বিআরটি প্রকল্পে বিপুল অপচয়
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
গাজীপুর-বিমানবন্দর সড়কে বাস্তবায়নাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পকে ঘিরে যে বিপর্যয়কর চিত্র সামনে এসেছে, তা শুধু আর্থিক অপচয় নয়, বরং রাষ্ট্রীয় অর্থ ও জনগণের দুর্ভোগ নিয়ে ভয়াবহ উদাসীনতার উদাহরণ। গত রোববার এক খবরে প্রকাশ, গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর সড়কে বাস্তবায়নাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পটি বিশ্বের যে কোনো বিআরটি প্রকল্পের চেয়ে ৬ গুণ বেশি সময় নিয়ে এবং ৪ গুণ অতিরিক্ত খরচ করেও অদ্যাবধি শেষ হয়নি। উল্টো করিডর সিলেকশন ভুল থাকায় গচ্চা দিতে হচ্ছে তিন হাজার কোটি টাকা। যা এর মধ্যেই খরচ হয়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্টরা প্রকল্পটি খতিয়ে দেখে সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, প্রায় এক যুগ ধরে চলমান বিশ্বের দীর্ঘতম এবং সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই প্রকল্প শেষ পর্যন্ত বিশেষায়িত বাস লেনের পরিবর্তে সাধারণ চার লেন সড়ক হিসাবে ব্যবহৃত হবে।
উল্লেখ্য, বিশ্বের অন্যান্য শহরে যেখানে ৯ মাস থেকে সর্বোচ্চ আড়াই বছরের মধ্যে বিআরটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়, সেখানে গাজীপুর-বিমানবন্দর করিডরের ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটারের প্রকল্পটি ১২ বছর পার করেও অসম্পূর্ণ। শুধু তাই নয়, ব্যয় তিন দফা সংশোধন করে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকায় পৌঁছালেও, প্রকল্পটির গোড়াতেই গলদ থাকায় এখন তা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ছিল ভুল করিডর সিলেকশন, কারণ এখানে ৪০ থেকে ৪২টি রুটের যানবাহন চলাচল করে এবং এলাকায় রয়েছে বড় বড় শিল্পকারখানা, যে বাস্তবতা গোড়াতেই সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। ফলে বিআরটি লেন তৈরি হলে যানজট কমবে না, বরং আরও বাড়বে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শকে আমলে না নিয়ে বিগত সরকার যে গায়ের জোরে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, তা বলাইবাহুল্য। দেখা যাচ্ছে, শুধু অর্থের অপচয় নয়, প্রায় একযুগ ধরে তীব্র যানজটে সৃষ্ট জনগণের ভয়াবহ দুর্ভোগ, কর্মঘণ্টা নষ্ট এবং শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার ফলে রাষ্ট্রের প্রকৃত ক্ষতি হতে পারে ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। অনিরাপদ নির্মাণকাজের কারণে প্রাণহানির ঘটনাও সেখানে ঘটেছে, যা ফৌজদারি অপরাধের সমান। আমরা মনে করি, এই বিপুল অর্থ অপচয় এবং দীর্ঘমেয়াদি দুর্ভোগের জন্য দায়ীদের অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
বর্তমান সরকারের যে নতুন সিদ্ধান্ত, অর্থাৎ- প্রকল্পটি সাধারণ সড়ক হিসাবে ব্যবহার করা হবে এবং এর সামগ্রিক মূল্যায়নের জন্য কারিগরি কমিটি গঠন করা হচ্ছে, তা সঠিক পদক্ষেপ। তবে এর চেয়েও জরুরি হলো, যাদের দুর্বল সম্ভাব্যতা যাচাই, গায়ের জোরে প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের ভুলের কারণে রাষ্ট্রের বিপুল সম্পদ অপচয় হলো, তাদের চিহ্নিত করা। শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্ব নয়, সওজের যে আমলা ও বিশেষজ্ঞরা এই ভুলকে সমর্থন দিয়ে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছেন, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। অতীতে এ ধরনের বড় ধরনের অপচয়ের ঘটনার কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির বাংলাদেশে নেই; কিন্তু এই ঘটনাকে উদাহরণ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা ভবিষ্যতের স্বার্থেই জরুরি হয়ে পড়েছে। দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হলে ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় অর্থ নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেলার সাহস কেউ দেখাবে না।
