বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ইসলাম ধর্মের অনুসারী সহজ-সরল উদার মানবিক চেতনার অধিকারী একজন খাঁটি মুসলমান। তার পূর্বপুরুষ শেখ আউয়াল ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে হজরত বায়েজিদ বোস্তামী (রহ.) এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে তার সঙ্গে প্রথম ভারতীয় উপমহাদেশে আসেন। পরবর্তী সময়ে তারই উত্তরপুরুষরা বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় বসতি স্থাপন করেন। জাতির পিতা হচ্ছেন ইসলাম ধর্ম প্রচারক শেখ আউয়ালের সপ্তম বংশধর। বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান ছিলেন একজন সুফি চরিত্রের অধিকারী অন্যতম ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও ইসলামের প্রচার-প্রসারের অন্যতম একজন ধারক। বঙ্গবন্ধু কখনো ইসলামকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেননি। তিনি ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে বেতার ভাষণে বলেছেন : আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে আমরা ইসলামে বিশ্বাসী নই, এ কথার জবাবে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য আমরা লেবাস সর্বস্ব ইসলামে বিশ্বাসী নই। আমরা বিশ্বাসী ইনসাফের ইসলামে। মাতৃভূমি প্রিয় বাংলাদেশকে সব ধর্মের সব মানুষের জন্য শান্তির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি ছিলেন সদা সচেষ্ট ন্যায়বান রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি তার শাসনামলে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে যে অসামান্য অবদান রেখেছেন, তা মুসলিমবিশ্বে বিরল।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন ইসলামপ্রিয় আওলিয়াভক্ত। ১৯৭৪ সালে তিনি ইরাকের বাগদাদে বড়পীর হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার-প্রসার এবং গবেষণার জন্য সরকারিভাবে ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকাশনা বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃতি পাচ্ছে। তিনি ইসলামী আকিদাভিত্তিক জীবন গঠন ও দীনি শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন করেন। বঙ্গবন্ধুই প্রথম মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডকে স্বায়ত্তশাসন দিয়ে এর নাম রাখেন ‘বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড’। বিশ্ব ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম স্থায়ী বন্দোবস্ত হিসেবে টঙ্গীর তুরাগ নদীতীরবর্তী জায়গাটি প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে প্রথম হজযাত্রীদের জন্য সরকারি তহবিল থেকে অনুদানের ব্যবস্থা করেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ চত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বৃহত্তর আঙ্গিকে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) মাহফিল উদযাপনের কর্মসূচির উদ্বোধন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে তারই নির্দেশে সর্বপ্রথম বেতার ও টেলিভিশনে গুরুত্বের সঙ্গে পবিত্র কোরআন ও তার তাফসির এবং অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রচার করার সুব্যবস্থা করা হয়। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.), শবেকদর ও শবেবরাতসহ ধর্মীয় দিবসগুলো যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাংলাদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারিভাবে আইন করে মদ-জুয়া নিষিদ্ধকরণ ও শাস্তির বিধান করেছিলেন। রাশিয়ায় প্রথম তাবলিগ জামাত পাঠানোর ব্যবস্থা ও রেসকোর্স ময়দানের ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা বন্ধ করেছিলেন। আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে আরববিশ্বের পক্ষে তিনি সমর্থন প্রদান ও সাহায্য প্রেরণ করেছিলেন। ইসলামবিষয়ক গবেষণার জন্য তিনি বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করেছিলেন। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) অধিবেশনে যোগদান করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে এ সংস্থার অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়েই বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর মাঝে বাংলাদেশের স্থান করে দেন।