ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন

নোনার মাত্রার সঙ্গে বাড়ছে শঙ্কা
ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন

সুন্দরবন হলো বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি, যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম। গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনাজুড়ে বিস্তৃত। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখ- বনভূমি। সঙ্গত কারণেই সুন্দরবন বাংলাদেশের সম্পদ ও অহংকার। তবে প্রকাশ যে, সুন্দরবনে নোনার মাত্রার সঙ্গে বাড়ছে শঙ্কাও। জানা যায়, প্রাকৃতিক নানা কারণ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ফলে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন বেশ চাপে আছে। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, সুন্দরবনে নোনার মাত্রা বেড়েছে। আরও তথ্য হলো, সাম্প্রতিককালে সুন্দরবনে মিষ্টি পানির প্রবাহ কমেছে; বিশেষত উজান থেকে মিষ্টি পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে জোয়ারের পানি অর্থাৎ সাগরের নোনা পানির চাপ বেড়েছে। স্মর্তব্য, প্রতিবছর ২৬ জুলাই বেসরকারিভাবে আন্তর্জাতিক ম্যানগ্রোভ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। অন্যদিকে ইউনেস্কোর আহ্বানে ২০১৫ সাল থেকে এই দিনটিকে ম্যানগ্রোভ ইকোসিস্টেম সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এর লক্ষ্য ম্যানগ্রোভ ইকোসিস্টেমের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো। অনন্য, বিশেষ ও দুর্বল বাস্তুসংস্থানের ম্যানগ্রোভের টেকসই পরিচালনা, সংরক্ষণ এবং ব্যবহার নিশ্চিত করাই এর উদ্দেশ্য।

উল্লেখ্য, স্বাদু ও নোনা পানির একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় যে প্রতিবেশ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, তাকেই ম্যানগ্রোভ ইকোলজি (বাস্তুতন্ত্র) বলা হয়। এই প্রতিবেশ ব্যবস্থার অন্যতম বড় বৈশিষ্ট্য এটি দ্রুত পরিবর্তনশীল। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে জীববৈচিত্র্যের আধার। ম্যানগ্রোভ বা বাদাবনের কারণে উদ্ভিদের পাতা পানির সঙ্গে মিশে জলজপ্রাণী, বিশেষত মাছের খাবার জোগান দেয়। এখানকার মাছ এ কারণে অনন্য স্বাদের। অন্যদিকে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদরাজি বায়ুম-ল থেকে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড টেনে নেয়। এতে পরিবেশের দূষণ কমে। কার্বন ডাই-অক্সাইডকে খাদ্যে রূপান্তর করে নোনা পানির এই উদ্ভিদরাজি বেড়ে ওঠে। অথচ বাড়তি নোনা তাদের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দেখা দিয়েছে। জানা যায়, সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে মোটামুটি ৬৬২ কোটি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড আটকে আছে। এর সঙ্গে প্রতিবছর আরও ৩৮ লাখ টন যোগ হচ্ছে। আটকে থাকা এই বিষ-গ্যাসের একাংশ শর্করায় পরিণত হওয়ায় প্রতিবছর এরা আরও গ্যাস আটকে রাখতে সক্ষম হয়।

সুন্দরবনের মৎস্যসম্পদের (মাছ ও চিংড়ি, কাঁকড়া, কুঁচিয়া প্রভৃতি) ওপর এখনও বিপুল সংখ্যায় মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। বিশেষত ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত থেকে সুন্দরবন মানুষের জীবন ও জনপদকে রক্ষা করে চলেছে। সাম্প্রতিককালে আঘাত হানা আম্পান, ইয়াসেও সুন্দরবন বুক চিতিয়ে রক্ষা করেছে। এ অবস্থায় আমাদের উচিত সুন্দরবনের স্বাভাবিকত্ব সুরক্ষার্থে এর জন্য উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করা। জলবায়ুগত পরিবর্তনে এখানে নোনার পরিমাণ বাড়ছে, মিষ্টি পানির প্রবাহ কমছে। সংশ্লিষ্ট নদীগর্ভে অধিক হারে পলি জমছে। এটাও বাস্তবতা যে, মানুষসৃষ্ট সমস্যাও সুন্দরবনের শঙ্কা বাড়ছে। এই অবস্থায় ইতিবাচক কর্মপন্থা নিয়ে সুন্দরবন সুরক্ষায় নিয়োজিত হতে হবে। সর্বদা পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি ব্যাপক গবেষণা কর্মকাণ্ড ও জরুরি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত