দারিদ্র্যের হার ক্রমবর্ধমান

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

গত শুক্রবার পালিত হলো বিশ্ব দারিদ্র্য নিরসন দিবস, যা বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও বৈষম্য দূরীকরণের বার্তা বহন করে। একসময় দারিদ্র্য নিরসনে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল, যার উদযাপন করতে জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টও ঢাকায় এসেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই সাফল্য ম্লান হয়ে গেছে। বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন এ বিষয়ে উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা মহামারি ও অন্যান্য কারণ থাকলেও দারিদ্র্য বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। গত তিন বছর ধরে মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করায় সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে, ক্রয়ক্ষমতা নেমে গেছে নিচে। একদিকে মানুষ কম উপার্জন করছে, অন্যদিকে বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছে। ফলস্বরূপ, দারিদ্র্যসীমার কিছুটা উপরে থাকা পরিবারগুলোও নেমে এসেছে দরিদ্রের কাতারে। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) গবেষণা অনুযায়ী, ২০২২ সালে দারিদ্র্যের হার ১৮.৭ শতাংশ থাকলেও ২০২৫ সালের মে মাসে তা দাঁড়িয়েছে ২৭.৯৩ শতাংশে। অতি দারিদ্র্যের হারও ৫.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯.৩৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকও পূর্বাভাস দিয়েছে, মূল্যস্ফীতির কারণে ২০২৫ সালে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ২১.২ শতাংশে পৌঁছাবে, যা হবে গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বলা বাহুল্য, এ পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। উচ্চ মূল্যস্ফীতি আর কর্মসংস্থানের সংকটে গ্রামের পরিবারের গড় আয় সামান্য বাড়লেও শহরের পরিবারের মাসিক আয় কমেছে। পিপিআরসির তথ্যমতে, একটি পরিবারের গড় সঞ্চয় মাসে মাত্র ৭০ টাকা, যা জীবনধারণের জন্য একেবারেই অপ্রতুল। নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা সংসার চালাতে ধারদেনা করতে বাধ্য হচ্ছে। এর পাশাপাশি আয়বৈষম্যও প্রকট আকার ধারণ করেছে। আমরা মনে করি, দারিদ্র্য নিরসনের দীর্ঘদিনের সাফল্যকে ধরে রাখতে হলে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং কার্যকর সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার করা অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধীরগতি, বিনিয়োগের অভাব ও দারিদ্র্য কমানোর মতো কার্যক্রমের অনুপস্থিতিও বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এমন অবস্থায় সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা ও টাকার অঙ্ক বৃদ্ধি করা, দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো এবং অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি। উচ্চ মূল্যস্ফীতির করাল গ্রাস থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচিয়ে দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।