তরুণ প্রজন্মই আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। সমৃদ্ধ দেশ গড়ার নেতৃত্ব এদের মধ্যে থেকেই সৃষ্টি হবে। তাই কোনো কারণে তরুণ সমাজ বিপথগামী হলে তা দেশ ও জাতির জন্য আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের তরুণ সমাজের বড় একটি অংশ সম্ভবত সঠিক পথের দিশারি হতে পারছে না। বিভিন্ন সামাজিক ক্ষত এবং প্রযুক্তির অযথার্থ ব্যবহার তাদের ভবিষ্যৎকে করছে শঙ্কাগ্রস্ত। দেখা যাচ্ছে, নতুন প্রজন্ম বুঁদ হয়ে থাকে নানা ধরনের প্রযুক্তি খেলায়। তারই একটি হচ্ছে টিকটক ও লাইকি। এটি হয়ে উঠেছে তরুণ প্রজন্মের সময় কাটানোর অন্যতম মাধ্যম। এর মাধ্যমে অনেক কিশোর-তরুণ উদ্ভট রঙে চুল রাঙিয়ে এবং ভিনদেশি অপসংস্কৃতি অনুসরণ করে ভিডিও তৈরি করছে, যাতে সহিংস ও কুরুচিপূর্ণ কনটেন্ট থাকে। স্বভাবতই দেশের বিশিষ্টজন এবং অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের এমন আসক্তিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, টিকটক-লাইকি ভিডিওগুলোতে নেই কোনো শিক্ষণীয় বার্তা। উল্টো এসব ভিডিওর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাছে ভুল বার্তা চলে যাচ্ছে। ফলে এটি হয়ে উঠছে যুব ও তরুণ সমাজের মধ্যে অপরাধ বাড়ার একটি অন্যতম কারণ।
উল্লেখ্য, আজকাল পাড়ায়-মহল্লায় যত্রতত্র কিছু তরুণ-তরুণীকে বেপরোয়াভাবে শুটিং করতে দেখা যায়। রাস্তায়, ছাদে, এমনকি বারান্দায় বসে মুহূর্তের মধ্যে তৈরি হচ্ছে ভিডিও। বিভিন্ন গানের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে নিজের অঙ্গভঙ্গি। ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপে আপলোড করা হচ্ছে। ভার্চুয়াল মাধ্যমে ছড়িয়ে যাচ্ছে সর্বত্র। অলস সময় কাটানো মানুষ তা দেখছেন। মানহীন এসব ভিডিওতে বিপথগামীও হচ্ছেন অনেকে। রাতারাতি জনগ্রিয় হতে টিকটক, লাইকি বেছে নিচ্ছেন একশ্রেণির মানুষ। টিকটককে কেন্দ্র করে সংসার ভাঙছে। আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। এমনকি ঘটেছে হত্যাকা-ও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই টিকটক ভিডিও এক ধরনের নেশা। এই নেশা কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাদকের চেয়ে ভয়াবহ। ভার্চুয়াল এই নেশায় আক্রান্ত হয়ে অনেকেই নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে যাচ্ছেন। স্মর্তব্য, ফিল্মের একসময়ের অনেক পরিচিতমুখও এখন টিকটকে সক্রিয়। মূলত কাজ না পেয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করছেন তারা। গবেষকরা বলছেন, হতাশা থেকে সাধারণত ফেইসবুকে বেশি বেশি নিজের ছবি আপলোড করা হয়। একইভাবে হতাশা থেকেই অনেকে টিকটকের মতো বিশেষ অ্যাপসের প্রতি আসক্ত হচ্ছেন। অভিযোগ, টিকটক নির্মাতাদের অনেকেই অনিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করেন। নানা অপরাধেও জড়িত অনেকে। মাদক ও পতিতাবৃত্তির মতো অপকর্মে লিপ্ত। যে কারণে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের আকৃষ্ট ও নিজের পরিচিতির জন্য অনেক মেয়ে স্বেচ্ছায় এই মাধ্যমে সক্রিয়। ভয়াবহ দিক হলো, করোনার এই সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে টিকটক ভিডিও দেখতে আসক্ত হচ্ছে। একইভাবে ভিডিও তৈরিকারীদেরও আসক্তি বাড়ছে।
অবস্থাদৃষ্টে বলা যায়, টিকটকের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার মতো কোনো যুক্তি নেই। সাম্প্রতিক সময়ের কিশোর গ্যাংয়ের মতো এটিও একটি সামাজিক ব্যাধি। তথ্য রয়েছে, মূলত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরাই এসব অপকর্মে জড়িত। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কিশোর-তরুণদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এসব গ্রুপ। তবে টিকটক নেশা ছড়িয়ে গেছে পুরো দেশে। সঙ্গত কারণেই এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এর ব্যত্যয় ঘটলে এই ডিজিটাল আসক্তির কারণে আগামী দিনে দেশ নেতৃত্বশূন্যতায় ভুগতে পারে। উল্লেখ্য, বিব্রতকর, অনৈতিক ও পর্নোগ্রাফিকে উৎসাহিত করায় এগুলো এরই মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়ায় ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টিকটক ও লাইকি বন্ধের প্রসঙ্গটি জনমনে উচ্চারিত হচ্ছে। তাই এ ধরনের সাইট বা অ্যাপসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। প্রয়োজনে বিপথগামী ওয়েবসাইট ও অ্যাপ বন্ধে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।