অটোরিকশা যেন বিষফোড়া

আল শাহারিয়া

প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রাস্তায় বের হলে এখন চারিদিকে শুধু অটোরিকশার মেলা। শহরের গলি থেকে রাজপথ সবখানেই এদের অবাধ বিচরণ। আগে রিকশার টুং টাং শব্দ ছিল। এখন আছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার যান্ত্রিক আওয়াজ। এটি এখন আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ একে বলছেন সড়কের বিষফোড়া।

বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এই বাহনটি এক অদ্ভুত সংযোজন। এর কোনো ফিটনেস সনদ নেই, চালকের কোনো প্রশিক্ষণ নেই, ট্রাফিক আইনের কোনো বালাই নেই। আবার হুট করে ব্রেক কষে, ডানে বা বামে মোড় নেয় কোনো সংকেত ছাড়াই। পেছনের গাড়িটি তখন বিপদে পড়ে। দুর্ঘটনার শিকার হয় সাধারণ মানুষ। হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগে খোঁজ নিলে দেখা যায় অধিকাংশ দুর্ঘটনাই অটোরিকশার কারণে ঘটেছে। এদের চাকা ছোট কিন্তু গতি বেশি। ফলে সামান্য ধাক্কাতেই উল্টে যায়। যাত্রীরা গুরুতর আহত হন। পঙ্গুত্ব বরণ করেন অনেকে।

শহরের যানজটের প্রধান কারণ এখন এই অটোরিকশা। একটি বাসের জায়গায় তিনটি অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থাকে। এরা নির্দিষ্ট কোনো লেনে চলে না। পুরো রাস্তা দখল করে রাখে। ট্রাফিক পুলিশ হিমশিম খায় এদের সামলাতে। অবৈধভাবে অলিগলি দিয়ে এরা প্রধান সড়কে উঠে আসে। ফলে দ্রুতগতির যানবাহনের গতি কমে যায়। নষ্ট হয় হাজার হাজার কর্মঘণ্টা। শিক্ষার্থীরা সময়মতো ক্লাসে পৌঁছাতে পারে না, অ্যাম্বুলেন্স আটকা পড়ে থাকে জ্যামে।

বিদ্যুৎ খাতের ওপরও এটি বিশাল চাপ সৃষ্টি করছে। দেশে যখন বিদ্যুতের ঘাটতি তখন লাখ লাখ অটোরিকশা চার্জ দেওয়া হচ্ছে। এর অধিকাংশই অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করে। অনেক অসাধু গ্যারেজ মালিকেরা বিদ্যুৎ চুরি করে ব্যাটারি চার্জ দেয়। এতে সরকার রাজস্ব হারায়। অন্যদিকে লোডশেডিং বাড়ে। পরিবেশের জন্যও এটি ক্ষতিকর। এই বাহনে ব্যবহৃত লেড-এসিড ব্যাটারি স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। নির্দিষ্ট সময় পর এই ব্যাটারিগুলো যত্রতত্র ফেলা হয় ফলে এসিড মাটি ও পানিতে মিশে কৃষি জমি নষ্ট করে, জলাশয়ের মাছ মেরে ফেলে।

অনেকে বলেন হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এই বাহনের মাধ্যমে। কিন্তু জীবনের চেয়ে জীবিকা বড় হতে পারে না। কর্মসংস্থানের নামে সড়কে মৃত্যুফাঁদ তৈরি করা কোনো যুক্তি হতে পারে না। বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। আধুনিক ও নিরাপদ গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান চালায়। দু-একদিন রাস্তা ফাঁকা থাকে, এরপর আবার আগের চিত্র। এই ইঁদুর-বিড়াল খেলা বন্ধ হওয়া দরকার। একটি টেকসই নীতিমালা প্রয়োজন। অটোরিকশার আমদানি বন্ধ করে ব্যাটারির কারখানাগুলোতে নজরদারি বাড়াতে হবে। হাইওয়ে বা প্রধান সড়কে এদের চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। স্থানীয় সরকার ও ট্রাফিক বিভাগকে কঠোর হতে হবে। উন্নত দেশ গড়ার স্বপ্ন আমরা দেখি। অথচ আমাদের সড়কগুলো মধ্যযুগীয় বাহনে পূর্ণ। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে স্মার্ট যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রয়োজন। সুস্থ ও নিরাপদ শহরের স্বার্থে এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়।

আল শাহারিয়া

শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়