বাংলা বাঙালিদের প্রাণের ভাষা, বাংলা ভাষার সঙ্গে বাঙালিদের নাড়ির সম্পর্ক। মায়ের কোল থেকে এই ভাষা আমরা গ্রহণ করি, তাই এটি আমাদের মাতৃভাষা। কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের মতো’। মাতৃভাষার আশ্রয় গ্রহণ করে মানুষ প্রথম জীবনের শিক্ষা অর্জন করে। এভাবেই পর্যায়ক্রমে তা ভাষা হয়ে উঠে অতি সহজ। এই ভাষাতে শিক্ষার্থীরা যতটুকু সহজে কোনো পাঠ্য বিষয় বুঝতে পারবে, অন্যভাষায় তা এতটা সহজ হবে না। তাই বাঙালির শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলাভাষা প্রধান হিসেবে রাখা উচিত। অন্যভাবে বলা যায়, একটি শিশু জন্মের পর থেকে যে শব্দগুলো শুনে শুনে বড় হয় বা শেখে, সেটাই তার মাতৃভাষা। আমাদের সেই মাতৃভাষাটি বাংলা। এ ভাষায় আমাদের বাচ্চারা প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন এবং পরিবেশের চারপাশের সববস্তু ও জিনিসের সঙ্গে পরিচয় হয়। বাঙালিদের কাছে বাংলা ভাষায় ইবাদতের দোয়া, প্রেমণ্ডভালোবাসা ও মনের আবেগ খুবই সহজে প্রকাশ করা যায়, যা অন্য কোনো ভাষাতে একদমই অসম্ভব । একটি শিশু জন্মের পর থেকেই তার বাবা-মা, প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের থেকে শিক্ষা অর্জন শুরু করে। মায়ের কোলে সুস্থতার জন্য যেমন পুষ্টির সম্পূর্ণতা প্রদান প্রয়োজন, তেমনই শিক্ষালাভের জন্য কঠোরভাবে মাতৃভাষা প্রাথমিক পর্যায়ে প্রয়োজন। ইংরেজি আমাদের জন্য হতে পারে শুধুই কাজের ভাষা; কিন্তু শিক্ষাদানের মাধ্যম হিসেবে বাংলা ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। ভাবের ভাষা হিসেবে ইংরেজি আমাদের সবার জন্য সহজ নয়। নিজ ভাবের ভাষা হিসেবে বাংলা এবং শিক্ষার ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে একত্রিত রাখলে শিক্ষার মানে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন ও নিজ দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশে সংস্কৃতি বিস্তারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অন্যভাষায় শিক্ষাদানে আমাদের জ্ঞান কখনোই পরিপূর্ণতা পাওয়া সম্ভব না। সৃষ্টিকর্তার কিতাব ব্যতীত অন্য ভাষায় সম্পূর্ণ মুখস্থ করলে অর্ধেকটা বুঝলেও আমরা কখনোই সম্পূর্ণটা স্মরণে রাখতে পারব না। এতে আমাদের অন্তরাত্মার পরিপূর্ণতা লাভ করবে না। কিন্তু বাংলা ভাষায় কিছু জানলে তা সহজেই বুঝে আত্মার পরিপূর্ণতা পাওয়া সম্ভব। এতে জ্ঞানের পাশাপাশি মানসিক একটি বিকাশও হবে। ব্রিটিশরা যখন এদেশে প্রভাব বিস্তার করার জন্য ইংরেজি মাধ্যম ব্যবহার করেছিল, তখন সাধারণ মানুষ তা সহজেই গ্রহণ করতে পারেনি। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে অধিকাংশ অশিক্ষিত ও দারিদ্র্যের বিমল ছায়াতলে চলে যায়। অন্ধকার হয়ে যায় সংস্কৃতি, যা দূর করা অন্য কোনো ভাষা দিয়ে সম্ভব ছিল না, শুধু বাংলা ভাষা তথা আমাদের মাতৃভাষা ব্যতীত। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়া হয়; কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমানকালে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক হারে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর দৌরত্ম্য বেড়ে যাচ্ছে। বাংলা ছেড়ে এ যেন ইংরেজ হওয়ার টান। বাংলা বর্তমান সমাজে গুরুত্ব না পেলেও বায়ান্নর ছাত্রসমাজ ভুলে ছিল না। তাই তো তাদের নিয়ে, তখন রচিত হয়েছে ইতিহাস, আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষণ হয়েছে ও গীতিকণ্ঠে ছড়িয়েছে-আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি? বাঙালি শিশুর বুলিতে, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে, হৃদস্পন্দন ময়ে শিরায় শিরায় প্রবাহিত ভাষা বাংলা। নিজ দেশের গবেষণা ও বিজ্ঞানচর্চায় নিজ ভাষা ব্যবহার হওয়া উচিত, তাতে নিজ ভাষা শিখতে অন্যরা উদ্যমী হবে। বাংলার সঙ্গে অন্য ভাষা বিশেষ করে ইংরেজি ও আরবি শিখতে হবে সমভাবে। কিন্তু শিক্ষার প্রতিটি স্তরে বাংলা ভাষাকে সর্বজনীন ও একমাত্র হিসেবে তৈরি করতে হবে।
শিক্ষার্থী
উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়
Ranaahmmedovi@gmail.com