ঢাকা শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের পতাকা বিক্রির ধুম

আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের পতাকা বিক্রির ধুম

আর মাত্র তিন দিন পর শুরু হতে যাচ্ছে ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর কাতার বিশ্বকাপ।

এরই মধ্যে দেশ ফুটবল জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে গেছে ফুটবল ভক্তরা। বরাবরের মতো এক দলে রয়েছেন আর্জেন্টিনার সমর্থক ও অন্য দলে ব্রাজিলের সমর্থক। পাশাপাশি উন্মদনা ঘিরে ফুটবল বাণিজ্যও সমান চাঙা। বিশেষ করে এই দুই দলের জার্সি ও পতাকা বিক্রি হচ্ছে দেদার। ফলে আয়-রোজগার বেড়েছে এক শ্রেণির মৌসুমি ব্যবসায়ীর।

বাংলাদেশ দলের অংশগ্রহণ না থাকলেও দেশের অন্যান্য জেলার ন্যায় বরিশালেও এ বিশ্বকাপ খেলা ঘিরে কোনো কিছুরই কমতি নেই। বিশ্বকাপের উদ্বোধনকে ঘিরে এখানকার ফুটবলপ্রেমী দর্শক এখন অপেক্ষার প্রহর গুনছেন।

তাইতো দর্শকদের প্রিয় দলের পতাকা বিক্রির ধুম পড়েছে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয়। গত কয়েক দিন থেকে নগরীর ব্যস্ততম বিবির পুকুরপাড়ে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলের পতাকা বিক্রির যেন হাট বসেছে।

নগরীর বাসিন্দা তানভির আহম্মেদ অভি বলেন, বিশ্বকাপ ফুটবলে আমার প্রিয় দল হচ্ছে ব্রাজিল। নেইমারের পায়ের জাদুতে এবার ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতবেন বলে তিনি শতভাগ আশা প্রকাশ করে আরও বলেন, প্রিয় দলের পতাকা ক্রয়ের জন্য বিবির পুকুরপাড় এসেছি। এখান থেকে ব্রাজিলের পতাকা ক্রয় করে বাড়ির ছাদে উড়াব। মোছাদ্দেক হাওলাদার নামের আরেক পতাকা ক্রেতা বলেন, আমার প্রিয় দল আর্জেন্টিনার পতাকা ক্রয় করেছি। এটি আমাদের বাসার সামনে প্রদর্শন করব।

পতাকা বিক্রেতা শাহাদৎ হোসেন বলেন, ঢাকা থেকে গত ১০ দিন আগে বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশগ্রহণ করা বিভিন্ন দলের পতাকা নিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে বরিশাল নগরীতে এসেছি। প্রতিদিন বিকিনিকিও হচ্ছে বেশ। তবে গত দুই দিন থেকে পতাকা বিক্রির সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ পতাকা বিক্রি হয়েছে, তাতে ব্রাজিলের পতাকা বেশি বিক্রি হয়েছে। তারপর রয়েছে আর্জেন্টিনা, ইংল্যান্ড, জার্মানি ও স্পেনের পতাকা। তিনি বলেন, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার ১২ ফুট দৈর্ঘ্য পতাকা ১ হাজার ২০০ টাকা, বাকি বিভিন্ন দেশের ৫ ফুট দৈর্ঘ্যে পতাকা ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নিয়োগকৃত বরিশাল বিভাগ ও জেলায় খেলোয়াড় তৈরির কারিগর (কোচ) মশিউল আলম স্বপন বলেন, বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্বকাপ চলার কারণে বর্তমান প্রজন্মের যুবক ও তরুণ ছেলেরা অনেকেই সেদিকে নজর থাকায় এখনও বিশ্বকাপ ফুটবলের দিকে নজর তেমন একটা বাড়েনি। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে ওই সব তরুণ ও যুবকরা ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে মাতবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এদিকে নীলফামারী জেলা শহরে কাপড়ের তৈরি বিভিন্ন দেশের পতাকা, ফেস্টুন ও ব্যানার শোভা পাচ্ছে দরজিবাড়িতে। ফুটবলপ্রেমীরা দূর-দূরান্ত থেকে এসে অর্ডার দিয়ে নিজের পছন্দের দেশের পতাকা বানিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। শহরের দরজি জাহাঙ্গীর আলমের দোকানে ঝুলছে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, জার্মানি, ফান্স, জাপান, ইংল্যান্ড ও পর্তুগালসহ বিভিন্ন দেশের জাতীয় পতাকা। বিশ্বকাপ সামনে রেখে বিভিন্ন সাইজের পতাকা তৈরি করছেন। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিশ্বকাপ শুরু হতে আর কয়েক দিন বাকি। তাই ফুটবলপ্রেমীদের পছন্দের পতাকা আগে থেকেই বানিয়ে রাখছি। আর্জেন্টিনার সমর্থক ডোমার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের মোশারফ হোসেন বলেন, বিশ্বকাপ এলেই আমি বাড়ির ছাদের ওপর পতাকা টানাই। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। বিশ্বকাপের প্রত্যেকটি খেলা টেলিভিশনের পর্দায় বসে থাকি। জেলা শহরের হাজি মহসিন সড়ক সংলগ্ন সাথী টেইলার্সের মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, বিশ্বকাপ শুরু হলে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে হৈচৈ শুরু হয়। বিভিন্ন দেশের পতাকা কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন তারা। ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের পতাকা তৈরিতে কারিগরদের ব্যস্ততাও বাড়ে। দরজি হামিদ ইসলাম বলেন, সৈয়দপুর শহরের আমার মতো প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন পতাকা তৈরির কাজ করছেন। আমরা ৬০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত পতাকা বিক্রি করছি। এর বাইরেও ক্রেতার নিজস্ব পছন্দ ও সাইজ অনুযায়ী পতাকা তৈরি করে নিচ্ছে, যেগুলোর দাম ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের সমর্থক বেশি।। তাই এই দুই দেশের পতাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে। একই শহরের দর্জি পাপ্পু বলেন, শুধু এই শহরেই নয় আমাদের তৈরি পতাকা নীলফামারী, ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা ও কিশোরগঞ্জসহ রংপুর জেলার তারাগঞ্জ, পাগলাপীর, দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর, চিনির বন্দর, ভুষির বন্দর, বদরগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন দলের জার্সিও তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে। জেলা দর্জি কল্যাণ সমিতির সভাপতি শাহাদত হোসেন সাজু বলেন, বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় সারা বিশ্বে উন্মাদনা শুরু হয়। ফুটবলপ্রেমীরা বাড়ি, দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পতাকা টানানোর প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে। এই উপলক্ষ্যে পতাকা তৈরির কাজও বেড়ে যায়।

নীলফামারী জেলা কালচারাল অফিসার কেএম আরিফুজ্জামান আরিফ জানান, খেলা শুরু হতে আর কয়েক দিন বাকি। অনেকেই বাসাবাড়ির ছাদে ও গাছের ডালে পতাকা টানিয়েছেন। ফুটবলের প্রতি যে মানুষের ভালোবাসা, দরজির দোকানে পতাকা তৈরির ব্যস্ততা দেখলেই তা সহজে বোঝা যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত