ঢাকা ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশ হাত বাড়িয়ে চায় তারেক রহমানকে

মো. মিজানুর রহমান, কলামিস্ট ও গবেষক
বাংলাদেশ হাত বাড়িয়ে চায় তারেক রহমানকে

এ কটি মানুষের জীবনে কর্মকাণ্ডে কতটুকু সফলতা আসলে স্থান বা কাল বা দেশের সাথে তার নাম একাকার হয়ে যায়? বাংলাদেশের সমসাময়িক পেক্ষাপট বিশ্লেষণে দেখা যায়, আজকের যে নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ- তা একদিনে আসেনি। বিরোধী দলের বিশেষ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা সীমাহীন অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন, জেল-জুলুম, গ্রেফতার, রিমান্ড, কারাবরণ, গুম, অপহরণ সয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে শেখ হাসিনা সরকারের দুঃশাসন, লুটপাট, দুর্নীতি, টাকা-পাচার, ভোটচুরি ইত্যাদি মানুষের মনে গেঁথে দিয়ে উজ্জীবিত করে সফলতার ভিত রচনা করে গেছেন এবং এর নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান।

সেই ভিতের উপর ভর করেই কোটাবিরোধী ছাত্র-ছাত্রী ও জনতা চব্বিশ-এর গণঅভ্যুত্থান সফল করেছে- দেশ ছেড়ে পালিয়েছে শেখ হাসিনা স্বৈরাচার। কোটাবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের প্রধান দাবি ৫% কোটা থাকবে- তা ছাত্রছাত্রীদের বহু আগেই দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান দিয়েছিলেন। আজ যে রাষ্ট্র সংস্কার এর কথা বলা হচ্ছে- এগুলোর বিষয়েও দেশ দ্বিতীয় স্বাধীনতার আগে ও পরে দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান দিয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মীরা তার নির্দেশনায় বিগত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের সময় সকল বাধা, ষড়যন্ত্র মেকাবিলা করে সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, পদযাত্রা, সেমিনার, আরোকচিত্র প্রদর্শনী, কালো ব্যাচধারণ, পতাকা মিছিল ইত্যাদি অনুষ্ঠান পালন করে দেশের জনগণে আওয়ামী শাসনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন। দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান পাশাপাশি তুলে ধরেছেন কীভাবে রাষ্ট্র মেরামত করা যায়। জনগণের অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। দেশ ও দেশের মানুষ নিয়ে দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান এর যে রূপ পরিকল্পনা- তা সমসাময়িক আন্দোলনরত সকল দল বা গোষ্ঠী বা সমাজ বা সুশীল বা ছাত্রছাত্রীদেরই চাওয়ার প্রতিফলন। এ যেনো দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান এর ভাবনা আর বাংলাদেশের চাওয়া একই প্রতিফলন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটাধিকার, বাক-স্বাধীনতাসহ অন্যান্য অধিকার কেড়ে নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের সহায়তায় জবর-দখলভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিল। বিদ্যুৎ এর চড়ামূল্য আর নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দাম বৃদ্ধিতে মানুষের যাপিত জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। অপরদিকে আওয়ামী ক্ষমাতাসীনরা টাকা পাচার করছিল। এসব বিষয়ে সাধারণ মানুষ বা নেতাকর্মীরা কিছু বললে তাদের উপর অত্যাচারের খড়গ নেমে এসেছিল। অধিকারহারা মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল। জনগণের বুকের ভেতর ছিল গুমরে গুমরে কান্না। হতাশ, দিশাহীন, স্থবির, জলজল চোখের লোকজনের সামনে সাহস, প্রজ্ঞা, মেধা, বিচক্ষণতা ও কৌশল নিয়ে এগিয়ে আসলেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান সাহেব। তার নির্দেশনায় সফল আন্দোলনের ভিত রচনা এবং সবারই সহযোগিতার সফল সমাপ্তি আজকের নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ।

দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান সাহেব এর অভিজ্ঞতা দীর্ঘদিনের। পরিবার ছিল তার দীক্ষালয়। তার বাবা ছিলেন মহান স্বাধীনতার ঘোষক, সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা (বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত), ১৯৫৪ সালের তৎকালীন সেবাহিনীর মধ্যে অনুষ্ঠিত মুষ্টিযুদ্ধে বিজয়ী, কারগিল যুদ্ধের বিজয়ী, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, সফল সেনা অফিসার, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, উন্নয়নের রূপকার, স্বনির্ভর ও আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এবং মা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীন বাংলাদেশের নারী জাগরণের পথিকৃৎ, আন্দোলন সংগ্রামের আপসহীন নেত্রী, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্রের মা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বাবা-মা কিভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করে সফল হয়েছেন তা তিনি কাছ থেকে দেখছেন। সংকট, সংগ্রাম ও সাফল্যে বাবা-মার ভূমিকা কাছ থেকে দেখছেন এবং অনুধাবনে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। বাবা-মা তথা পরিবারে সাহচার্যেই ছিল দেশনায়ক জনাব তারেক রহামন এর শিক্ষা, দীক্ষা ও অভিজ্ঞতার ভান্ডার।

শিক্ষা-দীক্ষা আর অভিজ্ঞতা নিয়েই দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান কাজ করেছেন দেশ ও দেশের মানুষের জন্য। রাজনীতিবিদ হিসেবে দেশে তারেক রহমানই প্রথম ডিজিটাল পদ্ধতির বা ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রবর্তন করেন। দেশের মৎস্য, শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, অর্থনীতির বিষয়ে তিনিই প্রথম ডাটা ব্যাংক চালু করেছিলেন। সারাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এর সমস্যা ও সম্ভাবনা চিহ্নিত করে ডাটাবেউজ তৈরি করেছিলেন। কোন এলাকায় কতজন লোক কর্মক্ষম, কতজন বেকার, কতজন সিনিয়র নাগরিক, কতজন যুবক, ওই এলাকায় কি ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া যায় ইত্যাদি বিষয়ে ছিল তার ডাটাবেইজ।

তৃণমূল জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন এবং তাদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছল করার পদ্ধতি ও কৌশল নিয়ে সারাদেশকে ২০ ভাগে ভাগ করে প্রায় ৫০ হাজার নেতাকর্মীদের সাথে ২০টি সম্মেলনের মাধ্যমে দিনব্যাপী মতবিনিময় করেছিলেন- যা রাজনীতিতে খুবই দূরদৃষ্টি। তারেক রহমান এর রাজনৈতিক দর্শন হলো- ‘একটু উদ্যোগ একটু চেষ্টা, এনে দিবে স্বচ্ছলতাণ্ডদেশে আসবে স্বনির্ভরতা।’ তারেক রহমান এর জনসংযোগ আছে। তিনি জনগণের ভাষা বোঝেন। তাই তিনি জনগণের কল্যাণে কাজ করে গেছেন এবং করেন। একটা উদাহরণে বুঝা যাবে- কৃষি সংক্রান্ত সকল ডাটা ও তথ্য যেনো একসঙ্গে পাওয়া যায় সেজন্য তিনি কৃষি তথ্যভান্ডার গড়ে তুলেছিলেন।

কৃষি তথ্য ভান্ডারের ক্ষেত্রে ৯টি মূলবিষয় তিনি ভেবেছিলেন- ১. কৃষি উপকরণ ২. সার ও কীটনাশক ৩. অঞ্চলভিত্তিক চাহিদা ৪. অঞ্চলভিত্তিক অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ৫. কৃষি পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ ৬. কৃষিপণ্যের খুচরা ও পাইকারি মূল্য ৭. কৃষি পণ্যের পরিবহন ৯. আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বা রপ্তানির সুযোগ। অসহায় ও দরিদ্র মানুষের একটি সুন্দর হাসি খুশি যাপিত জীবন উপহারের পাশাপাশি বীজ, সার ও গবাদিপশু দিয়ে সহায়তা করা ছিল তার স্বপ্ন। বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ হওয়ায় কৃষি বিষয়ে তার এমন সম্ভাবনাময় চিন্তাশক্তি। দেশ ও দেশের জনগণের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারেক রহমান এর রয়েছে স্বপ্ন। যৌতুক, জন্মনিয়ন্ত্রণ, শিক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচন, মেয়েদের সমঅধিকারে বিশ্বাসী ইত্যাদি তার ভাবনা। দেশের জনগণের আশা, স্বপ্ন, অধিকার বাস্তবায়নে পিতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম ও মাতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সরকার সফলভাবে কাজ করেছেন- তারই যেনো যোগ্য উত্তরসূরি বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান।

