ডাকসু : শিক্ষাঙ্গন হোক শিক্ষার্থীবান্ধব
প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিরঙ্কুশ বিজয় পেল ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’। নির্বাচন কেন্দ্র করে দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, কিছু পাল্টাপাল্টি অভিযোগ থাকলেও, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেখা যায়নি। গত মঙ্গলবার প্রায় দিনব্যাপী একটি উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। ডাকসুর ৩৮তম এ নির্বাচনের সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিকটি হচ্ছে, ভোটদানে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উৎসাহ ও অংশগ্রহণ এবং সেখানে কোনো রকমের সংঘর্ষ-মারামারির মতো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটা। এজন্য আমরা এ নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রার্থী ও শিক্ষার্থীকে সাধুবাদ জানাই। কেননা, স্থানীয়-জাতীয় যে কোনো পর্যায়ের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে হলে এ সহাবস্থান ও সহিষ্ণুতার পরিবেশ অত্যন্ত জরুরি। একই সঙ্গে এ নির্বাচনের নবনির্বাচিত সবাইকে আমরা আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
এবার ডাকসুর ১২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ৯টিতে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। বাকি তিনটি পদে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদসহ ডাকসুতে পদ আছে ২৮টি। এর মধ্যে সদস্য পদ ১৩টি। এর মধ্যে ১১টিতে জয়ী হয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের সদস্যরা। বুধবার সকালে ডাকসু নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর সিনেট ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নবনির্বাচিত ভিপি সাদিক কায়েম সব মত ও আদর্শের সঙ্গে মিলে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। প্রতিজ্ঞা করেন ঢাবিতে চমৎকার একাডেমিক পরিবেশ নিশ্চিতের। নির্বাচিতরা তাদের ওপর আস্থার প্রতিদানের কথা উল্লেখ করেন কৃতজ্ঞচিত্তে। অবশ্য নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হেরে যাওয়া একাধিক প্রার্থী। ফল প্রত্যাখ্যান করে ছাত্রদলের প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পরিকল্পিত কারচুপির এই ফল দুপুরের পরপরই অনুমান করেছি। নিজেদের মতো করে সংখ্যা বসিয়ে নিন। এই পরিকল্পিত প্রহসন প্রত্যাখ্যান করলাম।’
দেশের মিনি পার্লামেন্টখ্যাত ডাকসুর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো ছয় বছর পর। এর আগে ছিল প্রায় দুই দশকের লম্বা বিরতি। এ ছাড়া বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অন্তত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। দীর্ঘদিন ভোটাররা বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের অনেকেরই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের অভিজ্ঞতা পর্যন্ত ছিল না। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তাই এবারের ডাকসু নির্বাচন ছিল আলোচনা ও আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে। শুধু ঢাবি নয়, সব শ্রেণি-পেশার মানুষের উৎসাহ ও নজর কাড়ে এ নির্বাচন। ফলে এটি শুধুই ভোটগ্রহণ ছিল না; বরং আবেগ, উত্তেজনা, প্রত্যাশা, বিতর্ক এবং ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ওঠার এক কার্যক্রম। অনেকেই এটিকে জাতীয় নির্বাচনের একটি ‘ড্রেস রিহার্সাল’ বা প্রস্তুতি বলেও আখ্যায়িত করছেন।
আমরা মনে করি, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এবারের ডাকসু নির্বাচন নানা দিক দিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। শুধু তরুণদের মধ্যেই নয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপামর মানুষের মধ্যেও ভোটাধিকার প্রয়োগ বা নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ডাকসু উৎসাহিত করবে- এ ধারণা করাই যায়। পাশাপাশি ডাকসুতে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সব পক্ষের মধ্যে যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান পরিলক্ষিত হয়েছে, তা মনোযোগ কেড়েছে সবার। আমরা চাই, আগামীর রাজনীতিতে এ প্রবণতা সঞ্চারিত হবে। একই সঙ্গে এ নির্বাচন নিয়ে পরাজিত প্রার্থীরা যে অভিযোগ তুলেছেন, তা খতিয়ে দেখা হবে। আমাদের প্রত্যাশা, ডাকসুতে নবনির্বাচিতদের মধ্যে সবাইকে নিয়ে পথচলার যে অঙ্গীকার ব্যক্ত হয়েছে, তা বাস্তবে চর্চিত হবে। শিক্ষাঙ্গনটি হয়ে উঠবে- যথার্থই শিক্ষার্থীবান্ধব আর ডাকসু হয়ে উঠবে অপরাপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ইতিবাচক উদাহরণ।
