র‍্যাংকিংয়ের মানোন্নয়নে পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশি পাসপোর্টের অবস্থান এখন বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ের তলানিতে। সম্প্রতি প্রকাশিত আন্তর্জাতিক সূচক এবং ভ্রমণকারীদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের পাসপোর্টের মানের অবনতির বিষয়টি স্পষ্ট। যুক্তরাজ্যভিত্তিক হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের গ্লোবাল সূচকে ১০৬ দেশের মধ্যে আমাদের স্থান ১০০তম, যা এটিকে বিশ্বের সপ্তম দুর্বলতম পাসপোর্ট হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই নিম্ন অবস্থান এবং ভিসা অন অ্যারাইভাল সুবিধার সংকোচন (যা ২০১৮ সালের ৪৩টি গন্তব্য থেকে কমে বর্তমানে ৩৮টিতে দাঁড়িয়েছে) বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও নাগরিকদের ভোগান্তির একটি গুরুতর প্রতিফলন।

এক প্রতিবেদনে বলা হয়, থাইল্যান্ড, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর- এমনকি একসময় সহজলভ্য গন্তব্যগুলোতেও বাংলাদেশিদের ভিসা প্রক্রিয়া এখন দীর্ঘ, জটিল এবং প্রত্যাখ্যাত হওয়ার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে থাইল্যান্ডের ভিসার জন্য সরকারি সময়সীমা ছিল সাত থেকে ১০ কর্মদিবস, সেখানে বর্তমানে সময় লাগছে ৪৫ থেকে ৫০ দিন। অনেক ভ্রমণপিপাসুকেই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে, যা তাদের ব্যক্তিগত ভ্রমণ পরিকল্পনাকে শুধু ব্যাহতই করছে না, বরং হতাশার জন্ম দিচ্ছে। ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায়ীরাও বলছেন, পর্যটননির্ভর দেশগুলোও বাংলাদেশি দর্শনার্থীদের ব্যাপারে কঠোর হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংকটের মূলে রয়েছে বাংলাদেশের নাগরিকদের একটি অংশের বিদেশে গিয়ে আইন-কানুন না মানা, ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে অবস্থান করা এবং বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া। এছাড়া দেশের অর্থনীতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের আস্থার অভাবও এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

পাসপোর্টের এই নিম্নমান নিছক একটি ভ্রমণসংক্রান্ত সমস্যা নয়, এটি দেশের সামগ্রিক ভাবমূর্তি ও বিশ্বস্ততার প্রতীক। এর ফলে শুধু সাধারণ ভ্রমণকারী বা পর্যটকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, বরং ব্যবসা, শিক্ষা এবং জরুরি প্রয়োজনে বিদেশগামীরাও মারাত্মক বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।

এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ হলো- অভ্যন্তরীণ সংস্কার এবং নাগরিকদের আচরণের পরিবর্তন। সরকারকে অবশ্যই কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়ে গন্তব্য দেশগুলোর আস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। একইসঙ্গে দেশের নাগরিকদের বিদেশে আইন-কানুন মেনে চলতে উৎসাহিত করতে হবে এবং অবৈধ অভিবাসন ও ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করার প্রবণতা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা করার দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, বরং প্রত্যেক বাংলাদেশি নাগরিকের। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই পাসপোর্টের হারানো মর্যাদা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন যেমন বলেছেন, ‘আমাদের ঘর গোছাতে হবে।’ সেটিই এখন সময়ের দাবি। অন্যথায় পাসপোর্টের মানের তলানি ছুঁয়ে আমাদের মর্যাদার পতনও থামবে না।