে যাচ্ছে। বীজ বপনের মৌসুমে এমন অবস্থা হওয়ায় কৃষকরা চাষাবাদ থেকে নিরুৎসাহিত হচ্ছে, যা কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এভাবে প্রতিটি শস্যবীজের দাম বাড়তে থাকলে কৃষকের চাষাবাদে আগ্রহ কমে যাওয়াই স্বাভাবিক। ইতোমধ্যে অনেকেই চাষাবাদ ছেড়ে বিকল্প কর্মসংস্থানের খোঁজ করছেন। শস্যবীজের দামে লাগাম টানতে হবে এবং শস্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। সরকার চাইলে সঠিকভাবে কোল্ডস্টোরেজে সংরক্ষিত বীজ কম খরচে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করতে পারে। কৃষিতে উৎসাহ প্রদান করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। বিএডিসির মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে শস্যবীজের দাম কমানোর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের বীজ মজুত ও বিতরণের ব্যবস্থায় কোনোরকম পরিবর্তন আনছে না। এই পরিস্থিতিতে খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এই সমস্যার দ্রুত সমাধান না করলে দেশে অচিরেই খাদ্য সংকটের আশঙ্কা তৈরি হবে, যা কেবল খাদ্যের সংকটেই থেমে থাকবে না, বরং দেশের অর্থনীতিতেও এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এক্ষেত্রে সরকারি কোল্ডস্টোরেজ এবং অন্যান্য সংরক্ষণাগারের সক্ষমতা বাড়িয়ে সঠিক সময় বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করা, কৃষকদের চাষে উৎসাহিত করতে বীজের দামে ভর্তুকি প্রদান করা, যাতে কৃষকরা সহজেই তা ক্রয় করতে পারে এবং বীজের মূল্য নির্ধারণে মনিটরিং কমিটি গঠন। এ ছাড়া যারা উচ্চ মূল্যের বীজ কিনতে অক্ষম, তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা। খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষার্থে কৃষক সহায়তা বাড়ানো জরুরি। সরকারকে এই সংকটের দিকে নজর দিয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

লেখক : শিক্ষার্থী, কৃষি অনুষদ, পটুয়াখালী

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি)