পাচারকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি

প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচারবিষয়ক প্রতিবেদন ‘ট্রাফিকিং ইন পারসন্স (টিআইপি) রিপোর্ট ২০২৫’-এ বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার সংক্রান্ত যে তথ্য প্রকাশ পেয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, এক বছরে বাংলাদেশ থেকে ৩ হাজার ৪১০ ব্যক্তি পাচারের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৭৬৫ জন যৌন পাচারের শিকার, ২ হাজার ৫৭২ জন জোরপূর্বক শ্রমের শিকার এবং ৭৩ জন অনির্দিষ্ট প্রকারের পাচারের শিকার হয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার পাচার নির্মূলের জন্য ন্যূনতম মান সম্পূর্ণরূপে পূরণ করেনি। তবে এটি করার জন্য উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা পাচারে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের কিছু কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বস্তুত মানবপাচারে জড়িত রয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তি ও গোষ্ঠী। এদের মধ্যে দালালরা (সাব-এজেন্ট) নানা প্রলোভন দেখিয়ে নিয়োগকারী সংস্থাগুলোতে কর্মী সরবরাহ করে। দালালদের প্রলোভনে পড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে অনেকে ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছেন। কেউ বাধ্য হচ্ছেন পতিতাবৃত্তিতে, কেউ কাজ না পেয়ে ঘুরছেন রাস্তায়, কেউ বিনা অনুমতিতে প্রবাসে অবস্থান করতে গিয়ে কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কাউকে আবার জিম্মি করে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে নেওয়া হচ্ছে মুক্তিপণ। অনেকে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে বিদেশে গিয়ে পাচ্ছেন না প্রতিশ্রুত কাজ। অভিযোগ রয়েছে, এসব ঘটনায় মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা হলেও সিংহভাগ আসামিই খালাস পেয়ে ফের জড়ান পুরোনো অপরাধে। ফলে মানবপাচারের অপরাধ বেড়েই চলেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তদন্তে ত্রুটি-গাফিলতি, ধীরগতি ও বিচারে দীর্ঘসূত্রতাই আসামি খালাসের মূল কারণ। তাছাড়া আদালতের বাইরে দুপক্ষের আপস-মীমাংসার কারণেও অপরাধীরা পার পেয়ে যায়।

এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় অধিকতর মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি সমাজের সব পর্যায়ে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। ভুক্তভোগীদের দায়েরকৃত মামলা তদন্তের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত পাচারে জড়িত ব্যক্তিদের প্রকৃত পরিচয়ের পাশাপাশি পাচারের রুটসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধান করা, বিচারে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করা। আদালতে দেশের বাইরে সংঘটিত অপরাধ প্রমাণের ক্ষেত্রে দূতাবাসগুলোকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, মানবপাচারের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারী, শিশু ও কিশোরীরা। এ ধরনের অপরাধের শিকার হলে অনেক সময় তারা ভালনারেবল হয়ে পড়েন। কারণ মামলাগুলোর সঙ্গে অনেক স্পর্শকাতর প্রমাণ থাকে। সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তারা অনেক সময় এগুলো আদালতে উপস্থাপন করতে চান না। ফলে মামলাও দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই সাক্ষী ও প্রমাণাদির গোপনীয়তা রক্ষার পরিবেশ তৈরি করাও জরুরি।