অল্প সময়ের মধ্যে কোথায় কী ঘটছে তা পৃথিবীবাসীর কাছে তুলে ধরে গণমাধ্যম। তাই বলা যায়, সারা বিশ্বের আনাচে-কানাচের খবরাখবর নিমিষেই পেয়ে থাকি আমরা গণমাধ্যমের কল্যাণে। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি যে কোনো দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা যেমন হোক না কেন, তার সঙ্গে গণমাধ্যম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কোনো দেশের কল্যাণ-অকল্যাণ দুটো দিকই গণমাধ্যমে উঠে আসে। গণমাধ্যম এমন একটি মাধ্যম, যেখানে কর্মরত ব্যক্তিরা চাইলে নিমিষেই একটি দেশের উন্নয়নের চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারে, আবার চাইলেই দেশকে উন্নয়নের দিকে কয়েক ধাপ এগিয়ে দিতে পারে। প্রতিটি মানুষ দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সারাবিশ্বে কী কী ঘটছে, তা দেখার জন্য গণমাধ্যমে চোখ বুলিয়ে নেয়। সেই চোখ বুলিয়ে নেওয়ার মধ্যে কেউ বা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আবার কেউ ডুব দেয় অস্বস্তির রাজ্যে। এ গণমাধ্যম হয়ে উঠে কারও জন্য কল্যাণকর, আবার কারও জন্য বয়ে আনে অকল্যাণের সুর। রোজ গণমাধ্যমে উঠে আসে নানা ধরনের ঘটনা। হত্যা, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, দুর্ঘটনা এরকম বিভিন্ন ঘটনার ছড়াছড়ি গণমাধ্যমে। আবার রয়েছে বিনোদন, খেলাধুলা সংশ্লিষ্ট খবরও। কিন্তু উদ্বেগের বিষয়, বর্তমানে কোনো কোনো গণমাধ্যম ও অনলাইনে হলুদ সাংবাদিকতার দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে।
যে গণমাধ্যমকে মানুষ সত্যের অনুসারী হিসেবে জেনে আসছে, তাতে আজকে হলুদ সাংবাদিকতার ছড়াছড়ি, তা কোনোভাবেই মানা যায় না। হলুদ সাংবাদিকতার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, কীভাবে তারা তাদের TRP বাড়িয়ে অন্য গণমাধ্যম থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকবে। ফলে তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভিত্তিহীন, দৃষ্টি আকর্ষণকারী, রোমাঞ্চকর শিরোনাম ব্যবহার করে সংবাদ প্রকাশ করে, যা পড়ে কোনো পাঠক উপকৃত না হয়ে বরং হতাশ হয়। এসব সাংবাদিকতার নীতি বিবর্জিত কর্মকা-। জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টিকারী রংচং করে সংবাদ উপস্থাপন কখনও কাম্য নয়। শুধু পাঠক বাড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়ে সংবাদ প্রচার করা কখনও মঙ্গলজনক নয়। বর্তমানে এমন কিছু গণমাধ্যম রয়েছে যেগুলোতে শিরোনামগুলো এতটাই চমকপ্রদ হয় যে, পাঠক সেই সংবাদ পাঠ করে অধীর আগ্রহে; কিন্তু শেষে দেখা যায় শিরোনমের সঙ্গে মূল সংবাদের কোনো মিল নেই। ফলে পাঠক সেই গণমাধ্যম বয়কট করতে বাধ্য হয়।
এমন অনেক শিরোনাম ব্যবহৃত হয়, যা থেকে কোনো না কোনো গুজব ছড়িয়ে পড়ে এবং সমাজে অস্থিরতা দেখা দেয়।
উল্লেখ্য, সাংবাদিকতা কোনো সাধারণ পেশা নয়। এটি এমন একটি পেশা যা প্রশংসার দাবিদার। যেটিকে মহান পেশা হিসেবে ধরা হয়। একজন সাংবাদিক যে কোনো সময় যে কোনো পরিস্থিতিতে সংবাদ সংগ্রহ এবং তা অনেক সুন্দর ও সাবলীলভাবে উপস্থাপন করেন। কিন্তু এমন কিছু সাংবাদিক রয়েছেন, যারা কোনো কোনো সংবাদকে অতিরঞ্জিত করার কারণে কেলেঙ্কারির সৃষ্টি হয়। এর ফলে এই মহান পেশাকেই অবমাননা করা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে কিছু মানুষ ভুয়া তথ্য জনসম্মুখে উপস্থাপন করে নিজেদের সাংবাদিক দাবি করে। প্রকৃতপক্ষে তারা ভুয়া সাংবাদিক। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য নিয়ে তারা অরাজকতার আশ্রয় নেয়। ফলে সংবাদমাধ্যমের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলছে জনগণ। সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করাই হলো প্রত্যেকটা সাংবাদিকের কাজ। কিন্তু বর্তমানে হলুদ সাংবাদিকের দৌরাত্ম্যের কারণে তাদের কা-জ্ঞানহীন কাজের জন্য মানুষ গণমাধ্যমের ওপর থেকে বিশ্বাস ও আস্থা হারিয়ে ফেলছে। দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য এ হলুদ সাংবাদিকতাকে রুখে দিতে হবে। তার পাশাপাশি প্রতিটা সাংবাদিককে তাদের দায়িত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে কোনো ধরনের ভিত্তিহীন, অরাজকতা সৃষ্টিকারী সংবাদ প্রকাশ না করে বরং সমাজে গঠিত সত্য ঘটনা প্রচার করতে হবে।
ষ শিক্ষার্থী
ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ
চট্টগ্রাম
rahi98056@gmail.com