ঢাকায় বিস্তৃত বিপর্যয়ের আশঙ্কা, ন্যূনতম প্রস্তুতিও নেই
প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকায় ভূমিকম্পের আশঙ্কার কথা বেশ কয়েক বছর ধরে আলোচনায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এর বিপর্যয় এবং তা থেকে রক্ষা পাওয়ার বিষয় নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন।
সরকারি-বেসরকারি সংস্থা সতর্কতা ও উদ্বেগ দেখিয়ে কিছু করণীয় নির্ধারণ করে। কাজের কাজ তেমন কিছু হয় না। ঢাকা শহরের বিশাল আয়তন, তার চেয়েও বেশি এর জনসংখ্যা। বেশিরভাগ স্থাপনা নিয়ম মেনে বানানো হয়নি, আছে বিপুলসংখ্যক মেয়াদোত্তীর্ণ পুরোনো স্থাপনা। এ অবস্থায় একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে ক্ষতি হবে কল্পনাতীত। আমাদের ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা এর তুলনায় এত অপ্রতুল যে, কিছু করতে পারবে না।
রাজধানীর পাশের নরসিংদীতে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প রাজধানীবাসীকে যেন একটি সতর্কবাণী দিয়ে গেল। এর মধ্যে শহরের বহুসংখ্যক ভবনে ফাটল ধরেছে। কম্পন কিছুটা তীব্র হলেও এর স্থায়িত্ব ছিল মাত্র কয়েক সেকেন্ড।
এই মাত্রার কম্পন আরেকটু সময় স্থায়ী হলে ঢাকার পরিস্থিতি যে ভয়াবহ হতো; তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এরইমধ্যে বিশেষজ্ঞরা এ অঞ্চলে বড় মাত্রার ভূমিকম্পের আভাস দিচ্ছেন।
রাজধানীতে ২১ লাখের বেশি ভবন আছে। তার মধ্যে ৪০ শতাংশ অর্থাৎ- আট লাখের বেশি ৭ মাত্রার ভূকম্পনে ধসে পড়তে পারে। এ দিকে ঢাকায় ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন আছে ১৮টি। মোট জনবল ৬৫০ জন। একসঙ্গে সর্বোচ্চ ২৫টি ভবনে অভিযান চালাতে পারে সংস্থাটি। বিপদের মাত্রা আর আমাদের প্রস্তুতি এ থেকে ভালোভাবে বোঝা যায়। এর ওপর এ শহরের বিদ্যুৎ, পনি ও গ্যাসলাইনের ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত দুর্বল। আমরা মূলত একটি বারুদের স্তূপে বসবাস করছি। যেভাবে ভূমিকম্পের আশঙ্কা করা হচ্ছে; তা সংঘটিত হলে কিছু করার থাকবে না। অন্তত অমাদের নিজেদের কাছে এ দুর্যোগ মোকাবিলার ন্যূনতম প্রস্তুতি নেই।
প্রকৃতিকে কখনও নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। মানুষ চাইলে তার পরিণতি কিছু প্রভাবিত করতে পারে। বিগত কয়েক দশকে যেভাবে মানুষ ঢাকায় বসতি গড়ে তুলেছেন; তা বল্গাহীন। মানুষ যেমন তার পরিণতির কথা ভাবেননি, একইভাবে নগর কর্তৃপক্ষও চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। রাস্তাঘাটের স্বল্পতায় দুর্যোগকবলিত বেশির ভাগ ভবনে জরুরি সাহায্য পৌঁছানোর ব্যবস্থাও নেই।
এ অবস্থায় স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ ধরনের বিপর্যয় মোকাবেলায় নাগরিকদের প্রস্তুত করা যেত। ঢাকায় কয়েক লাখ স্বেচ্ছাসেবক থাকলে অন্তত তারা বড় বিপর্যয়ে কিছুটা হলেও দুর্যোগকবলিত মানুষের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসতে পারতেন। ৬২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণের একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ঢাকায়। সেই উদ্যোগও বাস্তবায়ন হয়নি। তাই উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকাবাসীকে বাঁচানোর কোনো কার্যকর উদ্যোগ থাকবে না।
আমাদের মধ্যে অসচেতনতাণ্ডউদাসীনতা বড় চারিত্রিক দুর্বলতা। সরকার ও কর্তৃপক্ষের বৈশিষ্ট্য এর চেয়ে অভিন্ন কিছু নয়। গত শুক্রবার সকালে ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনির পর আরো তিনটি ভূমিকম্পে সবাই নড়েচড়ে বসেছেন। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের বিষয় জোর দিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এর আগেও বেশ কয়েকবার এমন সচেতনতা দেখা গিয়েছিল। এবারো অচিরে আমরা যদি কোনো বড় বিপদগ্রস্ত না হই, তাহলে এ সংক্রান্ত আলোচনা আবার হারিয়ে যাবে।
