সরকারি হাসপাতালগুলো এখন সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে
মো. নূর হামজা পিয়াস
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

গরিব ও নিম্নবিত্ত মানুষের কাছে সরকারি হাসপাতাল মানে শেষ ভরসা। এখানে তারা আশা করেন স্বল্প খরচে চিকিৎসা পাবেন; কিন্তু বাস্তব চিত্র ভয়াবহ। চিকিৎসা নিতে এলেই দেখা যায় টোকেন থেকে শুরু করে ওয়ার্ডে সিট পাওয়া পর্যন্ত টাকা ছাড়া কিছুই চলছে না। ২০২৫ সালের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজধানীসহ দেশের প্রায় ৭৮ শতাংশ সরকারি হাসপাতালে রোগীদের কাছ থেকে সরাসরি বা পরোক্ষ ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই পরিসংখ্যান আমাদের রাষ্ট্রীয় মানবিক দায়িত্বের ওপর এক গভীর প্রশ্ন তোলে।
একসময় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা মানেই ছিল কম খরচে সেবা। কিন্তু এখন গরিবের চিকিৎসা যেন বিলাসিতার পর্যায়ে চলে গেছে। ওষুধ থেকে শুরু করে গজ, ব্যান্ডেজ সবকিছুতেই চলছে দেদার বিক্রি। যে জিনিসগুলো সরকারি অর্থে কেনা হয়, সেগুলো বাজারে চলে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের হাতে। একদিকে দরিদ্র মানুষ হাসপাতালের গেটেই চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে, অন্যদিকে সিন্ডিকেটের সদস্যরা সরকারি সম্পদ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয় করছে।
সরকারি হাসপাতালের প্রশাসনিক কাঠামো এখন মূলত সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। কে কোন ওয়ার্ডে কাজ করবে, কে আউটসোর্সিংয়ে চাকরি পাবে, এমনকি কোন রোগী কোন ক্লিনিকে পাঠানো হবে সব কিছু নির্ধারণ হয় এই গোষ্ঠীর নির্দেশে। ২০২৫ সালের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৬০ শতাংশ সরকারি হাসপাতালে আউটসোর্সিং নিয়োগে অর্থ লেনদেন ও রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করছে। প্রশাসনিক এই অনৈতিক প্রভাব শুধু দুর্নীতিই নয়, চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি জনগণের বিশ্বাসও ধ্বংস করছে। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস সিন্ডিকেট ও দুর্নীতির অন্যতম কারণ। প্রায়শই দেখা যায়, চিকিৎসকরা হাসপাতালে কম সময় দেন এবং রোগীদের ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের প্রাইভেট চেম্বার বা ক্লিনিকে যেতে উৎসাহিত করেন। অনেক সময় গুরুতর রোগীদের অপারেশনের তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়, যাতে তারা বাধ্য হয়ে বাইরে চড়া দামে অপারেশন করান। এই দ্বৈত ভূমিকা সরকারি সেবার প্রতি চিকিৎসকদের মনোযোগ কমিয়ে দেয় এবং কমিশনভিত্তিক ব্যবসার সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করে।
সরকারি হাসপাতালগুলোর জন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ব্যাপক দুর্নীতি এবং সিন্ডিকেট কাজ করে। অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় বা নিম্নমানের যন্ত্রপাতি উচ্চ দামে কেনা হয়। আবার, কেনা যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট থাকা সত্ত্বেও তা করা হয় না, ফলে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে। এই ক্রয় সিন্ডিকেট স্বাস্থ্য খাতের বাজেটকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং চিকিৎসাসেবার মানকে সরাসরি নিম্নগামী করে তোলে। সরকারি হাসপাতালে রক্তের প্রয়োজনেও সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ওঠে। প্রায়শই রক্তদাতা সিন্ডিকেট বা দালালরা রক্তের ব্যাগপ্রতি অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে, এমনকি বিনামূল্যে রক্তদানের প্রক্রিয়াতেও তারা অবৈধভাবে মধ্যস্থতা করে। সরকারি ব্লাড ব্যাংকগুলোতে স্বচ্ছতা ও কঠোর নজরদারির অভাব থাকায় এই দালালচক্র সক্রিয় থাকে। অনেক সময় দরিদ্র রোগীরা তাৎক্ষণিক রক্ত সরবরাহ না পেয়ে মারাত্মক বিপদের মুখে পড়েন।
