দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নেপথ্যে কী
মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আমাদের দেশের প্রধান কয়েকটি সমস্যার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনে বয়ে আনছে অমানিশার ঘোর অন্ধকার।
বাংলাদের অর্থনীতিতে ব্যাপক হারে দুর্নীতি ও লুটপাট শুরু হয় ২০১৪ সালের অবৈধ ও একতরফা নির্বাচনের পর। একই সঙ্গে শুরু হয় সরকার ও ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে অবৈধ সিন্ডিকেট। সিন্ডকেটের কারসাজি, অর্থনৈতিক দূরবস্থা, বাণিজ্য ভারসাম্য এবং দুর্নীতিবাজ কর্তৃক অব্যহতভাবে টাকা পাচার করার দরুন অর্থনৈতিকব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়ে যায়। ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতায় SWIFT কোড হ্যাকিং করে ৮ কৌটি ১০ লক্ষ ডলার রিজার্ভ বিদেশে পাচার করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বিদেশে পাচার হওয়ায় রিজার্ভের পরিমাণ হ্রাস পায়। দেশে ক্রমাগত রিজার্ভের পতন শুরু হওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্য ডলার সংকট দেখা দেয়। সর্বোপরি, রিজার্ভে ভাটা ও ডলার সংকটের কারণে আমদানি সংকোচন করা হয়। আমদানি সংকোচিত হলে বাজারে পণ্য মূল্য বেড়ে যায়। পণ্যদ্রব্য আমদানির আড়ালে প্রতিনিয়ত আন্ডার ইনভয়েস ও ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে বর বড় ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, আমলা, এমপি, মন্ত্রী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বিদেশে মাত্রাতিরিক্ত টাকা ও ডলার পাচার করলে সংকটের মাত্রা আরও তীব্র আকার ধারন করে। যার ফলে ব্যাংক ও একচেঞ্জ হাউসগুলোতে ডলার সংকট দেখা দেয়। ফলশ্রুতিতে ডলারের দাম বৃদ্ধি পায় এবং টাকার মূল্য কমে যায়। বিগত সরকারের যোগসাজশে ঋণের নামে অবাধে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করা হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকট, টাকার সংকট আরও তীব্র আকার ধারন করলে দেশের ব্যাংকগুলোকে আমদানি রপ্তানির দায় মেটাতে হিমশিম খেতে হয়। ক্রমাগত ডলারের দাম বৃদ্ধি ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের অবিরত কারসাজির ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়।
প্রতিদিন বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দাম বাড়তে থাকে। তার উপর জ্বালানি চাহিদা মেটানোর জন্য সরকারকে তৈল ও গ্যাস আমদানি করতে প্রচুর টাকা ব্যয় করতে হয়। জ্বালানির দাম বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত কলকারখানার উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং পরিবহনে খরচ বৃদ্ধি পায়। যার ফলে আরেক দফা বেড়ে যায় নিত্যপণ্য জিনিসপত্রের দাম। সরকার রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করতে বারবার গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ায়। গ্যাস বিদ্যুতের অতিরিক্ত দাম বাড়ানোর কারণে কলকারখানার খরচ বৃদ্ধি পায় এবং বহুসংখ্যক শিল্প কলকারখানা উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির চাপ নিতে না পেরে বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় দুর্নীতি, লুটপাট বাংলাদেশের ইতিহাসে সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়। সীমাহীন দুর্নীতি ও বিদেশে টাকা পাচারের কারণে দেশের মধ্য অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়। দেশের এই অর্থনৈতিক দূরবস্থার ফলে সরকারকে বাধ্য হয়ে বিদেশি ঋণ নিতে হয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ১৮ লক্ষ কোটি টাকা জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যায়।
অবৈধ সিন্ডিকেট : দেশে পণ্যমূল্য, বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য সিন্ডিকেট এবং ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফা লাভ অবশ্যই দায়ী। বাংলাদেশে সিন্ডিকেট নেই কোথায়, প্রত্যেকটা সেক্টরে অবৈধ সিন্ডিকেট। দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি সাধারণ জনগণ। বাজার সিন্ডিকেটে জড়িতরা আগের মতোই সক্রিয়। দেশে কারেন্ট জালের মতো ছড়িয়ে থাকা অসাধু সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। বরং সর্বত্রই সিন্ডিকেট সক্রিয়। নিত্যপণ্যের বাজার, পরিবহন সেক্টর, প্রশাসনে ওই চক্রের কোনো হেরফের হয়নি। শুধু হাতবদল হয়ে ওসব সিন্ডিকেট দিব্যি কার্যক্রম চালাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। সিন্ডিকেটের সক্রিয়তা বিষয়টি বর্তমান সরকারের উপদেষ্টারাও স্বীকার করেছেন। সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়েও সুফল পাওয়া যায়নি। পতিত সরকারের সময়ে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী ছাড়া অন্য কেউ নিত্যপণ্য আমদানি করতে পারত না। সরকারের আস্তাবাজন বড় বড় শিল্পপতিরা যারা সরকারকে ফায়দা দিতে পেরেছে, সেই ব্যবসায়ীরাই শুধু বিদেশ থেকে নিত্যদ্রব্য পণ্যসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি আমদানি করতে পেরেছে। বড় বড় ব্যবসায়ী শিল্পপতিরা সরকারের সঙ্গে যোগসাজশে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়েছে। বিগত সরকারের সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলো যেমন: চিনি, তৈল, মসলা, দুধ, বিদেশি ফল, স্যার, ওষুধ, প্রসাধনী, যন্ত্রপাতি প্রভৃতি সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী ব্যতীত অন্য কেউ বিদেশ থেকে আমদানি করতে পারেনি। শুধুমাত্র সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা যারা সরকারকে টাকা ও ভাতা দেয় তারাই বিদেশ থেকে পণ্যদ্রব্য আমদানি করতে পেরেছে। এতে ধনী শিল্পপতিরা আরও পয়সাওয়ালা হয়েছে। আর মধ্যবিত্ত ও ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে না পেরে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।
প্রত্যেক নিত্যপণ্য দাম বৃদ্ধির জন্য পতিত সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী ব্যবসায়ীরা যোগসাজশ ছিল। যেটা তৎকালীন সরকারের প্রতি মন্ত্রী কামাল আহমদ মজুমদার অকপটে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, সরকারের ভেতর একটা সিন্ডিকেট আছে। যদি সরকারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দাম কমানোর চিন্তা থাকত, তাহলে সরকার নতুন ব্যবসায়ীর হাতে হাতে লাইসেন্স দিয়ে আমদানি করার সুযোগ করে দিত। দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি চট্টগ্রাম বন্দর। দেশের ৮০ ভাগ আমদানি রপ্তানি পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। পতিত সরকারের ৭ জন মাফিয়ার নিয়ন্ত্রণে ছিল চট্টগ্রাম বন্দর। টানা ১৭ বছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার উঠানামানোর ব্যবসা ৭ প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে। বন্দরে পণ্য হ্যান্ডেলিংয়ে জড়িত সিন্ডিকেটররা পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে অতিরিক্ত অপারেশন চার্জ আরোপ করত। অতিরিক্ত চার্জ আরোপ করার ফলে পণ্যদ্রব্যের দাম আরও কয়েক দফা বেড়ে যায়।
মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য : আমাদের দেশের জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১০ শতাংশের বেশি। কৃষি পণ্য উৎপাদনের পরের ধাপ বাজারজাতকরণ। আর এই জায়গায় ওঁতপেতে বসে থাকে মধ্যস্বত্বভোগীরা। আমাদের দেশে সাধারণত ফড়িয়া, আড়তদাররাই এই মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণি। নামমাত্র মূল্যে কৃষিপণ্য কিনে দ্বিগুণ বা তিনগুণ দামে বিক্রি করার মতো জঘন্য কাজই তাদের পেশা! পণ্যমূল্য অত্যধিক বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য দায়ী অসাধু ও অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা তথা মধ্যস্বত্বভোগীরা। তারাই পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়ে লাভের সিংহভাগ গ্রাস করছে। তাতে পণ্য উৎপাদনকারীরা যেমন চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভোক্তারা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অভিমত, কৃষিপণ্যের মুনাফার ৮০% ভোগ করে মধ্যস্বত্বভোগীরা। অথচ অতিরিক্ত মুনাফার বিরুদ্ধে, মজুদদারির বিরুদ্ধে, নকল ও ভেজালের বিরুদ্ধে বহু আইন আছে এবং তা বাস্তবায়ন করার জন্য সরকার বাস্তবমুখী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। মূলত সিন্ডিকেট ও মধ্যস্বত্বভোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েও ইতিবাচক ফল মিলছে না। পণ্য উৎপাদনকারী ও ভোক্তার মধ্যে যদি সরাসরি সংযোগ ঘটানো যেত, তাহলে, উৎপাদক ও ভোক্তারা মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য থেকে রক্ষা পেত।
ভ্যাট, কর ও আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি : বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অত্যাধিক হারে ভ্যাট, ট্যাক্স ও আবগরি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। কোনো ঘোষণা ছাড়াই সরকার তৈল, চিনি, মসলা, দুধ, বিদেশি ফল, প্রসাধনী, ওষুধ, যন্ত্রপাতি ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের উপর ব্যাপক হারে ভ্যাট, ট্যাক্স, শুল্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের পকেট খালি করা হয়েছে। যার ফলে জনগণ প্রতিদিন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষ কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। পতিত সরকার এমন সব দ্রব্যের উপর অতিরিক্ত কর আরোপ করেছে যে সমস্ত দ্রব্যগুলো ক্রয় না করে মানুষ জীবন নির্বাহ করতে পারে না। কোনো ঘোষণা ছাড়াই অযোক্তিক হারে বাড়িয়েছে। যার ফল ভোগ করছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত সাধারণ জনগণ। অতিরিক্ত ভ্যাট, ট্যাক্স ও শুল্ক বৃদ্ধির কারণে জিনিষপত্রের দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেছে এবং যার ফলাফল এখনও বিদ্যমান। অতিরিক্ত দ্রব্যমূল্যের কারণে জিনিষপত্রের দাম জনগণের নাগালের বাইরে চলে গেছে। অন্য কোনো সরকারের আমলে এত বেশি ভ্যাট, ট্যাক্স, শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়নি।
অন্যদিকে সরকার নিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা যখন তখন বিভিন্ন অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে জনগণকে দুইমুখী দাম বাড়ানোর চাপ সইতে হচ্ছে। এই ধরুন চিনির দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ হচ্ছে আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি ও ব্যবসায়ী-মন্ত্রী সিন্ডিকেট। প্রতি কেজি চিনিতে ৩১ টাকা সরকারকে ভ্যাট, ট্যাক্স, শুল্ক, বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে। অথচ চিনি তিন বছর আগে ও চিনি বিক্রি করা হত ৬৫ টাকা কেজি। রাশিয়া ইউক্রেনযুদ্ধের অজুহাতে সরকার ভ্যাট ও শুল্ক বাড়িয়ে দিলে চিনির দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। তার উপর আবার সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা সরকারের সঙ্গে কারসাজি করে কয়েকদফা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
সুতরাং সরকার যদি অতিরিক্ত ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক হ্রাস করে এবং অবৈধ সিন্ডিকেট ভেঙে দেয় তাহলে চিনির অতিরিক্ত দাম কমে যাবে। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে (৩১-০৮-২৫) সিন্ডিকেট ভেঙে যাওয়ার দরুন চিনির দাম কমতে কমতে ১০৫ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে ও করবৃদ্ধি এবং সিন্ডিকেটের কারসাজি জড়িত। প্রতি লিটার সয়াবিনের ক্রয়মূল্য ৯৫ টাকা বাদ দিলে বাকি টাকা কর ও সিন্ডিকেটের পকেটে চলে যায়। ১ লিটার ডিজেলের ক্রয়মূল্য ৫১ টাকা। সরকার ২০২৩ সালে জ্বালানি তেলের উপর ৪৫ শতাংশ কর আরোপ করলে একলাপে দাম বেড়ে ১০৮ টাকা হয়ে যায়। একসঙ্গে ৪৫ শতাংশ কর আরোপ বিশ্ব ইতিহাসে বিরল ঘটনা। অভ্যহত দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে রাষ্ট্রীয় কোষাগার খালি হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে বিগত সরকার তৈল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় এবং অতিরিক্ত কর শুল্ক আরোপ করে।
বিগত সরকারের সময়ে মন্ত্রী-ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ব্যতীত অন্য কেউ চিনি, তৈল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করতে পারত না। এই সিন্ডিকেটের ভাগ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নেতা, এমপি ও মন্ত্রীদের হাতে চলে যেত। অন্যদিকে সরকারি প্রশাসনগুলো জনগণকে দেখানোর জন্য (আই ওয়াশ) মাঝেমধ্যে অসাধু অতিরিক্ত মুনাফালোভী ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান পরিচালনা করে ঘুটি কয়েকজন চুনোপুঁটিকে শাস্তি প্রধান করলে ও বড় বড় ব্যবসায়ী যারা সরকারের সঙ্গে যোগসাজসে পণ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধি করে তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সরষের মধ্য ভূত থাকলে তাড়াবে কে।
পরিবহনে ব্যাপক চাঁদাবাজি : পণ্যমূল্য লাগামহীন বৃদ্ধিতে সর্বাধিক দায়ী হচ্ছে ব্যাপক চাঁদাবাজি। সব পণ্যের কেনা-বেচার শুরু থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছতে প্রতিটি ধাপেই চলছে ব্যাপক চাঁদাবাজি, যা নতুন বিষয় নয়, বহুদিন যাবত চলছে। এই চাঁদার টাকা ব্যবসায়ীরা ঘর থেকে এনে দেয় না, পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে তা কভার করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পণ্যের মূল্য বেড়ে যায়। দেশে পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে- কাঁচামাল পরিবহনে জায়গায় জায়গায় চাঁদাবাজি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজশাহী থেকে এক ট্রাক সবজি নিয়ে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ আসতে পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাকে ১০ থেকে ১৩ জায়গায় চাঁদা প্রদান করতে হয়। এতে করে যে সবজি ১০ টাকা দিয়ে ক্রয় করা হয় চাঁদাবাজির কারণে সেই একই সবজির প্রতিকেজি দাম হয়ে যায় ২০ টাকা। জ্বালানি দাম বৃদ্ধির কারণে পূর্বের ১২ হাজার টাকার ট্রাক বাড়া বর্তমানে ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়। এর পর আছে ফড়িয়া তথা মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য। সবকিছু মিলিয়ে হিসাব করলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে প্রতি ১ কেজি সবজির মূল্য ৫০ থেকে ৬০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। পরিবহন সেক্টরে আগের মতোই নৈরাজ্য-চাঁদাবাজি চলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাঁদাবাজির হাতবদল হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি আগের থেকেও বেশি হচ্ছে। চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করাও যাবে না। চাঁদাবাজির ফলে নিত্যপণ্যের দাম কমছে না। ভোক্তা অধিদপ্তরের সঙ্গে সরকারের অন্যান্য সংস্থা একসঙ্গে কাজ করলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। চাঁদাবাজির হাতবদল হওয়ায় সিন্ডিকেট চক্র আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও পথে পথে চাঁদাবাজি কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হলে দালাল-ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য এবং পথে পথে চাঁদাবাজি বন্ধের কোনো বিকল্প নেই।
লেখক : প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট
