প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে গত শুক্রবার নুরুল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলা’ নামে এক ব্যক্তির লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দিয়েছে ‘তৌহিদী জনতা’ হিসেবে দাবি করা একটি গোষ্ঠী। সেই সময় সংঘর্ষে একজন নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে ইউএনওর একটি গাড়ি ও পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। কোনো সভ্যসমাজে এমন অমানবিক কাজ কীভাবে ঘটে, সেটা একটা প্রশ্ন। তথাকথিত তৌহিদী জনতা শুধু বর্বরতার নজিরই রাখেনি, তারা দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার প্রতিও গভীর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। কোনো বিষয়ে মতবিরোধ থাকতে পারে বা কারও আদর্শ বা চিন্তাভাবনা নিয়ে কারও ভিন্ন মত থাকতে পারে, তবে সেজন্য তার লাশ কবর থেকে কেউ তুলে ফেলতে পার না, লাশ পুড়িয়ে ফেলতে পারে না। এ ধরনের কাজ মানবতা ও সভ্যতার বিরুদ্ধে ভয়াবহ অপরাধ।
তৌহিদী জনতার নামে উগ্রবাদীতা ও নৈরাজ্য থামছেই না। এর আগেও তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে, স্থাপনা ধ্বংস করেছে। তাদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারকে কঠোর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বরং উসকানি দেওয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ কেউ ‘মব’কে মব হিসেবে দেখতে রাজি নয়। আজকে তৌহিদী জনতা বা মব-এর এই উগ্র রূপ ধারণ করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলী দায় এড়াতে পারেন না। দেশ ও সমাজকে আজকের অবস্থায় নিয়ে আসার পেছনে তাদেরও দায়-দায়িত্ব রয়েছে। রাজবাড়ীতে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই অমানবিক ও ঘৃণ্য কাজটি আমাদের মূল্যবোধ, আমাদের আইন এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক ও সভ্যসমাজের মৌলিকভিত্তির ওপর সরাসরি আঘাত।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলেছে, এই ধরনের বর্বরতা কোনো অবস্থাতেই সহ্য করা হবে না। অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হবে। আমরা বলতে চাই, শুধু বিবৃতি দিলে চলবে না। দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি সত্যিকার অর্থেই চায় যে, সমাজে নৈরাজ্য বন্ধ করা হবে, শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা হবে তাহলে দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। অপরাধী যে বা যারাই হোক না কেন, তাদের আইনের মুখোমুখি করতে হবে। কঠোর আইনগতব্যবস্থা নিয়ে সমাজে এই বার্তা দিতে হবে যে, ‘তৌহিদি জনতার’ নামে কারও অধিকার হরণ করা চলবে না, ‘মব’ সৃষ্টি করে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না।