কোনো কারণ ছাড়াই খুব মন খারাপ!
মাসুমা আক্তার
প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ভাল্লাগছে না। কোনো কারণ ছাড়াই খুব মন খারাপ। বিষন্নতা, হতাশা, ক্লান্তি। কী করলে ভালো লাগবে! কাছের কারও কাছ থেকে এসব কথা যদি শুনে থাকেন, বিশেষ করে এই ঋতু পরিবর্তনের প্রাক্কালে, একটু মিলিয়ে নিন। মৌসুমী বায়ু অঞ্চলে বসবাসকরা লোকদের মাঝে ঋতু পরিবর্তনে সঙ্গে সঙ্গে মনের পরিবর্তনের এই হাল খুব স্বাভাবিক। দিনরাতের তাপমাত্রা, আলোর উপস্থিতির সময়, বাতাসের বেগ, চাপ, বৃষ্টিপাত- এসব বিষয় মানুষের আচরণ, ভাবের প্রকাশ, অর্থাৎ চিন্তা-ভাবনাকে প্রভাবিত করে। সঙ্গে সঙ্গে শরীরও প্রভাবিত হয়। এ সময় বিষণ্ণতা, হতাশা, হারিয়ে যাওয়া প্রিয় মানুষ, ফেলে আসা আনন্দের কষ্টের স্মৃতি কাতর করে তুলতে পারে যে কাউকে। যুবক বৃদ্ধ যে কারোরই ঘটতে পারে এই বিপত্তি। এটা খুব স্বাভাবিক এবং সমাধানযোগ্য বিষয়। যদিও মানব মনে ঋতু পরিবর্তনের প্রভাবে ঘটে যাওয়া এসব অস্বস্তির প্রকৃত কারণ উদঘাটন করা যায়নি, কিছু অনুশীলন ও পর্যালোচনা থেকে যা জানা গেছে, সেটাকেই সিদ্ধান্ত হিসেবে ধরে নেওয়া হয়, প্রকৃতি রহস্য পছন্দ করে।
Scatuil Affective Disorder বা এসএডি হলো বছরের কোনো বিশেষ সময়ে মানবমনের বিষণ্ণতা ও হতাশার রোগ। এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির মনে হতে পারে, তার সুখ-শান্তির অভাব, সুখের প্রয়োজন। I need peace - এটা বলতে পারে রোগী বারবার। এ সময় মনের সঙ্গে সঙ্গে শরীরেরও কিছু পরিবর্তন ঘটে, সুখ সুখ বলে কাঁদলেও সুখ লাভের ইচ্ছা হ্রাস পায়। কাজে অনীহা, উদ্যম কমে যাওয়া, সারাদিন ঘুমঘুম ভাব অথবা নির্ঘুম রাত কাটা, অহেতুক দুশ্চিন্তা বৃদ্ধি, খাদ্য গ্রহণে অনীহা- এসবই ঘটে থাকে। এ রোগের একটা খারাপ বিষয় হলো- প্রতিবছর ঠিক একই সময় হাজির হয় এই মনের রোগ। ভাবুন তো, হচ্ছে কিনা বছর বছর এই সমস্যা আপনারও। আমরা মনের যত্ন নিতে চাই না, শুধু গায়ে-গতরে খাটাখাটনি করতে পারলেই ধরে নিই, বাহ্, বেশ তো আছি। মনেরও মন আছে, তাকে চাঙা রাখার দায়িত্বও আপনার। এসএডি আক্রান্ত ব্যক্তি ফেলে আসা সুখের দিন, ছেড়ে যাওয়া বন্ধু-স্বজন, প্রিয় মুখ, হারানো অথবা অর্জনের মুহূর্তের স্মৃতি হাতড়ে বেড়ান। দ্বিধা কেন! যদি সম্ভব হয়, একবার কাছে ডাকুন প্রিয় মানুষটিকে, তার কাছে চলে যান। মা, বাবা, স্ত্রী, স্বামী, সন্তান- যদি কেউ দূরে অবস্থান করেন, দ্রুত ছুটি নিয়ে চলে যান তার কাছে। বসে কথা বলুন। বন্ধুদের আড্ডা অনুষ্ঠানে যোগ দিন। সম্ভব হলে বেড়িয়ে আসুন। হারিয়ে যান প্রকৃতির মাঝে। দেখবেন, মনের কষ্ট কখন ভুলে গেছেন। আর আত্মার শান্তির জন্য সবচেয়ে বেশি যা করবেন, তা হলো- ইবাদাত-প্রার্থনা। স্রষ্টার কাছে নিজেকে সমর্পণ। এটুকু নিজ চেষ্টা। এতেও কাজ না হলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। মনের যত্ন নিন, ভালো থাকুন। হেমন্তের দিনগুলো শুভ হউক।
মাসুমা আক্তার
পুলিশ সুপার, ২৫ বিসিএস (পুলিশ)