বর্তমানে বেশিরভাগ সরকারি হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা, সিকিউরিটি, ওয়ার্ড সহকারী নিয়োগ হয় আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে। কিন্তু এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চলছে কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য। যারা টাকা দেয়, তারাই চাকরি পায় এমন অভিযোগ সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৫ সালে গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঢাকার বড় তিনটি হাসপাতালের আউটসোর্সিং চুক্তিতে প্রায় ২৫ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। এতে সাধারণ শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছে, আর সিন্ডিকেটের সদস্যরা পাচ্ছে অগাধ অর্থের পাহাড়।
হাসপাতালের সিন্ডিকেট এখন এমন এক শক্তিশালী নেটওয়ার্কে পরিণত হয়েছে, যারা রোগীকে নিজেদের পণ্য হিসেবে দেখে। জরুরি সেবার সিট দিতে ঘুষ, রক্ত বা ওষুধের সরবরাহে কমিশন, এমনকি লাশ হস্তান্তরেও টাকা সবই এই সিন্ডিকেটের উপার্জনের অংশ। অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে রোগীকে বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠায়, যেখানে তাদের কমিশন নিশ্চিত। এতে গরিব মানুষ দ্বিগুণ ক্ষতির মুখে পড়ে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ে, আর সেবার মান কমে।
একটি সরকারি হাসপাতাল পরিচালনার ক্ষেত্রে চিকিৎসক, নার্স, প্রশাসক ছাড়াও রয়েছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী যাদের হাতে বাস্তব ক্ষমতা অনেক সময় চিকিৎসকদের চেয়েও বেশি। তারা নিজেদের প্রভাবশালী রাজনৈতিক আশ্রয়ের কারণে প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে। অনেক সময় দেখা যায়, একজন ওয়ার্ড বয় বা পরিচ্ছন্নতাকর্মী চিকিৎসকের নির্দেশ অমান্য করে সিন্ডিকেটের নির্দেশ মানে। এভাবে প্রশাসনের ভেতরে গড়ে উঠেছে এক অদৃশ্য কিন্তু ভয়ংকর মাইক্রো-শাসনব্যবস্থা।
সরকারি হাসপাতালে ভিআইপি সংস্কৃতি সাধারণ রোগীদের জন্য চরম বঞ্চনা নিয়ে আসে। প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা বা উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ শয্যা সংরক্ষণ এবং বিশেষ চিকিৎসাব্যবস্থা থাকায় সাধারণ রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা পেতে অসুবিধা হয়। সিন্ডিকেটের সদস্যরা এই ভিআইপি সংস্কৃতিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের প্রভাব আরও বাড়ায়। সকল নাগরিকের জন্য সমান চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার নীতি কাগজে-কলমে না রেখে বাস্তবে প্রয়োগ করা জরুরি।
একটি হাসপাতাল শুধু ইট-পাথর বা যন্ত্রপাতির সমষ্টি নয়, এটি রাষ্ট্রের মানবিক চেহারার প্রতিচ্ছবি। যখন সেই জায়গায় ঘুষ, দালালি ও বাণিজ্য প্রবেশ করে, তখন রাষ্ট্রের মানবিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। হাসপাতালের প্রতিটি বিছানায় লুকিয়ে থাকে কোনো মায়ের আর্তনাদ, কোনো শিশুর কান্না, কোনো শ্রমিকের শেষ আশা। সেই আশায় যদি হাত রাখে দুর্নীতি, তবে মানবতার মর্যাদা কোথায় দাঁড়ায়? এই প্রশ্ন আজ আমাদের সকলের বিবেক নাড়া দেয়।
হাসপাতাল সিন্ডিকেটের একটি বড় আয়ের উৎস হলো- প্যাথলজি ও ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা। অনেক সময় চিকিৎসকরা অপ্রয়োজনীয় বা একাধিক পরীক্ষা দেন এবং রোগীদের হাসপাতালের নিজস্ব ল্যাবের পরিবর্তে নির্দিষ্ট বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠান, যেখানে তাদের মোটা অংকের কমিশন নিশ্চিত থাকে। এই বেসরকারি কেন্দ্রগুলোতে পরীক্ষার ফল অনেক সময় ভুল বা অতিরঞ্জিত হয়, যা রোগীর ভুল চিকিৎসায় পরিণতি ঘটায়। হাসপাতালের ভেতরে স্বচ্ছ ও আধুনিক মানসম্পন্ন ল্যাব সুবিধা নিশ্চিত করা এবং ডায়াগনস্টিক কমিশন বন্ধে কঠোর শাস্তি বিধান করা জরুরি। বর্তমানে হাসপাতালের ভেতরে এমন এক অবস্থা তৈরি হয়েছে, যেখানে প্রকৃত রোগীর চেয়ে সিন্ডিকেট সদস্যরাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কথায় ওয়ার্ড বদল হয়, সার্জারি পেছানো হয়, এমনকি চিকিৎসক বদলও ঘটে। রোগীর আত্মীয়রা যেখানে সারারাত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে, সেখানে সিন্ডিকেটের দালাল কয়েক মিনিটেই সিট ঠিক করে ফেলে। এটি শুধু নৈতিক অবক্ষয় নয়, বরং এক প্রাতিষ্ঠানিক অন্যায় যা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার দুর্বলতাকে স্পষ্ট করে।
সরকারি হাসপাতালের সিন্ডিকেটে স্থানীয় রাজনৈতিক ক্যাডারদের সরাসরি হস্তক্ষেপ একটি জ্বলন্ত সমস্যা। এই ক্যাডাররা হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে প্রভাব ফেলে, দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করে এবং হাসপাতালের ভেতরে নিজেদের প্রতারকচক্র পরিচালনা করে। তারা অনেক সময় চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্মীদের উপর চাপ সৃষ্টি করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে। এই রাজনৈতিক ছত্রছায়া সিন্ডিকেটকে এতটাই শক্তিশালী করে তোলে যে, হাসপাতাল প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে সাহস পায় না। এই চক্র ভাঙতে হলে দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
হাসপাতালের এই ব্যাপক দুর্নীতির কারণে অনেক যোগ্য ও সৎ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী হতাশ হয়ে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বা সরকারি চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। যারা সততার সঙ্গে কাজ করতে চান, তারা সিন্ডিকেটের দ্বারা হয়রানি ও কোণঠাসা হন। এই মেধাপাচার বা দক্ষ মানবসম্পদ হারানো দেশের স্বাস্থ্য খাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি। সরকারকে উচিত সৎ ও মেধাবী কর্মীদের সুরক্ষার জন্য কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করা এবং তাদের পদোন্নতি ও মূল্যায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, যাতে তারা কাজে উৎসাহিত হন।
সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার ওষুধ কেনে জনগণের সেবার জন্য। কিন্তু বাস্তবে সেই ওষুধের বড় অংশ কালোবাজারে বিক্রি হয়ে যায়। ২০২৫ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজধানীর ১২টি হাসপাতাল থেকে গত এক বছরে প্রায় ৭০ কোটি টাকার সরকারি ওষুধ গোপনে বাজারে বিক্রি হয়েছে। এই ওষুধের অনেকটাই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পুনঃপ্যাকেটজাত করে বিক্রি হচ্ছে। এটি শুধু আর্থিক নয়, জনস্বাস্থ্যের জন্যও এক মারাত্মক ঝুঁকি।
যেখানে প্রশাসনের ভেতরে জবাবদিহি নেই, সেখানে দুর্নীতি অবশ্যম্ভাবী। সরকারি হাসপাতালগুলোতে অভিযোগ ব্যবস্থা প্রায় অকার্যকর। অনিয়ম বা ঘুষের অভিযোগ তুললেও সাধারণ কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। বরং অনেক সময় অভিযোগকারী চিকিৎসক বা কর্মকর্তা হয়রানির শিকার হন। এই ভয় ও নীরব সংস্কৃতি সিন্ডিকেটকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে। যতদিন পর্যন্ত প্রশাসনিক জবাবদিহি নিশ্চিত না হবে, ততদিন পর্যন্ত হাসপাতালের দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব নয়।
সরকারি হাসপাতালের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে রাজনৈতিক প্রভাব এক পুরোনো রোগে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি হাসপাতালের সিন্ডিকেটের পেছনে থাকে কোনো না কোনো রাজনৈতিক ছত্রছায়া। তারা জানে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও শাস্তি হবে না। এই প্রভাব শুধু দুর্নীতিকেই প্রশ্রয় দিচ্ছে না, বরং স্বাস্থ্য খাতের পেশাগত মর্যাদাকেও ধ্বংস করছে। ২০২৫ সালে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, গত তিন বছরে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সরকারি হাসপাতালগুলোতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ ক্ষেত্রে। দিনশেষে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ। যারা করের টাকা দিয়ে এই হাসপাতালগুলো চালায়, তারাই সেখানে অপমানিত হয়, প্রতারিত হয়। অনেক সময় জরুরি চিকিৎসা না পেয়ে রোগী মারা যায়, অথচ সিন্ডিকেটের সদস্যরা তখন অন্য ওয়ার্ডে কমিশন গুনছে। মানুষ এখন হাসপাতালে গিয়ে ভয় পায় চিকিৎসা না পেয়ে আরও সমস্যায় পড়বে এই আশঙ্কায়। এই ভয়ই প্রমাণ করে, স্বাস্থ্য খাতের নৈতিক ভিত্তি ভেঙে পড়েছে।
সরকারি হাসপাতালগুলোর দুর্নীতি দমনের জন্য সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি এবং স্বাস্থ্য খাতের নিজস্ব নীতিমালা বিদ্যমান আছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অবৈধ লেনদেন ও সম্পদ অর্জনের মামলা করতে পারে। শাস্তি হিসেবে বরখাস্ত, জেল বা জরিমানা-এর বিধান রয়েছে। তবে, এই আইনগুলোর প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রশাসনিক সাহসের অভাব দেখা যায়। অনেক সময় দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত ধীরগতিতে চলে বা মামলা চাপা দেওয়া হয়। এই আইনগুলোকে আরও কার্যকর করতে হাসপাতাল পর্যায়ে বিশেষ তদারকি সেল গঠন এবং আইন ভঙ্গের জন্য দ্রুত ও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
এই ভয়ংকর দুর্নীতির চক্র ভাঙতে হলে দরকার রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক সাহস। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ওপর দীর্ঘস্থায়ী নজরদারি চালাতে হবে। আউটসোর্সিং নিয়োগে ডিজিটাল স্বচ্ছতা আনতে হবে। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় নাগরিক তদারকি কমিটি গঠন করা যেতে পারে, যাতে জনগণ সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারে। সরকারি হাসপাতাল জনগণের করের টাকায় চলে এটি কোনো গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, এই নীতি রাষ্ট্রকে বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে।
অসংখ্য দরিদ্র মানুষের কাছে সরকারি হাসপাতাল মানে জীবনের শেষ আশ্রয়। সেই আশ্রয়ে যদি প্রবেশ করে দালালি, ভয় ও দুর্নীতি, তবে রাষ্ট্রের মানবিক চেহারা ধ্বংস হয়। এখন সময় এসেছে এই সিন্ডিকেটের শেকড় উপড়ে ফেলার। প্রশাসনের কাঠামো পুনর্গঠন, কঠোর শাস্তি, স্বচ্ছ নিয়োগ ও নাগরিক অংশগ্রহণ এই চার স্তম্ভেই গড়ে উঠতে পারে নতুন এক জনবান্ধব হাসপাতালব্যবস্থা। রাষ্ট্র যদি এখন নীরব থাকে, তবে আগামী প্রজন্মের কাছে আমরা দায়মুক্ত থাকব না।
লেখক : শিক্ষার্থী আইন বিভাগ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
