দোহায় নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী
অপরাধে জড়ালে রক্ষার চেষ্টা চালানো হবে না
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসী বাংলাদেশীদের তারা যেসব দেশে কাজ করেন, সেসব দেশের আইন কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। আইন ভঙ্গ করে কেউ কোনো অপরাধে যুক্ত হলে বাংলাদেশ তাদের বাঁচাতে ন্যূনতম প্রচেষ্টাও চালাবে না বলে সাবধান করে দেন তিনি।
শেখ হাসিনা গতকাল কাতারের দোহায় বাংলাদেশ এমএইচ স্কুলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির অপরাধে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে- এটা আর বরদাস্ত করা হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দেশে থাকবেন সে দেশের আইন মেনে চলতে হবে। যেমন- আপনি কাতারে আছেন, এদেশের প্রচলিত আইন আপনাদের অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, কেউ যদি এই আইন ভঙ্গ করেন বা আইন ভঙ্গ করে কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়েন সেই দায় দায়িত্ব কিন্তু আমরা নেব না, কেউ নেবে না। যে দেশে অবস্থান করেন সেই দেশের আইন যদি না মানেন তাহলে সেদেশের প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে এবং এটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। কোন অপরাধির দায়িত্ব সরকার নেবে না।
তিনি বলেন, ‘কেউ যদি কোন আপরাধে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে সেটা থেকে কিন্তু আমরা উদ্ধার করার কোন চেষ্টা করব না, কোনো ব্যবস্থাও নেব না, আমি স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, একজনের জন্য অন্য মানুষগুলো কষ্ট পায়। তাদের বিপদ হয়। সেজন্য আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েই লোক পাঠাতে চাই। যে প্রশিক্ষণও অনেকে ঠিকভাবে নেন না। প্রশিক্ষণের সময় টাকা নিয়ে অনেকে ঘুষ দিয়ে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন মর্মে তথ্য রয়েছে বলেও জানান তিনি।
অন্তত সবাইকে এই বার্তাটা পৌঁছে দেবেন এখানে কেউ যদি কোনো অপরাধ করেন, সেই অপরাধের দায়-দায়িত্ব বাংলাদেশ নেবে না। এটা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই। কারণ, আমাদের এসব কথা শুনতে হয়। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এবং প্রবাসে লোক পাঠাবার যে সুযোগ আমরা পাই সে সুযোগও হারিয়ে যায়। আরো ১০টি মানুষের কাজের যে সুযোগ থাকে সেটা তারা পায় না। একটি মানুষের অপরাধের জন্য অন্য মানুষ শাস্তি পায়, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ায় আপনারাও বুক ফুলিয়ে বলতে পারেন আমার দেশ বাংলাদেশ। তার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই এবং এতিম ও নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে দেশে এসেছেন (’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পর ছয় বছর প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হয়) কেবল দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য।
তিনি বলেন, ‘আমি অন্তত এটুকু বলতে পারি, দেশের মানুষের জন্য দুবেলা দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। তাদের জীবনমান উন্নত করার পদক্ষেপ নিয়েছি। গৃহহীনকে ঘরবাড়ি করে দিচ্ছি, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি, রাস্তাঘাট যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছি।’ প্রধানমন্ত্রী বৈধ পথে দেশে টাকা পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সামান্য একটু বেশি পাওয়ার লোভে অনেক সময় বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। বিষয়টি আপনাদের বিবেচনায় থাকা উচিত।
এ সময় ধোকায় পড়ে বিদেশে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার না হয়ে তার সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে প্রশিক্ষণ নিয়ে বৈধ পথে বিদেশ যাওয়ার জন্যও সবাইকে পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশে শবেবরাতের রাত হওয়ায় সবার কাছে দোয়া কামনা করেন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ তথা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ারও দৃঢ় প্রত্যয় পুণর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণ ও সমস্যার দিকে নজর দিতে বলেন।
তিনি প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা বাংলাদেশে অবস্থানরত আপনাদের আত্মীয়দের প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় এনে যা যা পারে চাষ করতে বলুন কারণ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা বাংলাদেশকে যে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি ব্যবহারে কঠোরতা প্রয়োগ এবং যে কোনো সংকট এড়াতে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সঞ্চয় করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ধান, পেঁয়াজ, রসুনসহ অন্যান্য ফসলের চাষ করে তার সরকারি বাসভবন গণভবনকে একটি খামার বাড়িতে পরিণত করেছেন। তিনি বলেন, এরইমধ্যে গণভবন থেকে ৪৬ মণ পেঁয়াজ সংগ্রহ করেছেন এবং আরো ৪০-৫০ মণ পেঁয়াজ তোলা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। তিনি বলেন ‘আমরা জনগণের চাহিদা মেটাতে কাজ করছি এবং আমরা তাদের একটি সুন্দর ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন দিতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে, শিক্ষার হার ৭৫ শতাংশের ওপরে উন্নীত করেছে, স্বাস্থ্যসেবা সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে এবং বাংলাদেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভর করেছে।
সরকারপ্রধান বলেন, কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট লাগামহীন দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং এবং নির্যাতনের পাশাপাশি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের রাজত্ব কায়েম করে তাদের নিজেদের ভাগ্য গড়েছে। তারা জনগণের জন্য কিছুই করেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার এখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন অনুযায়ী বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করতে চলেছে। সূত্র বাসস।
