ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

অঘোষিতভাবে বিলুপ্ত ২০ দলীয় জোট

বিএনপি শরিকদের ১২ দলীয় জোটের আত্মপ্রকাশ

বিএনপি শরিকদের ১২ দলীয় জোটের আত্মপ্রকাশ

দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর ও অঘোষিতভাবে বিলুপ্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ১২ শরিকদের সমন্বয়ে এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন এই ‘১২ দলীয় জোট’ গড়ার ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার। আসন্ন যুগপৎ আন্দোলনের সুবিধার্থে এই জোট গঠন এবং এরমাধ্যমে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য অটুট থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমাদের যে ঐক্য, সমঝোতা, যে হৃদয়ের বন্ধন, তা আগের মতই অটুট থাকবে। আমরা আরও বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার জন্য বর্তমান সরকারবিরোধী দলগুলোকে এক কাফেলায় শামিল করতে একটু ভিন্ন পথ এবং কৌশল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি। ২০ দলীয় জোটের ভাঙন নিয়ে ‘ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই’ মন্তব্য করে মোস্তফা জামাল বলেন, আমরা সকলে মিলে এ টু জেড ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের পথে যুগপৎভাবে আন্দোলনে এগিয়ে যাব।

নতুন এই জোটে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ছাড়াও রয়েছে কল্যাণ পার্টি, লেবার পার্টি, জাতীয় দল, বাংলাদেশ এলডিপি, জাতীয় গণতান্ত্রিক দল- জাগপা (তাসমিয়া প্রধান), এনডিপি, এলডিপি (সেলিম), মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক পার্টি এবং সাম্যবাদী দল।

আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিএনপি তাদের চার দলীয় জোটকে সম্প্রসারিত করে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল গড়ে ২০ দলীয় জোট। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে নতুন এক মোর্চা গড়ে, যেখানে ২০ দলের শরিকদের পাশাপাশি এক সময় আওয়ামী লীগ করে আসা ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, আ স ম আবদুর রবের জাসদ, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য ছিল।

সেই নির্বাচনে ভরাডুবি হয় ঐক্যফ্রন্টের। সব মিলিয়ে তারা আসন পায় আটটি। নির্বাচনের পর ঐক্যফ্রন্ট স্থবির হয়ে পড়ে। সমমনাদের নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলে এলেও ২০ দলীয় জোটকেও আর জাগাতে পারেনি বিএনপি।

নবগঠিত ১২ দলীয় জোটের ঘোষণাপত্র পাঠ করে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, আমরা দেশের ১২টি রাজনৈতিক দল গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের চলমান সরকার বিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে সব কর্মসূচি সক্রিয়ভাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা ১২ দল নামেই পরিচিত থাকব। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি লাভই আমাদের সকলের অভিন্ন লক্ষ্য মনে করি।

তিনি বলেন, বিনা ভোটে অনির্বাচিত অবৈধ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ১২ দল বিএনপির সাথে যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয় থাকবে। আমরা ঘোষণা করছি, চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখব। বিএনপির ঘোষিত ১০ দফা এবং ২৭ দফা রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবকে ‘জাতীয় মুক্তির সনদ’ বিবেচনা করে এর সাথে একাত্মতার ঘোষণা করা হয় ১২ দলের সংবাদ সম্মেলনে।

২০ দল বিলুপ্ত : কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ৯ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপাসনের কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক ছিল। সেখানে বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতারা ‘২০ দলীয় জোট’ নামটি আর ব্যবহার না করতে বলেন। তারা বলেন যে, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আমরা একসাথে চলতে পারি। এরূপ অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্যের পর ২০ দলীয় জোটের অস্তিত্ব আর থাকে না। বস্তুত সেই ঘোষণারও ১০ দিন আগে বিএনপি মহাসচিব বলেছিলেন যে, ২০ দলীয় জোট আর নাই। যদিও আনুষ্ঠানিক প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ২০ দলীয় জোটের জন্ম হয়েছিল, কিন্তু ২০ দলীয় জোটের বিলুপ্তটা আনুষ্ঠানিকভাবে হয়নি, অনানুষ্ঠানিভাবে হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ছিলাম ২০টি দল। ২০টি দলের মধ্যে প্রধান শরিক বিএনপি বাদ দিলে থাকে ১৯টি দল। দ্বিতীয় সারিতে জামায়াতে ইসলামী বাদ দিলে থাকে ১৮। পার্থের (আন্দালিব রহমান পার্থ) দল বিজেপি চলে গিয়েছিলেন ২০১৯ সালে, থাকে ১৭। খেলাফত মজলিশ চলে গিয়েছিল ২০১৯ সালে, থাকে ১৬। সেই ১৬ জনের মধ্যে আপনাদের সামনে আমরা ১২টি দল উপস্থিত আছি। তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোটের অন্যতম দল ছিল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, যার সভাপতির নাম অলি আহমেদ বীর বিক্রম। তার দলটি আমাদের এখানে নাই। তার দলের সাবেক সিনিয়র নেতা আবদুল করীম আব্বাসী এবং শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে একটি দল হয়েছে, যার নাম বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি), উনারা এখানে আছেন। ২০ দলীয় জোটের শরিকদের গড়া এই ১২ দলীয় জোট বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনেও থাকার ঘোষণা দিয়েছে। সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ২০১৯ সালে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। মূল অংশের মরহুম শফিউল আলম প্রধানের কন্যা ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান আমাদের সঙ্গে আছেন। বিদ্রোহীরা এখানে নেই। তিনি আরও বলেন, মৌলিকভাবে বলতে গেলে যে ২০ দলীয় জোট ছিল, তার মধ্যে ১২টি দল আমরা। আর বাকি তিনটি দলের নেতাদের প্রতি আমাদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা সবার জন্য দরজা খোলা রেখেছি। আমরা ভাগাভাগিতে নাই, রেষারেষিতে নাই, হিংসা-বিদ্বেষে নাই। আমরা একসঙ্গে চলেছি। বিএনপি আমাদের প্রধান মুরুব্বি। তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ। তাদের কাছ থেকে আমাদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে, পরিকপক্কতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের ঘোষিত ১০ দফা এবং ২৭ দফার সমর্থনে আমাদের এই প্রচেষ্ট।

১২ দলে নিবন্ধিত দল দুটি : সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, নতুন ১২ দলীয় জোটে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দল আছে দুটি। একটি তার বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি এবং অন্যটি বাংলাদেশ মুসলিম লীগ। ২০ দলীয় জোটে নিবন্ধিত দল ছিল চারটি। ১২ দলের বাকিরা নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন। ফলাফল আসতে সময় লাগবে। আমরা দোয়া করছি ফলাফলগুলো ইতিবাচকভাবে দ্রুত হবে। কর্মসূচি প্রসঙ্গে সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, ১২ দলীয় জোটের কর্মসূচি আগামীতে ঘোষণা করা হবে। ৩০ ডিসেম্বরের পরে তারা বিভাগীয় শহরগুলোতে যেতে চান। তবে সেই সিদ্ধান্ত এখনো সম্মিলিতভাবে নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, আমরা যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল করব। আমরা সেদিন বিজয় নগর পানির ট্যাংকের কাছে ইনশাল্লাহ মিলিত হব দুপুর ২টায়।

জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদার সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ছাড়াও লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, এনডিপির আবু তাহের, জাগপার তাসমিয়া প্রধান, জমিয়তে উলামায়ের ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করিম, ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত