টেন্ডারে নয়ছয় বন্ধ হোক
প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আমাদের দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় টেন্ডার-সংক্রান্ত অনিয়ম বা নয়ছয়ের ঘটনা হরহামেশা ঘটতে দেখা যায়। হতাশাব্যঞ্জক হলেও নতুন কিছু নয়। তবে গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানের পর আশা জেগেছিল যে, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতির মতো ব্যাধিগুলো এবার ধীরে ধীরে বিতাড়িত হবে। অভ্যুত্থানের বছর পেরিয়ে গেলেও এই অসুস্থচর্চা দূরীভূত হওয়ার যে কোনো লক্ষণ নেই, তা বোঝা যায় এরকমের বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
গত রোববার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য প্রায় ৭৭ কোটি টাকার স্বাস্থ্য সরঞ্জামসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনার লক্ষ্যে একটি টেন্ডার আহ্বানের ক্ষেত্রে শুরুতেই অভিযোগ উঠেছে অনিয়মের। প্রতিবেদন অনুসারে, উল্লিখিত হাসপাতালের জন্য ৭০৩টি স্বাস্থ্য সরঞ্জামসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনার লক্ষ্যে একটি টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে, যার মূল্যায়ন হওয়ার কথা ছিল গতকাল। অবশ্য এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি দরপত্রটি মূল্যায়ন হয়েছে কি না।
জানা যায়, ক্রয়তালিকায় বিভিন্ন শ্রেণির পণ্য একত্রে থাকায় এটি পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ও বিধিমালার পরিপন্থি। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের উদ্যোগ অনৈতিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতেই এমনভাবে কাজটি করা হয়ে থাকতে পারে। তবে অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ নেই। বিষয়টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের দৃষ্টিগোচর করতে গত ২ নভেম্বর একটি চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিটি দেন একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, একাধিক আইটেমে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড ও মডেলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণরূপে পিপিআর-২০২৫-এর পরিপন্থি। এটি যে প্রতিযোগিতাহীন ও একচেটিয়া দরপত্রে পরিণত হয়েছে, নির্দিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্য রয়েছে, সে অভিযোগ তোলা হয়।
মৌলিক চাহিদার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে মানুষকে নির্বিঘ্নে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী বছর পেরিয়েও একটি জনবান্ধব স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। এ ব্যর্থতার পেছনে যেসব কারণ দায়ী, তার অন্যতম হচ্ছে স্বয়ং বিগত দিনগুলোর সব সরকার। আজও স্বাস্থ্যের জন্য জাতীয় বাজেটে যে ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়, তা কোনোভাবেই সামগ্রিকসেবা নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট নয়। সময়োপযোগী তো নয়ই। এত দৈন্যদশার পরও স্বাস্থ্যে যে টাকা বরাদ্দ রাখা হয়, তার ওপর পড়ে অসৎ কর্মকর্তাদের শকুনদৃষ্টি।
এ বরাদ্দ থেকেও নানাভাবে অর্থ তছরুপের ফায়দা খোঁজেন এসব দুর্বৃত্ত। অতীতে এ খাতে দেখা গেছে, একটি বালিশের দাম ২৭ হাজার, কাভার ২৮ হাজার এবং জানালার একটি পর্দার দাম ৩৭ লাখ টাকায় কেনা হয়েছে! পছন্দের ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিয়ে ১ টাকার জিনিস ১০০ টাকা দেখিয়ে তা অনুমোদনের মধ্য দিয়ে চলে এসব দুর্নীতির মচ্ছব। আর জনগণের ঘামের টাকায় বিরাজমান অপ্রতুল সেবাও হয়ে ওঠে আরও ম্রিয়মাণ। এটা অত্যন্ত হতাশার। প্রশ্ন হচ্ছে, এ অবস্থা কি চলতে থাকবে যুগের পর যুগ?
আমরা মনে করি, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টেন্ডার আহ্বান কেন্দ্র করে যে অভিযোগ উঠেছে, তা পুঙ্খানুপুঙ্খ খতিয়ে দেখা অত্যাবশ্যকীয়। পাশাপাশি অভিযোগ সত্য হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। কেননা, দুর্বৃত্তের শাস্তির দৃষ্টান্ত নিশ্চিত করতে পারলে, এ প্রবণতা কমানো যাবে বলে ধারণা করি। এ ছাড়া আগামীতে যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন, তাদের উচিত হবে, একটি জনবান্ধব স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে আন্তরিক হওয়া।
