খাদ্যের প্রলোভন দেখিয়ে মানুষ শিকার
মো. রুহুল আমীন খান
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
দুনিয়াটা কতো কঠিন, পরিস্থিতি কতো ভয়াবহ তা হারে হারে টের পাচ্ছে গাজাবাসী। নিজেদের জন্মভূমিতে তারা উদ্বাস্তু। দুনিয়াতে তাদের জীবনের কোনো মূল্য নেই। প্রতিদিন সেখানে প্রাণ হারাচ্ছে শত শত মানুষ। মৃত্যু, অঙ্গহানি এখন তাদের কাছে স্বাভাবিকবিষয়ে পরিণত হয়েছে। ক্ষুধা নিবারণের জন্য খাদ্যই এখন তাদের জীবনের প্রধান চাওয়া। খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে তাদের জীবনে ঘটছে বিভীষিকাময় করুণ কাহিনি। সুস্থ-স্বাভাবিক যে কারও মনে তা গভীর বেদনা সৃষ্টি করে।
শিশু আমিরের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে এমনি একটি মর্মান্তিক ঘটনার মধ্য দিয়ে। শিশু আমিরের বয়স ছিল ১০ বছর। সামান্য একটু খাবার পাওয়ার আশায় ১২ কিলোমিটারের পথ খালি পায়ে হেঁটে ত্রাণ কেন্দ্রে এসেছিল সে। ত্রাণ কেন্দ্রটি ছিল ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুখ্যাত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)। সেখানে পৌঁছানোর পর সামান্য কিছু খাবার ও উচ্ছিষ্ট পায় সে। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ অ্যান্টনি আগুইলার নামের এক কর্মকর্তাকে চুমু দিয়ে ইংরেজিতে ধন্যবাদ জানায়। এরপর জিনিসগুলো নিয়ে সে তার দলের কাছে ফিরে যায়। তার পরপরই ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে উপস্থিত থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালাতে থাকে। তার পায়ের কাছে ও আকাশের দিকে তাঁক করে গুলি চালানো হয়। শিশু আমির ভয়ে দৌড় দেয়। ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে মানুষরা গুলিবিদ্ধ হয়ে একে একে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে থাকেন। আমির ছিল তাদেরই একজন। খাদ্যের জন্য আসা নিষ্পাপ শিশুদের এভাবে হত্যা করার মাধ্যমে বীরত্বের নয়; বরং কাপুরুষত্ব ও পশুত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আমাদের দেশে পুকুরে চারা পেলে, বড়শিতে টোপ দিয়ে খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে মাছ শিকার করা হয়। আর যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাতে খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে এভাবেই সাধারণ মানুষকে শিকার করা হচ্ছে। আর ইসরায়েলকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে তথাকথিত শান্তির বার্তাবাহক পশ্চিমা সভ্য দেশের নেতারা। তা আর যাই হোক, খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষ হত্যা করা কখনও বিবেকবোধ সম্পন্ন মানুষের কাজ হতে পারে না।
লেখক : প্রভাষক, ভাওয়াল মির্জাপুর কলেজ, গাজীপুর সদর, গাজীপুর।
