প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫
শিশুদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্যারেন্টিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একজন শিশুর শৈশবের শিখন পদ্ধতি তার সমগ্র জীবনব্যাপী প্রভাব ফেলে। একজন শিশুর শৈশব এর শিখন দ্বারা তার ভবিষ্যৎ গঠিত হয়। শৈশবে শিশু যে অভ্যাসগুলো লালন করে বড় হয়ে দেখা যায় সে তাই অনুশীলন করে এবং অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। এই যে চোখের সামনে একজন শিশু কত দ্রুতই না বেড়ে ওঠে অর্থাৎ কত শীঘ্রই তার শৈশব ঘনিয়ে যায়। কিন্তু এই শৈশব এর প্রতিটা দিন যেন সোনালী সময়। এই সময় যত সুচারুভাবে অভিভাবকরা শিশুদের তৈরি করতে পারবেন তত সুন্দরভাবে শিশুর ব্যক্তিত্ব গড়ে ঔঠবে। কিছু ধাপ অনুসরণ করে সন্তানের সঠিক বেড়ে ঔঠা নিশ্চিত করা সম্ভব।
শিশুর আবেগ বুঝে প্যারেন্টিং : কিছু কিছু সময় সন্তানরা কোন জিনিস এর জন্য প্রচণ্ড জেদ করে যেন সে কোন উপদেশই শুনবে না। আবার, কিছু সময় সন্তানদের অভিভাবকদের প্রতি রাগ হয় কিংবা কখনো তাদের মন খারাপ হয় সেক্ষেত্রে সন্তানের মনের অবস্থার এই পরিবর্তনকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে তাকে তার মতো করে বুঝতে হবে। তাকে বুঝাতে হবে কখনো গল্পের ছলে কিংবা জীবনের বাস্তব ঘটনা থেকে।
বিকল্প অপশন দেখানো : শিশু যখনই নানা আবদার নিয়ে অভিভাবকদের কাছে আসেন অনেক সময় দেখা যায় অভিভাবকরা এক বাক্যে না করে দেন। এরূপ আচরণ শিশুর মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যার ফলে শিশু অপরাধের পথ বেছে নেয়। সেক্ষেত্রে শিশুকে না বলার ক্ষেত্রে বিকল্প অপশন দেখানো যেতে পারে। তাকে তার পছন্দের কাজ করার নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া যেতে পারে কিংবা তাকে অন্য পছন্দের কাজ করার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। অভিভাবকদের এরূপ প্রতিক্রিয়া শিশুদের মনে বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জন্ম নিবে। সে তখন অভিভাবকদের প্রতি ভুল ধারণা নিয়ে বেড়ে ওঠবে না।
ভালো কাজের প্রশংসা করা : শিশুদের ছোট থেকেই ভালো কাজ করতে যেমন উৎসাহিত করতে হবে তেমনি যেকোনো ভালো কাজের প্রশংসা করতে হবে। শিশুরা প্রশংসা শুনতে ভালোবাসে। তাদের যেকোনো ভালো আচরণ এর জন্য পুরস্কিত করা যায়। তাদের বুঝাতে হবে যে, যেকোনো খারাপ কাজ যত ছোটই হোক না কেন তা যেমন গর্হিত কাজ ঠিক তেমনি যেকোনো ভালো কাজ তা যত ছোটই হোকনা কেন তা পরকালের পার্থেয়।
শিশুর বন্ধু হওয়া : শিশুদের সঠিক প্যারেন্টি এর জন্য বাবা-মায়ের তাদের ভালো বন্ধ হওয়া উচিত যেন শিশু অপরাধ করলেও তা নির্ভয়ে বাবা-মাকে বলতে পারে। সন্তানের মানসিক পরিস্থিতি বুঝে বাবা-মায়ের তাকে ন্যায়-অন্যায়, ভালো-খারাপ এর গাইডলাইন দিতে হবে। তাকে শিখাতে হবে কীভাবে আমরা আমাদের ভালো লাগা ও খারাপ লাগাগুলো প্রকাশ করতে পারি। শিশুর সাথে যেকোনো ভুল আচরণে ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে তাকে ভুল শিকার করার শিক্ষা দিতে হবে সেই সাথে শিশুকে সহনশীল করে গড়ে তুলতে হবে।
ডিভাইস থেকে দূরে রাখা : আজকাল অনেক সন্তান দেরীতে কথা বলা শিখে এবং মানুষের সাথে মিশতে চাই না যার পেছনে ইন্ধন দেয় যান্ত্রিক ডিভাইস। আহার করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজেও দেখা যাচ্ছে শিশুকে মোবাইল থেকে বিরত রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে শিশু ধীরে ধীরে ছোট বয়সেই যন্ত্র নির্ভর হয়ে যায়। তাই শিশুকে বিনোদন হিসেবেও মোবাইল দেখা থেকে বিরত রাখতে হবে। তাকে আকর্ষণীয় বই বা খেলনা দেওয়া যেতে পারে যার মাধ্যমে শিশুর মেধার বিকাশ ঘটে। তাছাড়া, ঘরের টুকটাক কাজে শিশুদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে ছোট থেকেই শিশুকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে হবে।
নেতিবাচক আচরণ পরিহার : শিশুরা অনুকরণ প্রিয়। তাই, শিশুদের সামনে অশালীন আচরণ পরিহার করতে হবে। অযথা ঝগড়া-বিবাদ, মিথ্যা, গীবত এবং হিংসা বিদ্দেষ থেকে বিরত থাকতে হবে। শিশুদের সদাচারের শিক্ষা দিতে হবে। তাদের ছোট থেকেই পরোপকারের শিক্ষা দিতে হবে। ছোটদের সামনে কাউকে তিরস্কার করে কথা বলা পরিহার করতে হবে। ছোটদের স্নেহ ও বড়দের সম্মান করার শিক্ষা দিতে হবে।
শাসনের পদ্ধতি : শিশুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে গুরুতর আহত করে শাসন করা পরিহার করতে হবে। এরূপ শাসনে শিশু শরীরের ক্ষত সারলেও মনের ক্ষত রয়ে যায়। অযথা শিশুর উপর উচ্চ বাচ্য করা এবং অন্যের সাথে তুলনা করে শিশুকে ছোট করা পরিহার করতে হবে। এরমানে এই নয় যে শাসন করা যাবে। অবশ্যই শাসন করতে হবে পরিস্থিতি বুঝে যাতে শিশুর মনে নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে। এমন শাসন করা যাবে না যাতে শিশুর ভালো করতে গিয়ে খারাপ হয়। প্রয়োজনে লঘু শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। অযথা ভয় দেখানো পরিহার করতে হবে।
সবশেষে বলতে চাই, শিশুরা হলো কাঁদামাটি ন্যায়। শৈশবে যেরূপ আকৃতি দেওয়া হয় তারা সেরূপই গঠিত হয়। তাই, শৈশবের সঠিক শিখন পদ্ধতিই সন্তানকে আর্দশ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলে। ছোট থেকেই ভালো আচরণের বীজ সন্তানদের মাঝে বপন করতে হবে। গল্পের ছলে কিংবা কোন ঘটনা থেকে শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করে নীতি নৈতিকতার সাথে ছোট থেকেই শিশুদের পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। শিশুকে ছোট থেকেই সৎ ও পরোপকারী মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে। শিশুরা সুদ্বাচারকে লালন করে বেড়ে ওঠুক নিরাপদ ও সতেজ পরিবেশে।
তৈয়বা খানম
শিক্ষার্থী, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম