তথ্যের মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি এবং রক্ষা করা জরুরি

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

প্রতিটি বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর পালিত হয় আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস। এটি শুধু একটি দিন নয়, বরং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের জন্য তথ্যের ওপর অধিকার, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা এবং সরকার, প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সমাজের মধ্যে তথ্যের প্রবাহকে সহজতর করা। ২০২৫ সালের এই দিবসের প্রতিপাদ্য হয়েছে ‘পরিবেশ রক্ষায় ডিজিটাল যুগে তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণ’, যা আজকের সময়ে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। কারণ আমরা এমন একটি যুগে বাস করছি যেখানে তথ্য প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং পরিবেশ সংরক্ষণে তথ্যের প্রাপ্যতা এবং স্বচ্ছতা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

তথ্য অধিকার, সংজ্ঞা ও গুরুত্ব : তথ্য অধিকার হলো নাগরিকদের মৌলিক অধিকার, যার মাধ্যমে তারা সরকার বা যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা তথ্য জানতে পারে। এটি গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। যখন নাগরিকরা তাদের অধিকার অনুযায়ী তথ্য পায়, তখন তারা সরকারের নীতি, প্রকল্প, বাজেট এবং পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কিত কার্যক্রমের উপর নজর রাখতে সক্ষম হয়। তথ্য অধিকার শুধুমাত্র স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করে না, বরং এটি দুর্নীতি প্রতিরোধ, ন্যায়পরায়ণতা, এবং দায়বদ্ধ প্রশাসনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বের অনেক দেশে তথ্য অধিকার আইন প্রণীত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে ২০০৯ সালে ‘তথ্য অধিকার আইন’ কার্যকর হয়েছে, যা নাগরিকদের সরকারি তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করে। এই আইন নাগরিকদের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে, বিশেষত পরিবেশ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে তথ্য পেতে। তথ্য অধিকার কেবল নাগরিকদের ক্ষমতায়ন করে না, এটি সরকারের ওপরও একটি দায়িত্ব আরোপ করে। এটি নিশ্চিত করে যে কোনো প্রতিষ্ঠান বা সরকারি সংস্থা স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধভাবে কাজ করবে।

পরিবেশ সংরক্ষণে তথ্যের গুরুত্ব : পরিবেশ সংরক্ষণ একটি জটিল ও বহুমুখী চ্যালেঞ্জ। জলবায়ু পরিবর্তন, বনাঞ্চল ধ্বংস, নদী দূষণ, বায়ু মান এবং বিপন্ন প্রজাতির সংরক্ষণ এই ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য ছাড়া কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ সম্ভব নয়। তথ্য অধিকার নিশ্চিত করলে নাগরিকরা পরিবেশ সংক্রান্ত প্রকল্প, শিল্পায়ন, বনাঞ্চল ধ্বংস, নদী দূষণ, রাসায়নিক ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে অবহিত থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো শিল্প কল নদী দূষণ করছে, নাগরিকরা তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে সরকারের কাছ থেকে সেই শিল্প কলের পরিবেশগত রিপোর্ট জানতে পারে। এর মাধ্যমে তারা প্রতিবাদ করতে, পরিবেশ বান্ধব বিকল্প প্রস্তাব করতে এবং পরিবেশ সংরক্ষণে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।

লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যান সোসাইটি