ঢাকা মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কাতার বিশ্বকাপ

মরক্কো বিশ্বকাপের ‘রকি বালবাও’

মরক্কো বিশ্বকাপের ‘রকি বালবাও’

কাতার বিশ্বকাপে চলছে আরব বসন্ত, একের পর এক ইতিহাস গড়ে চলেছে মরক্কো। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ড্রয়ে শুরু করা আফ্রিকা-আরব অঞ্চলের দেশটি বেলজিয়াম ও কানাডাকে হারিয়ে গ্রুপ সেরা হয়ে শেষ ষোলোয় ওঠে। যেখানে শিকার সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেন। একটু একটু করে স্বপ্নের সীমানা বাড়িয়ে নিতে থাকা মরক্কো, কোয়ার্টার ফাইনালে লিখল রূপকথা, যেখানে প্রতিপক্ষ দলটির নাম পর্তুগাল। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দেশের বিপক্ষে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে পাওয়া ১-০ গোলের মহামূল্যবান জয়ে আফ্রিকান দল হিসেবে বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়ল মরক্কো, প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠল তারা। শুধু নিজেদের ইতিহাসে নয়, আফ্রিকা-আরব অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের শেষ চারে উঠল অবিশ্বাস্য ফুটবল খেলে আসা মরক্কো। একটি দেশ, একটি মহাদেশ ও আরব অঞ্চলের মানুষদের হয়ে ইতিহাসে নাম তুলল তারা। আফ্রিকা ও আরব বিশ্বের মোট ১৬০ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করা মরক্কো আরেকটি শক্ত ডিফেন্সিভ প্রদর্শনীতে অব্যাহত রেখেছে, তাদের ফরেস্ট গাম্পসুলভ বিশ্বকাপযাত্রা। মরক্কোর ইতিহাস গড়ার রাতটি আবার কান্নায় আবার শেষ হয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলারদের একজন হিসেবে খ্যাত এই পর্তুগিজের ক্যারিয়ার শেষ হচ্ছে বিশ্বকাপের দেখা না পেয়েই। কখনো এই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল খেলতে না পারা রোনালদোর জন্য নকআউট পর্বের গোলও অধরাই থেকে গেল।

এবারই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে মরক্কো। আফ্রিকার অঞ্চলের চতুর্থ দল হিসেবে শেষ আটের টিকিট কাটে তারা। তাদের আগে আফ্রিকা থেকে বিশ্বকাপের শেষ আটে খেলেছে ক্যামেরুন (১৯৯০), সেনেগাল (২০০২) ও ঘানা (২০১০)। কেউ পারেনি শেষ আটের বাধা টপকাতে। কিন্তু প্রথম অভিজ্ঞতাতেই বিজয় নিশান ওড়ালো মরক্কো। শক্তি, সামর্থ্য, অভিজ্ঞতা, সাফল্যে অনেক এগিয়ে থাকা দলকেই বিদায় করে স্বপ্নের সেমিফাইনালে উঠে গেলেন হাকিমি, বুনো, জাইয়েখরা।

মার্কিন ক্রীড়াভিত্তিক চলচ্চিত্র রকি বালবাও, যার প্রধান চরিত্রে ছিলেন সিলভারস্টার স্ট্যালন; বুড়ো বয়সে যিনি বক্সিং রিংয়ে ফিরে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন বক্সারদের অন্তর। পর্তুগালকে হারিয়ে বুকে সেই চরিত্র ধারণ করলো মরক্কো। ১৯৮৬ সালের পর প্রথমবার নকআউটে উঠেই মরক্কো পার করে চলেছে একে একে সব বাধা। বিদায় করেছে বেলজিয়াম, স্পেন ও পর্তুগালের মতো দলকে, যাদের বিপক্ষে গোলপোস্টও ছিল অক্ষত।

মরক্কো কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুই ম্যাচ শেষে বলেন, ‘আমরা এই বিশ্বকাপের ‘রকি বালবাও।’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোতে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘আমরা একটা উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিলাম, গ্রুপ পর্ব উতরে যেতে আমরা সবকিছু দিতে চেয়েছিলাম। আমাদের আকাশে ওঠার লক্ষ্য, এখানেই থামছি না আমরা। কিন্তু আমাদের হারানো কঠিন হতে যাচ্ছে। সুতরাং ট্রফি জয়ের স্বপ্ন কেন নয়?’ সেই পথেই যেন এগিয়ে চলেছে মরক্কো। পর্তুগাল বধের পর রেগরাগুই আরও বলেন, ‘এই বিশ্বকাপে আমরা এমন একটি দল, যাদের সবাই ভালোবাসছে। কারণ আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিচ্ছি যে, আপনার অনেক বেশি প্রতিভা ও টাকাকড়ি না থাকলেও আপনি সফল হতে পারে।’

সেমিফাইনালে ওঠা মিরাকল বলতে নারাজ মরক্কো কোচ, ব্যাখ্যাও দেন তিনি, ‘এটা মিরাকল নয়। আপনাদের অনেকে এমন কিছু বলবে, বিশেষ করে ইউরোপে। কিন্তু আমরা বেলজিয়াম, স্পেন ও পর্তুগালের বিপক্ষে কোনো গোল না খেয়ে জিতেছি। আমরা আমাদের দেশের মানুষ ও মহাদেশকে গর্বিত করেছি এবং আরও অনেক মানুষকে। আপনি যখন রকিকে দেখবেন, তখন রকি বালবাওকে সমর্থন করতে চাইবেন।’ পাঁচ ম্যাচে মরক্কো একমাত্র গোল খেয়েছে কানাডার বিপক্ষে, তাও আত্মঘাতী। পর্তুগাল, বেলজিয়াম ও স্পেনের বিপক্ষে তো গোল খায়নি, এমনকি গ্রুপে রুখে দিয়েছিল আরেক সেমিফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়াকে। তবে পর্তুগালের বিপক্ষে জয়কে এগিয়ে রাখছে তারা, কারণ এই দলটি ৬-১ গোলে আগের ম্যাচে সুইজারল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়েছিল। মরক্কো গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনো বলেছেন, ‘আমাকে চিমটি কাটুন তো, আমি স্বপ্ন দেখছি না তো! মরক্কো বিশ্বের যে কারও মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের মানসিকতা পাল্টে দিয়েছি। তারা জানবে মরোক্কান খেলোয়াড়রা মিরাকল ঘটাতে পারে।’

কোচ রেগরাগুই বললেন, মরক্কানদের বিশ্বকাপ স্বপ্ন শেষ চারেই শেষ হয়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা দেখিয়েছি আফ্রিকান দলের পক্ষে বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলা সম্ভব। ফাইনালও, কেন নয়? তিন কি চার ম্যাচ আগের প্রেস কনফারেন্সে আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আমরা বিশ্বকাপ জিততে পারি কি না। এবং আমি বলেছিলাম, কেন নয়? আমরা স্বপ্ন দেখতে পারি। কেন স্বপ্ন দেখা যাবে না? যদি স্বপ্ন না দেখেন, কিছুই পাবেন না।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত