অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধ জরুরি

কাটাতেই হবে এ হতাশা

প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট অপরাহ্নে এ জাতি এক অপার আনন্দময় সময়ের সঙ্গে কোলাকুলি করেছিল। ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বরের পর এমন আনন্দঘন সময় আর কখনও আসেনি। জাতি সেই মুহূর্তে এক অনিন্দ্যসুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী ও ব্যক্তিদের মধ্যে তৈরি হয়েছিল এক অভূতপূর্ব ঐক্য। জনগণের অভিপ্রায়ে গঠিত হয়েছিল একটি অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে ঘোষণা করেছিল সংস্কার ও ফ্যাসিবাদের সঙ্গে যুক্তদের বিচার চলবে একদিকে, অন্যদিকে চলবে নির্বাচনের প্রস্তুতি। দেশ একটি নির্বাচিত সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়ে এগিয়ে যাবে সামনে।

কিন্তু আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, যে ঐক্য তাড়িয়েছিল ফ্যাসিবাদ, খুব দ্রুতই সেই ঐক্যে ফাটল ধরেছে। সংস্কার প্রশ্নে দেখা দিয়েছে মতভিন্নতা। এই অনৈক্যের সুযোগে ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চেয়েছে এবং ফ্যাসিবাদীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনে দেখা দিয়েছে সামাজিক বিশৃঙ্খলা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নৈরাজ্য। রাজনৈতিক দলগুলোও কখনো কখনো পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এমন কিছু দাবি উত্থাপন করেছে বিভিন্ন মহল, যা পূরণ করা এই সরকারের জন্য প্রাসঙ্গিক নয়। অতি সম্প্রতি রাজনৈতিক বিভেদ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রধান হাসপাতালে জীবন বাঁচানোর সংগ্রাম করছেন। এখানে-সেখানে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ঝরছে রক্ত। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আমরা তো ভালো কিছু দেখতে চেয়েছিলাম, তাহলে কেন এমন হচ্ছে? অনেকেই বুঝতে পারছেন না, কোন পথে হাঁটছে দেশ। তবে কি জুলাই অভ্যুত্থানের যে স্বপ্ন, তা ভেঙে যাবে?

আমরা আশাবাদী থাকতে চাই। মনে করতে চাই, যে রক্তপাত ও বিশৃঙ্খলা আমরা দেখছি, তা অচিরেই আর থাকবে না। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। অন্তর্বর্তী সরকার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে বদ্ধপরিকরও। এখন দরকার রাজনৈতিক দলগুলোসহ সব মহল, এমনকি প্রত্যেক নাগরিকের শুভবুদ্ধি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে, বস্তুত এই মতপার্থক্যই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু মতপার্থক্য যদি চরম বৈরিতার রূপ নেয়, তাহলে তা অবশ্যই বড় ক্ষতি বয়ে আনবে দেশে। আমরা মনে করি, বর্তমানে দেশের প্রধান যে তিনটি বড় দল-বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি, তাদের মধ্যে নির্বাচন প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। এ কোনো অযৌক্তিক কথা নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য অব্যাহত থাকলে পুনরায় ফ্যাসিবাদের উন্মেষ ঘটতে পারে। তাহলে আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে। শুরুটা হয়ে গেছে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, এখন শেষ করার পালা।

এই শেষ করার প্রক্রিয়ার ভেতর যড়যন্ত্র হতে পারে বৈকি। সেই ষড়যন্ত্র চিহ্নিত করে তা মোকাবিলা করতে হবে। আমরা সরকারকেও অনুরোধ করব, রাজনৈতিক বা সামাজিক কোনো বিশৃঙ্খলা কিংবা নৈরাজ্য দেখা দিলে তা যেন কঠোর হাতে দমন করা হয়। গণতন্ত্র মানে যা ‘খুশি’ তাই করার অধিকার নয়। অন্যায়কে দমন করার নির্দেশ রয়েছে গণতন্ত্রের পক্ষ থেকে। আসুন আমরা সবাই মিলে সব বাধা অতিক্রম করে আমাদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাই।