অর্থনীতি গভীর সংকটে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর
প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর অতিবাহিত হলেও সাফল্যের ঘাটতি এখন সর্বত্রই আলোচিত হচ্ছে। অর্থনৈতিক খাতে কিছু সফলতার দাবি থাকলেও সার্বিক অর্থনীতির চিত্র মিশ্র বার্তা দিচ্ছে। একদিকে ব্যাংক খাত সংস্কার, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উন্নতি এবং বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঠেকানো- এগুলো নিঃসন্দেহে ইতিবাচক অর্জন। অন্যদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে স্থবিরতা, কর রাজস্ব আহরণে দুর্বলতা এবং জ্বালানি সংকট এখনও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা একমত যে, সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা করা গেলেও মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় তেমন স্বস্তি আসেনি।
প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত সংলাপে বিশেষজ্ঞরাও এ বিষয়ে একমত যে অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, বড় ধরনের বিপর্যয় ঠেকিয়ে রিজার্ভ ভালো অবস্থায় নিয়ে আসার সাফল্য থাকার পরও দেশের অর্থনীতিতে গভীর সংকট রয়ে গেছে। তিনি বলেছেন, ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে। বিনিয়োগ না হওয়ায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না, যা শ্রমবাজারকে বিপর্যস্ত করছে।’ বিজিএমইএ এবং বিটিএমএর মতো শিল্প সংগঠনের নেতাদের বক্তব্যেও এই সংকটের গভীরতা স্পষ্ট। তাদের মতে, করহার বৃদ্ধি এবং গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, যা শিল্পোৎপাদন এবং কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
মনে রাখতে হবে, মূল্যস্ফীতি এখনও ৮ শতাংশের ওপরে, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় সরাসরি চাপ সৃষ্টি করছে। এ ক্ষেত্রে আমরা মনে করি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর যথার্থই বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চিত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া এখনই কেউ বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন এমন প্রত্যাশা পুরোপুরি কাল্পনিক।’ তার এই বক্তব্য বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণটি চিহ্নিত করে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রত্যাশা তৈরি হলেও এখনও রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনিশ্চিত। এই অনিশ্চয়তা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করেছে।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বক্তব্যও এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে সমর্থন করে। তিনি বলেছেন, বিপ্লবের পর দ্রুত গণতন্ত্রে ফেরা দেশগুলোই উন্নতি করেছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য জরুরিভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, সরকারকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে দ্রুত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের পথে যেতে হবে। দ্বিতীয়ত, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে এবং দরিদ্র মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি জোরদার করতে হবে। তৃতীয়ত, শিল্প খাতকে সুরক্ষা দিতে করহার ও গ্যাস-বিদ্যুৎ ট্যারিফের মতো বিষয়গুলোতে একটি দীর্ঘমেয়াদি ও স্থিতিশীল নীতি গ্রহণ করা জরুরি। অন্যথায় সামষ্টিক সূচক ভালো দেখালেও মানুষের জীবনে দুর্ভোগ কমবে না।
