ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে সচেতনতা জরুরি

জুবায়ের আহমেদ
প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে সচেতনতা জরুরি

প্রযুক্তির উৎকৃষ্ট ব্যবহার মানব জীবনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ার পর থেকে এর নানামুখী ব্যবহারে দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণজনক হলেও অপব্যবহারকারীর সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন। যারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে। পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া বাংলাদেশে মহামারি আকার ধারণ করেছে। গুজব বাংলাদেশে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময় থেকে থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবসহ নানা মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর ফলে নিরীহ মানুষের মৃত্যু, অপপ্রচারসহ অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সমাজে, যা এখন বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশ ও জাতির জন্য।

প্রযুক্তির সবচেয়ে জনপ্রিয় সৃষ্টি ফেইসবুক ২০০৪ সালে আত্মপ্রকাশ করলেও বাংলাদেশে স্মার্টফোন সহজলভ্য হওয়ার পর থেকেই ফেইসবুক পৌঁছে গেছে দেশব্যাপী ঘরে ঘরে। ফেইসবুক আইডি খোলার জন্য বয়সের কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় কিশোর বয়স থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত ব্যবহার করছে ফেইসবুক, দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্মের পাশাপাশি ফেইসবুক ব্যবহার এখন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত মানুষ সময় পেলেই ফেইসবুক ব্যবহার করলেও শুধু ফেইসবুকভিত্তিক বহু কর্মক্ষেত্র তৈরি হয়েছে, যেখানে বহু তরুণ-তরুণী কাজ করছেন, পাশাপাশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো ফেইসবুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিজেদের পণ্যের মার্কেটিং করছে, ক্রেতা তৈরি করছে। বাংলাদেশে এখন বহু ব্যবসা বিদ্যমান, যাদের ব্যবসা পুরোপুরিই ফেইসবুকভিত্তি। প্রযুক্তির উন্নতি ও সহজলভ্যতার কারণেই লাখ লাখ যুবকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। সরকারও আন্তরিক হয়ে প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। এছাড়া কৃষি কাজে প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে কৃষকদের কষ্ট লাঘব হচ্ছে। দিনের পর দিন যেসব কাজে পরিশ্রম করতে হতো, তা এখন সহজেই সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে। সর্বক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে কর্মঘণ্টা বাঁচছে। যার মাধ্যমে অন্য কাজে সময় ব্যয় কিংবা আরও বেশি কাজ করা সম্ভব হচ্ছে।

বাংলাদেশের মানুষ বর্তমানে ফেইসবুক ও ইউটিউবেই আসক্ত বেশি এবং অপব্যবহারও হচ্ছে ফেসবুক ও ইউটিউবেরই। ফেসবুকের মাধ্যমে পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রাখা, নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখা, সর্বোপরি নিজ নিজ কাজের বাইরে আনন্দঘন মুহূর্ত কাটানো হলেও বাংলাদেশে ফেইসবুক এখন মৌলিখ অধিকারগুলোর মতো হয়ে গেছে। ফেইসবুকভিত্তিক কাজকর্ম ছাড়াও, খেলাধুলা, রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্মনীতিসহ এমন কোনো বিষয় নেই যার চর্চা হয় না ফেসবুকে। ফেইসবুক দিয়ে বহু ইতিবাচক কর্মকা- পরিচালনা করা গেলেও অসাধু ব্যক্তিরা ফেইসবুককেও নিজেদের স্বার্থ হাসিলের মাধ্যম বানিয়েছে। ফেইসবুক, ইউটিউব, ইমু, লাইকি, টিকটকসহ প্রযুক্তির জনপ্রিয় সব সৃষ্টির মাধ্যমে ভালোর বিপরীতে মন্দ কাজের সংখ্যা বাড়ছে।

প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ার আগের মানুষ গুজব ছড়ালেও তা শুধু একটি এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকত; কিন্তু ফেইসবুক, ইউটিউবের কল্যাণে এখন তা সহজেই ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী, যার মাধ্যমে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়, জাতির স্বার্থ জড়িত বিষয়গুলোতে দেশব্যাপী জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়। এছাড়া ফেইসবুক, ইউটিউব, ইমু, লাইকি, টিকটক, বিভিন্ন গেমসসহ জনপ্রিয় অ্যাপসগুলোতে আসক্তির কারণে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়া এবং বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের শারীরিক মানসিক ও মেধা বিকাশে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। ভুল কাজে প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে যাওয়ার ফলে নাগরিকদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে ধর্মীয় কিংবা সামাজিক সম্প্রীতি। অথচ প্রযুক্তির জনপ্রিয় সৃষ্টিগুলোর সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে দেশ ও জাতির প্রভূত উন্নতি ঘটবে। কাজেই নিজ নিজ জায়গা থেকে সুনাগরিকের পরিচয় দিয়ে প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করতে হবে। প্রযুক্তি ভালো কাজে ব্যবহারের মাধ্যমে নিজ ও দেশের কল্যাণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

ষ শিক্ষার্থী

ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম

বিজেম, কাঁটাবন, ঢাকা

[email protected]

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত