মিথ্যা তথ্যের জালে আটকা মানুষ
ফারিহা জামান নাবিলা
প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আজকের পৃথিবীতে আমরা সবাই যেন এক বিশাল বাজারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি আর চারপাশে অসংখ্য মানুষ নানা কথা চিৎকার করে বলে যাচ্ছে। দূর থেকে সব কথাই সত্যি শোনায় সব ঘোষণাই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। কিন্তু একটু কাছে গেলেই বোঝা যায় অনেক কথাই ভুল, অনেক কথায় ভুয়া। সোশ্যাল মিডিয়াও ঠিক এমনই একটি বাজার যেখানে সত্য আর মিথ্যার আওয়াজ একসঙ্গে মিশে যায়। আর মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে কোনটা বিশ্বাস করবে, কোনটা নয়। ভুল কথা যেমন মানুষকে ভুল পথে নেয়, তেমনি ভুয়া তথ্য আমাদের মনকে নাড়িয়ে দেয়, কখনও ভয়, কখনও রাগ, কখনও আবার হতাশা তৈরি করে। এভাবেই অদৃশ্যভাবে আমাদের আবেগ, চিন্তা ও সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে এই মিথ্যা তথ্যের স্রোত। ডিজিটাল যুগে মানুষ তথ্যের ওপর আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি নির্ভরশীল। সকালবেলার ঘুম ভাঙা থেকে রাতের ঘুমানো পর্যন্ত, প্রতিটি মুহূর্তই সোশ্যাল মিডিয়ায় সংযুক্ত। খবর, মতামত, বিনোদন সব যেন হাতের মুঠোয়। কিন্তু এই সুবিধার পাশাপাশি তৈরি হয়েছে ভয়াবহ এক সমস্যা ভুয়া তথ্য বা ফেক নিউজ। এগুলো শুধু ভুল তথ্যই ছড়ায় না, মানুষের মনেও তৈরি করে ভয়, বিভ্রান্তি, রাগ, হতাশা ও ভুল বিশ্বাস। ফলে সমাজে বাড়ছে বিভক্তি, অবিশ্বাস এবং মানসিক অস্থিরতা।
ভুয়া তথ্য সত্য তথ্যের তুলনায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কারণ মিথ্যে তথ্য সাধারণত বেশি চমকপ্রদ, উত্তেজনাময় বা আবেগনির্ভর হয়। বাংলাদেশেও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের বড় একটি অংশ কোনো তথ্য যাচাই না করেই শেয়ার করে থাকে। ব্যবহারকারীদের ৬০ শতাংশ কোনো খবরের উৎস যাচাই করেন না। ৪০ শতাংশ মানুষ আবেগের বশে ভুল তথ্য বিশ্বাস করেন এবং ৩০ শতাংশ ব্যবহারকারী ভুল তথ্যের কারণে উদ্বেগ বা রাগ অনুভব করেন। ভুয়া তথ্য এখন শুধু প্রযুক্তিগত সমস্যা নয়, বরং একটি মানসিক ও সামাজিক সংকট। ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। তথ্য যাচাইয়ের অভ্যাসের অভাব। দ্রুত শেয়ার করার প্রবণতা মানুষকে ভাবার সময় দেয় না। প্ল্যাটফর্মগুলো এমন কনটেন্ট দেখায়, যা ব্যবহারকারীর আবেগকে উত্তেজিত করে, ফলে মিথ্যে তথ্য দ্রুত ছড়ায়। কম ডিজিটাল শিক্ষাজ্ঞান। অনেকেই বোঝেন না কোনো উৎস বিশ্বাসযোগ্য আর কোনোটি নয়।
