প্রকৃতিতে শীতের আমেজ
সাফিয়া ইসলাম দিশা
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নভেম্বরের অর্ধেক পেরিয়ে প্রকৃতিতে এখন একটু একটু করে রাজত্ব করতে শুরু করেছে শীতকাল। সকালের ঠান্ডা আবহাওয়ার পরক্ষণের মিষ্টি রোদ মানব মনকে করছে সজীব ও প্রাণবন্ত। দিনের রৌদ্রতাপের পর বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেই মৃদু হিমেল হাওয়া জানান দিচ্ছে শীত এসে গেছে। পাতা ঝরে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা গাছের সারি কিংবা সকালে সবুজ ঘাসে ছড়িয়ে পড়ে থাকা শিউলি ফুল বলছে শীত এসে গেছে। আর হাড় কাঁপানো শীতের অপেক্ষায় রয়েছে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। দুই মাসের এই অতি স্বল্পকালের শীতকাল নিয়ে প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে জেগে উঠে সুখ-দুঃখের নানা কৌতূহল। এক দিকে উদযাপিত হয় আনন্দের নবান্ন উৎসব অন্যদিকে কপালে দুঃখের ভাঁজ পড়ে শীতার্ত মানুষের।
শীতকালের রয়েছে এক ভিন্ন আমেজ- প্রকৃতি যেমন ছবির চেয়ে সুন্দর করে নিজেকে সাজায় তেমনই দেশের মানুষের সাংস্কৃতিক জীবন পরিণত হয় এক উৎসবে। অগ্রহায়ণের নতুন ধান ঘরে উঠার পর সবার মনে থাকে খুশির আমেজ। কৃষক যেমন নতুন ধান ঘরে তুলতে পেরে আনন্দিত হন তেমনই ব্যবসায়ীরাও ধান ক্রয়-বিক্রয় করে লাভবান হওয়ার ফলে তাদের মধ্যেও আনন্দ বিরাজ করে। নতুন ধান নিয়ে আসে বাঙালির ঘরে পিঠাপুলির উৎসব। সবাই মিলে মেতে উঠে পিঠাপুলি খাওয়াতে। গ্রামে সকাল সন্ধ্যা বাড়িতে বাড়িতে পিঠাপুলির বানানোর ধুম পড়ে যায়। আর শহরের ব্যস্ত রাস্তার ধারে কিংবা মেলায় দেখা মেলে পিঠাপুলির। পিঠাপুলির ভাগ থেকে বঞ্চিত হন না কেউই। নতুন চালের গুড়ো আর খেজুরের গুড় দিয়ে বানানো হয় হরেক রকমের পিঠাপুলি। পিঠাপুলি খাওয়ার ঐতিহ্য বাঙালির প্রাচীন কাল থেকেই। বলা হয়ে থাকে, দেশের পশ্চিমের জনপদে অনেক গুড় উৎপাদন হতো, তাই এই জনপদের নাম হয় ‘গৌড়’। প্রতিবছর মহা ধুমধামে দেশের সর্বত্র পালিত হয় নবান্ন উৎসব। পিঠাপুলির সুবাস শীতের আবহাওয়াকে আরও মিষ্টি করে তোলে। শীতের আমেজকে আরও বাড়িয়ে তোলার জন্য রয়েছে শীতের সকালের মিষ্টি খেজুরের রস।
কিন্তু শীতের এ সব আয়োজন ব্যস্ততম শহরে কোথায়? শহরবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে শীতকালের জন্য কিন্তু শীত যেন ধরা দিয়েও ধরা দেয় না। শহরের কোলাহল, যানজট এবং বায়ু দূষণের ফলে শীতকাল যেন শহরের মধ্যে প্রবেশই করতে পারে না। শীত অনুভব হয় শুধু সকাল ও বিকালে। একটা হালকা শীতের পোশাক পরলেই শহরের মানুষের শীতকাল দিব্যি পার হয়ে যায়।
সকালে দেখা মেলে শীতের পোশাক পড়ে ছুটে চলা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, কর্মজীবী, শ্রমিক ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষদের। তারা শীতের প্রতিকূলতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ছুটে চলে তাদের স্বপ্ন-দায়িত্বের দিকে। ঘন কুয়াশায় ছেয়ে যায় সবজায়গা। কুয়াশায় কিছু দেখতে পাওয়া ভার। তাই হরহামেশাই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। যার ফলে অকালে ঝড়ে যাচ্ছে অনেক প্রাণ। শীত সকলের জন্য মিষ্টতা নিয়ে আসে না, ছিন্নমূল মানুষ অভাবগ্রস্থরা শীতে অত্যন্ত কষ্ট পান। তাদের নেই কোনো ভালো শীতের পোশাক, নেই কোনো থাকার জায়গা। তারা ছেঁড়া ফাটা কাপড়ে ফুটপাতের মেঝেতে জীবন কাটাচ্ছেন। প্রশাসন, অনেক সংগঠন, বিত্তশালী বা অনেকে নিজ উদ্যোগে এ সব ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়ায় কিন্তু এ সব অসহায় মানুষের কম নয়। ফলে দেশের অর্থনীতি বিচারে সবার সাহায্য করা সম্ভবপর হয়ে উঠছে না। শীত যখন তার বিরূপ প্রভাব দেখায় বয়ে চলে শৈত্যপ্রবাহ তখন শিশু, বৃদ্ধ এবং অভাবগ্রস্থদের কষ্টের সীমা থাকে না। দেখা দেয় শীত জনিত অনেক রোগ। শীতে সবার শরীরের যত্ন প্রয়োজন। শীতের এই উৎসবকে সবার জন্য সহজ করতে হবে। সাহায্য-সহযোগিতা ও সম্প্রীতির মাধ্যমে শীতকালকে উপভোগ করতে হবে। শীতকাল সবার জন্য উপভোগ্য হোক।
সাফিয়া ইসলাম দিশা
ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
