ছাত্র রাজনীতি ভবিষ্যতের আশার আলো

প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র রাজনীতি একটি গৌরবময় অধ্যায়। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ কিংবা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম- প্রতিটি ঐতিহাসিক মুহূর্তে ছাত্র সমাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এই কারণে বলা হয়, ছাত্র রাজনীতি শুধু বর্তমান নয়, বরং আগামীর দেশকেও নেতৃত্ব দেওয়ার শক্তি বহন করে।

ছাত্র রাজনীতি তরুণ প্রজন্মকে সামাজিক ও রাজনৈতিক চেতনার সঙ্গে যুক্ত করে। দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী সমাজের মধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি। তাই তারা মানুষের সমস্যা, অন্যায় বা বৈষম্য খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করতে পারে। ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে তারা নেতৃত্ব শেখে, সংগঠন পরিচালনা করে এবং গণমানুষের দাবিকে সামনে আনার অভিজ্ঞতা অর্জন করে। ভবিষ্যতে এরা জাতীয় নেতৃত্বে আসলে বাস্তব অভিজ্ঞতার কারণে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে বেশি সক্ষম হয়। ছাত্র রাজনীতি তরুণদের মধ্যে সাহস, ত্যাগ ও সংগ্রামী মানসিকতা গড়ে তোলে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এবং ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন, ছাত্রসমাজ জাতির জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে পারে। এটা গণতন্ত্রের বিদ্যালয় হিসেবে কাজ করে। এখানে শিক্ষার্থীরা শিখে কীভাবে মতপ্রকাশ করতে হয়, ভিন্নমতকে সম্মান এবং জনগণের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হতে হয়। একটি সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির মাধ্যমে তারা গণতন্ত্রের চর্চা ও মূল্যবোধকে ধারণ করতে পারে। এভাবেই ছাত্র রাজনীতি ভবিষ্যতের রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করে।

তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। আজকের ছাত্র রাজনীতি অনেক ক্ষেত্রেই দলীয় প্রভাব, সহিংসতা ও ব্যক্তিগত স্বার্থ, ক্যাম্পাস দখল, সেশনজট, টেন্ডারবাজি ও অরাজকতার কারণে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় প্রকৃত মেধাবীরা রাজনীতির বাইরে থেকে অবহেলিত হচ্ছে। এই প্রবণতা ছাত্র রাজনীতির ইতিবাচক শক্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে এবং জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে।

কীভাবে ছাত্র রাজনীতি সত্যিকার অর্থে আগামীর দেশকে নেতৃত্ব দেবে : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চা নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্র রাজনীতিকে সহিংসতা ও দলীয় আধিপত্য থেকে মুক্ত করতে হবে। নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে যোগ্যতা, নৈতিকতা ও শিক্ষাগত দক্ষতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। ছাত্রদের সামাজিক সেবা, গবেষণা, পরিবেশ রক্ষা এবং প্রযুক্তি উন্নয়নের মতো ইতিবাচক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।

ছাত্র রাজনীতি যদি সঠিক দিকনির্দেশনা পায়, তবে এটি শুধু ক্যাম্পাস রাজনীতি নয়, বরং জাতির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করবে। তরুণ প্রজন্মের শক্তি, উদ্যম ও দেশপ্রেমকে কাজে লাগিয়ে ছাত্র রাজনীতি আগামী বাংলাদেশকে আরও উন্নত, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করতে সক্ষম হবে। তাই যথার্থ অর্থে বলা যায়- ছাত্র রাজনীতিই আগামীর দেশকে নেতৃত্ব দেবে।