ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার বিস্তার

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার বিস্তার

দেশে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এ আতঙ্ক অযৌক্তিক নয়। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে এডিস মশাবাহিত এ রোগ দুটি ব্যাপকমাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ জনস্বাস্থ্যবিষয়ক এই গুরুতর সংকট মোকাবিলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও উদাসীনতা স্পষ্ট। বিশেষ করে দুই সিটি কর্পোরেশনের মশা নিধন কার্যক্রমে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব বারবার সামনে আসছে। গত মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে প্রকাশ- যারা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তীব্র শারীরিক ব্যথা ও দুর্বলতার কারণে তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। একই সঙ্গে ডেঙ্গুর জটিল উপসর্গ নিয়ে বহু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, যাদের উল্লেখযোগ্য অংশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মারা যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে, যার মধ্যে বেশির ভাগই ঢাকার বাইরের রোগী।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দিনদিন যেভাবে মশাবাহিত রোগগুলোর ধরনে পরিবর্তন ঘটছে, তাতে এডিস মশার প্রজনন ও জীবনধারার পরিবর্তন নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। বলা বাহুল্য, দেশে এ রোগগুলো শনাক্তকরণে দুর্বলতাও প্রকট। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার উপসর্গ প্রায় একইরকম হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক রোগ নির্ণয় সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসকরা অনেক সময় শুধু উপসর্গের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা দিচ্ছেন, যা রোগীর জন্য মারাত্মক হতে পারে। বস্তুত ডেঙ্গু রোগীর মতো চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদেরও দ্রুত শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে জ্বর হলে দ্রুত ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি।

মূলত, ডেঙ্গু সম্পর্কে জনসচেতনতার অভাব এবং সঠিক সময়ে হাসপাতালে না পৌঁছানোর কারণে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তাছাড়া মফস্বল এলাকায় রোগ নির্ণয়ের সীমাবদ্ধতা ও ভুল চিকিৎসা এ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। এমতাবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলোকে অবশ্যই ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার সঠিক তথ্য সংগ্রহে আরও সক্রিয় হতে হবে। কোন অঞ্চলে কতজন আক্রান্ত হচ্ছে, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। সিটি কর্পোরেশনগুলোকে মশক নিধন কার্যক্রমে আরও আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। শুধু গতানুগতিক ফগার দিয়ে মশা নিধন নয়, উৎসস্থলে লার্ভা নিধনের ওপরও জোর দিতে হবে। ব্যবহৃত মশার ওষুধ কতটা কার্যকর, সেটিও পরীক্ষা করে দেখা দরকার। পাশাপাশি, নাগরিকদের নিজ নিজ বাড়িতে ও আশপাশে মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করার ব্যাপারে সচেতন করতে হবে।

অতীতে মশা নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা এবং রোগী ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণেই এ রোগ দুটি আজ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং নাগরিক-সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। সচেতনতা, সঠিক রোগ নির্ণয় ও কার্যকর মশা নিধন কার্যক্রমের মাধ্যমেই কেবল এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সরকার মশক নিধন কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সুচিকিৎসা প্রদানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত