বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবুজ অর্থনীতি

নাজিয়াত আক্তার

প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে দ্রুত বিকাশ লাভ করছে। তবে প্রচলিত শিল্পায়ন ও জ্বালানি ব্যবস্থার কারণে পরিবেশ দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে। এক্ষেত্রে সবুজ অর্থনীতি (Green Economy) বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে উন্নয়ন, উৎপাদন ও ভোগের প্রতিটি ধাপে পরিবেশ সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার এবং সামাজিক ন্যায়বিচারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। সবুজ অর্থনীতির মাধ্যমে দেশের টেকসই উন্নয়ন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে এবং পরিবেশ দূষণের বিভিন্ন মাত্রা কমে আসবে। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল জনবহুল দেশে জলবায়ু পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির মাত্রা সচল রাখতে সবুজ অর্থনীতির বিকল্প নেই।

জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (UNEP) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী সবুজ অর্থনীতি বাস্তবায়ন করলে ২০৫০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ৭০% পর্যন্ত কমানো সম্ভব। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পরিবেশবান্ধব শিল্প, টেকসই কৃষি ও সবুজ প্রযুক্তি প্রয়োগ করলে জিডিপিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যুতের মাত্র ৪.৫% নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসে, যেখানে সরকারের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে তা ৪০% এ উন্নীত করা। এটি বাস্তবায়িত হলে বছরে বিলিয়ন ডলার জ্বালানি আমদানির খরচ বাঁচবে।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতির এক গবেষণায় দেখা গেছে, সবুজ প্রবৃদ্ধি মডেল গ্রহণ করলে কৃষি খাতে উৎপাদনশীলতা ১৫-২০% বাড়তে পারে এবং নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে প্রায় ৫০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব। একই সঙ্গে বায়ুদূষণ কমে গেলে স্বাস্থ্য ব্যয়ে উল্লেখযোগ্য সাশ্রয় হবেথ বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, বায়ুদূষণজনিত কারণে বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ৩.৯% ক্ষতি হয় প্রতি বছর। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও দুর্যোগ ঝুঁকি কমানো। দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে কার্বন নিঃসরণ, দূষণ ও বন উজাড় বেড়েছে। সবুজ অর্থনীতি নবায়নযোগ্য শক্তি, পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি এবং টেকসই কৃষির মাধ্যমে পরিবেশগত ক্ষতি কমায়। এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি হ্রাস করা যায়।

জ্বালানি আমদানির উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস। জীবাশ্ম জ্বালানি সীমিত ও ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। সৌর, বায়ু, জলবিদ্যুৎ ও বায়োগ্যাসের মতো নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করলে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় এবং আমদানিনির্ভরতা কমে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন। সবুজ শিল্প, যেমন : সৌর বিদ্যুৎ, পরিবেশবান্ধব কৃষি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে। আন্তর্জাতিক বাজারে সবুজ পণ্য ও সেবা চাহিদা বাড়ছে, যা অর্থনীতিকে বৈশ্বিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক করে তোলে।

পরিবেশ রক্ষা করে টেকসই শিল্পায়ন নিশ্চিত করা। প্রচলিত উন্নয়ন প্রক্রিয়া স্বল্পমেয়াদে লাভজনক হলেও দীর্ঘমেয়াদে প্রাকৃতিক সম্পদ নিঃশেষ করে।সবুজ অর্থনীতি প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উন্নয়নের পথ উন্মুক্ত রাখে। সবমিলিয়ে, বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য সবুজ অর্থনীতি শুধু পরিবেশবান্ধব নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও সামাজিক কল্যাণের অন্যতম হাতিয়ার।

লেখক : সদস্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ফিচার কলাম অ্যান্ড কনটেন্ট রাইটার্স।