ঢাকা ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জ্বালানিসহ নানা চ্যালেঞ্জে শিল্প খাত

অনিয়ম বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি
জ্বালানিসহ নানা চ্যালেঞ্জে শিল্প খাত

বিগত সরকারের আমল থেকেই দেশের শিল্প খাত নানা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। বিশেষ করে দুর্নীতি ও জ্বালানির অপর্যাপ্ততার কারণে এ খাত খেসারত দিতে বাধ্য হচ্ছে। গত শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রি (বিসিআই) আয়োজিত সেমিনারে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গ্যাস সংকটের কারণে শিল্পের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। ঢাকা, সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের শিল্প এলাকার বহু কারখানা এ কারণে বন্ধের উপক্রম হয়েছে। শিল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় এসব এলাকায় গ্যাস সরবরাহে বিশেষ ব্যবস্থা না নিলে এ খাতের অর্থনীতি আরো বিপর্যয়ে পড়বে। বছরে ১২ হাজার কোটি টাকার গ্যাস অপচয় হয় উল্লেখ করে, এ দুরবস্থা থেকে রক্ষা পেতে গ্যাস অপচয় ও চুরি বন্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, শিল্প খাতে চাহিদার অর্ধেকেরও কম গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। গ্যাসের অভাবে তৈরি পোশাক খাতে ৩০-৩৫, স্টিলশিল্পে ২৫-৩০ এবং সিরামিক শিল্পে ৫০ শতাংশ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সেমিনারে জ্বালানি উপদেষ্টাও সরকারি খাতে কেনাকাটায় প্রতিযোগিতার অভাব এবং জ্বালানি কেনাকাটার জন্য আগে মন্ত্রী, উপদেষ্টাদের চরিত্র বুঝতে হতো বলে মন্তব্য করেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, শিল্প খাতে গ্যাস সংযোগ নিতে গিয়ে নিজেই দেখেছেন বিগত সরকারের দুর্নীতির বড় উৎস ছিল এ জ্বালানি খাত। শিল্পের গ্যাস সংযোগ ছিল দাসখত দেয়ার মতো। বলেন, এসব লুটপাটের বোঝা এখন বইতে হচ্ছে শিল্পকে। নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, গ্যাস সংযোগ পেতে সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর বাসার সামনে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে। গ্যাস কানেকশন পাওয়া ছিল যেন ব্যাংক লাইসেন্স পাওয়ার মতো। তারপর নিজের কারখানায় গ্যাস নিতে নিজস্ব অর্থায়নে ৪০ কিলোমিটারের বেশি শুধু গ্যাসলাইনই বসাতে হয়নি, রাস্তা কাটতেও ২০ কোটি টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে। আশার কথা, এসব অনিয়ম দূর করতে অন্তর্র্বতী সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি ও বাণিজ্য উপদেষ্টা। অর্থনীতিকে এখন ক্রনি ক্যাপিটালিজম থেকে মুক্ত করার কাজ চলছে। সেমিনারে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানও জানিয়েছেন, আগে প্রতিনিয়ত ‘উপর থেকে’ যেভাবে বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহের চাপ দেওয়া হতো, সেই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে শিল্পকে প্রাধান্য দিয়ে এখন গ্যাস বণ্টন করা হচ্ছে। তিনি নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, এখন শিল্পে গ্যাস সরবরাহ যে অবস্থায় আনা হয়েছে, ২০৩০ সাল পর্যন্ত এর চেয়ে অবস্থা খারাপ হবে না। কলকারখানায় প্রয়োজনমাফিক জ্বালানি না মিললে উৎপাদন যে ব্যাহত হয়, তা বলাই বাহুল্য।

শিল্পের উৎপাদন সক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকলে এর প্রভাব মালিক-শ্রমিকের ওপর পড়ে, তেমনই চাহিদা-জোগানের সীমানা ছাড়িয়ে তা দেশের অর্থনীতির ওপরও পড়ে। এমন অবস্থায় শিল্প খাতের ভিত শক্ত করতে প্রয়োজন সব ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির মূলোৎপাটন করা। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। গ্যাসের অপচয় ও চুরি বন্ধের পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। শিল্প-কারখানায় জ্বালানির চাহিদা পূরণে প্রয়োজনে বিকল্প পথ খুঁজে বের করা। একই সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোয় জবাবদিহি নিশ্চিতে উদ্যোগী হওয়া। শিল্পরক্ষার স্বার্থেই অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত