নাশকতার চেষ্টা অব্যাহত তদন্তের মাধ্যমে উদ্ঘাটন জরুরি

প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

গত রোববার রাত ১১টার দিকে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর রেলস্টেশনের কাছে রেললাইনে লোহার শিকল প্যাঁচিয়ে তালা দিয়ে নাশকতার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। এতে বোঝা যাচ্ছে, অপশক্তি এখনও নাশকতার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। রেলের নাশকতা একটি গুরুতর অপরাধ। এটি জাতীয় নিরাপত্তা, জননিরাপত্তা ও আর্থিক নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে রেলপথে নাশকতার ঘটনা মাঝেমধ্যে দেখা যায়, যা রাজনৈতিক বিরোধ, সন্ত্রাসবাদ বা সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঘটানো হয়। নাটোরের ঘটনাটি কারা কী উদ্দেশ্যে ঘটিয়েছে, তদন্তের মাধ্যমে তা উদ্ঘাটন করা জরুরি।

বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রীসেবার মান বহুদিন ধরেই প্রশ্নবিদ্ধ। রেলের যাত্রীদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টিও বহুল আলোচিত। রেলে ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই, ছাদ থেকে ফেলে হত্যা- এসব ঘটনাও নতুন নয়। এ ধরনের ঘটনা ঘটছে অহরহ। প্রতিবছর রেলপথে গড়ে কয়েকশ লাশ পাওয়া যায়। এ সবকিছু মিলে আবারও রেলের নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে এলো। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর স্টেশনের দক্ষিণপাশে এক পথচারী পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রেললাইনে শিকল প্যাঁচিয়ে নতুন একটি তালা লাগানো অবস্থায় দেখতে পান। তৎক্ষণাৎ বিষয়টি তিনি স্থানীয় লোকজনকে জানান। খবর পেয়ে নলডাঙ্গা থানা পুলিশ ও স্টেশনমাস্টার ঘটনাস্থলে যান। পরে মিস্ত্রির সাহায্যে তালাসহ শিকল কেটে তা অপসারণ করেন। এ ঘটনায় শিকলসহ তালা অপসারণ না করা পর্যন্ত কয়েকটি ট্রেনের স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। বর্তমানে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। ট্রেনে যাত্রীদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্তসংখ্যক সদস্য থাকা উচিত। রেলপথে নিয়মিত পুলিশ ও র‌্যাবের টহল বাড়ানো, সিসিটিভি স্থাপন, গোয়েন্দা নজরদারি থাকা দরকার। স্থানীয় বাসিন্দারা সন্দেহজনক কিছু দেখলে তৎক্ষণাৎ রিপোর্ট করার ব্যবস্থা থাকা জরুরি। রেল ট্র্যাক মনিটরিংয়ের জন্য ড্রোন, সেন্সর ও অ্যালার্ট সিস্টেম চালু করা উচিত। নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে তাদের দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। রেলের নাশকতা রোধে সাধারণ মানুষকেও সোচ্চার হতে হবে। রেল বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ গণপরিবহণ ব্যবস্থা। একে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব সরকারের পাশাপাশি প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের। বর্তমানে যারা রেলের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন, তাদের দক্ষতা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। কাজেই রেলে জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন নিয়োগকৃতরা যাতে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে শতভাগ পেশাদারির পরিচয় দিতে সক্ষম হন, সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। রেলে একের পর এক বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হলেও বস্তুত পুরো রেলপথই ঝুঁকিতে রয়েছে। অর্থনৈতিক প্রয়োজনেই মানুষকে প্রতিনিয়ত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছোটাছুটি করতে হয়। অথচ সড়ক বা রেল কোনো যাত্রায়ই মানুষের জীবন এখন আর নিরাপদ নয়। এ পরিস্থিতির অবসান ঘটানো জরুরি। নিরীহ মানুষ যাতে সহিংসতা ও নাশকতার শিকার না হন- কর্তৃপক্ষকে তা নিশ্চিত করতে হবে। যেভাবেই হোক, নাশকতাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।