সড়কগুলোতে এখনই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হওয়া উচিত
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বছরের পর বছর, সড়ক দুর্ঘটনায় দেশজুড়ে অগণিত মানুষের প্রাণহানির পরও আশ্চর্যজনকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বপ্রাপ্তরা এই সংকট মোকাবিলায় উদাসীনতা ও অকার্যকারিতার ধারা অব্যাহত রেখে চলেছেন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের (আরএসএফ) কাছ থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শুধু জুন মাসেই সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৯৬ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। অর্থাৎ, গত মাসে গড়ে প্রতিদিন ২৩ জন করে মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মে ও এপ্রিলে সড়ক দুর্ঘটনায় যথাক্রমে ৬১৪ জন ও ৫৮৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে। ঈদুল আজহার লম্বা ছুটির কারণে জুনে দুর্ঘটনা ও নিহতের সংখ্যা বেশি হয়ে থাকতে পারে। সার্বিকভাবে এসব তথ্য থেকে এই দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা অব্যাহত থাকার বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। অর্থাৎ, ঈদের মৌসুমে বাড়িতে যাওয়ার ধুম পড়লেও নিহতের সংখ্যা এতটা বেড়ে যাওয়ার পেছনে এটাই একমাত্র কারণ নয়।
এ ধরনের নেতিবাচক পরিসংখ্যান নিয়মিতই আমাদের সামনে আসে এবং আরও অনেক আগে সমস্যাটির টেকসই সমাধান খুঁজে বের করে কার্যকর উদ্যোগ নিতে অনুপ্রাণিত করার কথা ছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন আমরা অনুপ্রাণিত হইনি বা উদ্যোগ নেইনি? জুনের পরিসংখ্যান আরও ভালো করে লক্ষ্য করলে অনুধাবন করা যায় সমস্যাটি কতটা ভয়ঙ্কর ও বহুমুখী হয়ে উঠেছে। যত দিন যাচ্ছে, ততই সড়কে মোটরসাইকেলের চলাচল নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে হচ্ছে। জুন মাসে মোট দুর্ঘটনার ৩৭ শতাংশেরও বেশি মোটরসাইকেলের কারণে ঘটেছে। পাশাপাশি, নিহতের ৩৩ শতাংশের জন্যও দায়ী এই বাহন। এছাড়া, নিহতের মধ্যে ১৭ শতাংশ পথচারী এবং চালক ও সহকারী মিলিয়ে ছিলেন আরও ১৫ শতাংশ মানুষ। বেশিরভাগ দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে আরএসএফ বেপরোয়া গতিবেগকে চিহ্নিত করেছে। অন্যান্য কারণের মধ্যে আছে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, সড়কের ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণশৈলী ও অপ্রতুল রক্ষণাবেক্ষণ, অদক্ষ ও বাড়তি কাজ করে ক্লান্ত থাকা চালক, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা। এসব নেতিবাচক বিষয়ের সমন্বয়ে সড়কগুলোতে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং শিগগির এ বিষয়টি সমাধানের সুষ্ঠু উদ্যোগ না নেওয়া হলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। জাতিসংঘের সুপারিশ পাওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভিত্তিতে একটি নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইনের খসড়া তৈরির উদ্যোগ চলমান রয়েছে, যা একটি ইতিবাচক সরকারি উদ্যোগ। জানা গেছে, একটি প্রাথমিক খসড়া এরইমধ্যে তৈরি হয়েছে এবং এর যাচাই-বাছাই চলছে। পাঁচটি মূল ভিত্তির ওপর এই আইন তৈরি করা হচ্ছে। এগুলো হলো নিরাপদ মানুষ, নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ গতিবেগ ও দুর্ঘটনা পরবর্তী যত্ন নিশ্চিত করা। বর্তমানে প্রচলিত ও ২০১৮ সালে প্রণীত সড়ক পরিবহণ আইন যেসব সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে, তা এই খসড়া আইনে পূরণ হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