জাতীয়তাবাদী শক্তির কান্ডারী দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান। অতীতমুখী রাজনীতি মুছে ভবিষ্যৎমুখী উন্নয়নের রাজনীতি সামনে এগিয়ে এনেছেন। তিনি বিজ্ঞানমনস্ক বাংলাদেশি গড়ে তুলতে চেয়েছেন। দেশ ও জনগণকে সাথে নিয়ে তার এই চলার পথে ষড়যন্ত্রের কাটা বিছিয়েছিলেন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার ও তাদের আন্দোলনের ফসল ১/১১ সরকার। দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান এর পথচলা মসৃণ ছিল না। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের ফসল ১/১১ সরকার (ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন সরকার) দেশনায়ক জনাব তারেক রহমানকে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ গ্রেফতার করে। তার উপর এতই অমানবিক নির্যাতন চলোনো হয় যে, তাকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়। চিকিৎসার জন্য হুইল চেয়ারে ভর করে নিন্তেজ অবস্থায় বিদেশে পারি দেন দেশনায়ক।

দেশনায়ক এর বিরুদ্ধে ঘড়যন্ত্র তবুও থেমে থাকেনি। ১/১১ সরকারের দোসর ভোটচোর শেখ হাসিনা সরকার মিথ্যার পাহাড় সাজিয়ে একের পর এক মামলা দেন দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান এর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান দেশে যেনো না আসতে পারেন, সেজন্য প্রহসনের রায় দিয়ে তার বিরুদ্ধে সাজা প্রদান করেন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার এবং দেশের সকল মিডিয়ার তার বক্তব্য প্রচার নিষিদ্ধ করেছিলেন। এতাকিছুর পরেও দেশ ও দেশের জনগণ এবং নেতাকর্মীদের কাছ থেকে তাকে দূরে রাখতে পারেননি স্বৈরাচার ভোটচোর শেখ হাসিনা সরকার। দেশের জন্য কাজ করেছেন এবং ঘরে ঘরে মানুষের মনিকোঠায় ঠিকই ছিলেন দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান। দূর প্রবাশে থেকেও দেশ ও দেশের মানুষের অধিকার, নিরাপত্তা, সুখী-সমৃদ্ধ যাপিত জীবনের জন্য নিরলসভাবে কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান।

অন্যদিকে জনগণকে নিয়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার এতই ছিনিমিনি খেলেছেন যে, সর্বশেষ জরিপে দেশের জনসংখ্যা কম দেখিয়েছেন। সেখানে জনগণ নিয়ে দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান স্বপ্ন দেখছেন। দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান জনশক্তি বলে বাংলাদেশ পৃথিবীর একটি সুপার পাওয়ারে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন। দেশ ও দেশের জনগণ নিয়ে তার ভাবনা ও চিন্তাশক্তি উন্নততর। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে স্বৈরাচার ও আধিপত্যবাদ এর বিরুদ্ধে শক্ত দিকপাল দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান।

আজকের নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের সফল ভিতের রূপকার দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান। তারই নির্দেশনায় দলের নেতাকর্মীরা দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথে হামলা, মামলা, নিপীড়ন, গুম, কারাবরণ সয়ে চব্বিশ এর গণঅভ্যুত্থানের সফল ভিত গড়েছিল। সে ভিতের উপর ভর করেই ছাত্র-জনতা ও নেতাকর্মীরা সফল সমাপ্তি ঘটিয়েছে। ফলে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়েছে ও ভোটচোর আওয়ামী দুঃশাসক সরকারের পতন হয়েছে। তাই দেশের টেকসই আবকাঠামোগত উন্নয়ন, মানুষের ভোটাধিকার, বাক-স্বাধীনতা, নিরাপত্তাসহ আন্যান্য অধিকার যথাযথভাবে দেয়া এবং দেশ ও জনগণের কল্যাণে নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ হাত বাড়িয়ে চায় দেশনায়ক জনাব তারেক রহমানকে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত