চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যেন মরণফাঁদ
আলমগীর আলম
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার অন্যতম ব্যস্ততম সড়কটি আজ যেন এক মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই এই মহাসড়কে ঘটছে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। যানজটে আটকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়, বেহাল সড়কের কারণে সাধারণ যাত্রী থেকে পরিবহন চালক- সবারই ভোগান্তি অসীম।
চট্টগ্রামের থেকে কক্সবাজারের উখিয়া পর্যন্ত প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কটির অবস্থা ভয়াবহ।
বহু স্থানে খানাখন্দ, সংকীর্ণ ব্রিজ, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং ভারী যানবাহনের অত্যাধিক চাপের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটে। চলতি মাসেই অন্তত ১০ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। বিশেষ করে ২০২৫ এ চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় তিন দিনে তিনটি বড় দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হন। ব্যবসায়ী, পর্যটক, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ এ সড়ক ব্যবহার করেন রাস্তার দু’পাশে দোকান পাট রাস্তার উপর ময়লার স্তূপসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এ গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়ক।
চট্টগ্রামের দোহাজারী কক্সবাজার রেলযাত্রী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবু সাঈদ তালুকদার খোকন জানান ‘প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চলছে মহাসড়কে কোথাও ব্রেক ফেল করে, কোথাও হঠাৎ গর্তে পড়ে কোথাও মুখোমুখি সংঘর্ষে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে, বর্তমানে সড়কটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিনের মানুষের দাবি এ সড়কটি দ্রুত ছয় লাইনে উন্নত করা। পর্যটন শহর কক্সবাজারের সঙ্গে রাজধানীর সহজ যোগাযোগের জন্য মহাসড়কের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু বিপজ্জনক অবস্থায় এটি পর্যটনের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়মতো সংস্কার ও সম্প্রসারণ না হলে মহাসড়ক আরও বিপজ্জনক হবে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে মৃত্যুর হার বাড়তে পারে। চট্টগ্রাম হতে প্রতিটি উপজেলায় বেশ অনেকগুলো বিপজ্জনক বাঁক মোড়, তীব্র বাঁক রয়েছে এগুলোই মূলত দুর্ঘটনার কারণ রাস্তা সোজাকরণ না হওয়ায় যেন বাঁকে বাঁকে বিপদ। পটিয়া ইন্দ্রপুল এলাকায় লবণবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে সড়কে লবণ পানি পড়ে স্লিপারির সৃষ্টি হয়, যা দুর্ঘটনা বাড়ায়। অভিজ্ঞতাহীন চালকরাও ঝুঁকিপূর্ণ এ রুটে দুর্ঘটনার কারণ। স্থানীয়রা মহাসড়কটি ৪ বা ৬ লেনে উন্নীত করার দাবিতে আন্দোলন ও লংমার্চ করেছে।
সরকার মহাসড়ককে ৬-৮ লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে, যার মধ্যে এক্সপ্রেসওয়ে, সার্ভিস লেন, ওভারপাস ও আন্ডারপাস নির্মাণ থাকবে। তবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কারণে সম্প্রসারণে বিলম্ব হচ্ছে বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়। অতি দ্রুত মহাসড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণ না হলে এর বিপজ্জনক অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হবে না। পটিয়া সচেতন নাগরিক ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী, কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক মফিজুল ইসলাম বাবলু ও সচেতন নাগরিক ফোরাম এর আহ্বায়ক বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা, পরিবারে পরিবারে চলছে শোকের ছাঁয়া। মৃত্যুর মিছিল যেন থামছে না, তাছাড়া দীর্ঘদিন পটিয়ায় মহাসড়কের উপর ময়লার স্তূপ ফেলছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ মানববন্ধন কর্মসূচি স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করেও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। অবিলম্বে ময়লার স্তূপ সরাতে সচেতন নাগরিক ফোরামণ্ডএর পক্ষ হতে দাবি জানিয়ে বলেন, সড়কটি দ্রুত ছয় লাইনে উন্নত করা হলে মৃত্যুর হার যেমন কমবে, তেমনি করে বিশ্বের অপরূপ সুন্দরময় সাগর কক্সবাজার দেশ-বিদেশের পর্যটকরা নিরাপদে যাতায়াত করতে সহজ হবে।
লেখক : যুগ্ম সদস্য সচিব, পটিয়া সচেতন নাগরিক ফোরাম
