অর্থ পাচারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের বিকল্প নেই
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যাংক খাতে যে নজিরবিহীন অর্থ পাচার ও ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে, তা কারও অজানা নয়। এসব অপকর্মের বেশির ভাগই সংঘটিত হয়েছে ঋণপত্র বা এলসির মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে গত শনিবার প্রকাশ- পণ্য আমদানির নামে এলসি খুলে কথিত পণ্য দেশে না আনা এবং কম পরিমাণে পণ্য আমদানি করে এর চেয়ে বেশি অর্থ পরিশোধ করে দেশ থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার করে এস আলম গ্রুপ। এরপরই রয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপ। নাসা গ্রুপের পাচারের টাকাও কম নয়। এছাড়া রপ্তানির আড়ালে বিসমিল্লাহ ও ক্রিসেন্ট গ্রুপের টাকা পাচারের প্রমাণও মিলেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিগত সরকারের সময়ে এরা দেশ থেকে প্রায় ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার পাচার করেছে। এর মধ্যে আমদানি ও রপ্তানির আড়ালে ৭৫ শতাংশ অর্থ পাচার হলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭ হাজার ৫৫০ কোটি ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ২২ লাখ কোটি টাকা। স্বাভাবিকভাবেই এসব ঘটনা দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে দুর্বল করে দিয়েছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করেছে।
অর্থ পাচারের প্রক্রিয়াগুলো অত্যন্ত জটিল সন্দেহ নেই। এর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংকার ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা জড়িত না থাকলে যে অপকর্মগুলো সংঘটিত হতো না, তা বলাই বাহুল্য। দেখা যাচ্ছে, অস্তিত্বহীন কোম্পানি, প্রকল্পের খরচ বাড়িয়ে দেখানো, ভুয়া তথ্য উপস্থাপন এবং জামানতের মূল্য বেশি দেখিয়ে জালিয়াতিগুলো করা হয়েছে। পরিতাপের বিষয়, এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
ব্যাংক খাতে এ ধরনের অনিয়মের কারণে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে, যা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি। একই সঙ্গে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং পাচারকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করাও প্রয়োজন। বর্তমান সরকার পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বটে, তবে এর ফলাফল এখনও দৃশ্যমান নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাচারকারীদের আদালতের মাধ্যমে শাস্তি না হলে এ টাকা ফিরিয়ে আনা কখনোই সম্ভব নয়।
অর্থ পাচার রোধ করতে হলে তাই সর্বাগ্রে ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব কমাতে হবে এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংকারদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা। একই সঙ্গে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতাও বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। আমরা মনে করি, ভবিষ্যতে এমন অপকর্ম ঠেকাতে এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করার বিকল্প নেই। একই সঙ্গে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অপরাধ করার সাহস না পায়। এছাড়া আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বাড়িয়ে অর্থ পাচার রোধের ব্যবস্থাও নিতে হবে। সরকার এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
