সমাধান, নাকি নতুন সংকট ঢাবিতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ

প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশে, বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ছাত্ররাজনীতি বিভিন্ন সময়ে বিতর্কের মুখে পড়েছে, যদিও আমাদের দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ছাত্ররাজনীতির বলিষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে এবং জাতীয় নেতৃত্বের অনেকেই এর ভেতর দিয়ে উঠে এসেছেন। সম্প্রতি ঢাবির আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এর ফলে সৃষ্ট জটিলতা। এক বছর আগে পতিত সরকারের আমলে নেওয়া এই সিদ্ধান্তকে প্রশাসন বহাল রেখেছে।

ফলে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। বিশেষ করে ছাত্রদল ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর মতো সংগঠনগুলোর প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায়, এই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা এবং রাজনৈতিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে। ছাত্রদল বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রশাসনের এখতিয়ার নেই শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক অধিকার হরণ করার। বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীও একই সুরে বলেছে, কোনো ব্যক্তি একক সিদ্ধান্তে রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারেন না।

এই প্রতিক্রিয়াগুলো ইঙ্গিত দেয় যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইনি ও বিধিগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। তবে এর চেয়েও বড় প্রশ্ন হলো, প্রকাশ্য ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে কি সত্যি ক্যাম্পাসকে রাজনীতিমুক্ত করা সম্ভব? অভিজ্ঞতা বলছে, রাজনৈতিক সক্রিয়তা সম্পূর্ণভাবে দমন করলে তা প্রায়ই গোপনে, নিয়ন্ত্রণহীন ও প্রভাবহীন উপায়ে বেড়ে ওঠে। তাই ‘নিষিদ্ধ’ শব্দটি ব্যবহারের আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ভাবতে হবে, তারা সমস্যার সমাধান করছে, নাকি সমস্যাকে আড়ালে ঠেলে দিচ্ছে। এরই মধ্যে এ ধরনের কিছু অভিযোগ উঠেছে একটি ছাত্রসংগঠনের বিরুদ্ধে। বলা হচ্ছে, ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ ব্যানারে তারা দলীয় কর্মকাণ্ড ও রিক্রুটমেন্ট চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আত্মত্যাগ আজও জাতির স্মৃতিতে উজ্জ্বল। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রদের ছিল গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। ১৯৯০ সালে স্বৈরশাসক এরশাদ পতনের আন্দোলনেও ক্যাম্পাসগুলো ছিল প্রধান শক্তিকেন্দ্র। সর্বশেষ ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাই ছিলেন প্রথম সারির সাহসী কণ্ঠস্বর। ক্যাম্পাসে সহিংসতা, দখলদারি ও শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়া অবশ্যই সমাধানের দাবি রাখে। তবে এর সমাধান হতে হবে স্বচ্ছ নিয়ম, গাইডলাইন ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর মাধ্যমে, যেখানে রাজনীতি করার অধিকারও রক্ষা পাবে।

তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত হবে ছাত্ররাজনীতিকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার পরিবর্তে এটিকে একটি নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসা। একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বৈধ রাজনীতির সুযোগ দিতে হবে, যা তাদের রাজনৈতিক সচেতনতাকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে এবং ক্যাম্পাসে এক সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনবে।