নৈতিকতা ও মূল্যবোধ ক্রমশ বিলীনের পথে
মো. শরিফুল ইসলাম, শিক্ষক, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

নৈতিকতা ও মূল্যবোধ- এই শব্দ দুটোর বাস্তব অনুশীলন বেশ গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য। হোক সেটা ব্যক্তিজীবন, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। সাধারণত নৈতিকতার মূলভিত্তি হলো সততা, নিষ্ঠা, কর্তব্যবোধ এবং আদর্শিক বিশ্বাস ছাড়া মূল্যবোধের সংজ্ঞায়ন প্রায় অসম্পন্ন। এমনকি নৈতিক মূল্যবোধ ছাড়া মানসিক প্রশান্তি ও প্রচলিত সফলতা খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এ ছাড়া ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি ধাপে নৈতিকতা ও অনৈতিক মানসিকতার পরিষ্কার পার্থক্য দৃশ্যমান। যেমন- ব্যক্তিগত জীবনে যারা উন্নত নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন তাদের আত্মতৃপ্তি ও আত্মপরিচয় অন্যদের থেকে আলাদা। এমন মানুষদের মানসিক প্রশান্তি ও অন্তরের সজীবতা থাকে আকাশচুম্বী যেটা অনেকের হিংসার কারণ হতে পারে। যদিও বর্তমান দুনিয়ায় সফলতার মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হয় কার কত বেশি ধন-সম্পদ, ক্ষমতা ও খ্যাতি রয়েছে! সেগুলোর পেছনে ছুটতে গিয়ে কেউ কেউ বিবেক বিবর্জিত অনৈতিক পন্থা তথা প্রতারণা, ছল-চাতুরি ও অসত্যের আশ্রয় নিয়ে থাকেন। নিজের অজান্তে প্রবীণদের রেখে যাওয়া সুন্দর সমাজব্যবস্থায় বিষাক্ত পরিবেশ তৈরি করছেন। সমাজের অপরাপর মানুষদের প্রতি হিংসা-প্রতিহিংসার বীজ রোপণ হচ্ছে। আবার এসব ঘৃণিত কাজকে স্বজ্ঞানে ও বীরদর্পে নিজেদের অর্জন বা তথাকথিত কৌশল বলে প্রচার করেন। সমাজের একটি অংশের কাছে এসব কাজে পারদর্শীদের কদরও অন্যরকম। দুঃখজনক হলো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহল থেকে শুরু করে খুচরা ব্যবসায়ী কিংবা ব্যক্তিজীবনে এমন বিষফোঁড়া তড়িৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকের উপলব্ধিটাই নেই যে, তারা কতোটা নৈতিক অবক্ষয়ে নিমজ্জিত। আধুনিক সমাজব্যবস্থার বিকাশ ও প্রসারে যেটা অন্তরায় এবং উদ্বেগজনক।
উদাহরণস¦রূপ, রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ দেশের বিভিন্ন কাঁচাবাজারে সবজি ব্যবসায়ীদের একটি অংশ অভিনব অপকৌশল বা প্রতারণার আশ্রয় নেন। সাধারণ ক্রেতাকে ভালো মানের টাটকা ফল-সবজি দেখিয়ে কৌশলে কিছু খারাপ সবজিও ব্যাগে তোলে দেন। অনেক ক্রেতা যাচাই-বাচাই করে ভালো জিনিসগুলো ব্যাগভর্তি করার চেষ্টা করেন, কিন্তু বাসায় গিয়ে ব্যাগ খুলে কোত্থেকে যেন কিছু পচা বা অর্ধ-পচা সবজি আবিষ্কার করেন। এই যে অসাধু বিক্রেতারা এভাবে ক্রেতার চোখ ফাঁকি দিয়ে সত্য গোপন করে খারাপ জিনিসগুলো বিক্রি করছেন। তাও আবার ভালো জিনিসগুলোর মতো সমান দামে! উদ্বেগের বিষয় হলো, এমন চালাকিতে তারা তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন এবং নিজেদের অপকর্মকে অন্যায় কাজ মনে করছেন না। মূলত এই বোধশক্তির অভাবই সমাজের সামগ্রিক নৈতিক পরিবেশকে নষ্ট করছে। এমনকি ঢাকার গুলিস্তানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু পোশাক বিক্রেতারাও বেশ অপকৌশলী হোন। শুরুতে পণ্যের অস্বাভাবিক দাম চেয়ে ক্রেতাদের বিভ্রান্ত করেন। তারা ক্রেতাদের ‘মানে কম দামে বেশি’ এই নীতিতে ঠকিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করাটাকে শিল্প মনে করেন। যদিও সততা বা নৈতিকতার ধার-ধারেন না।
