নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য সরকারকে সময় দেব
বললেন জামায়াত আমীর
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে জামায়াত প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুল ইসলাম। একইসঙ্গে স্বৈরাচারকে হটিয়ে দেশের জনগণ এ সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সুধী-সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমিরে জামায়াত এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, বিগত স্বৈরশাসক সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছি। জামায়াতসহ সব বিরোধী রাজনৈতিক দলকে শেষ করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। তারা নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছিল। এ অবস্থায় জনগণ বর্তমান সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছে। তাদের কাজ বিগত সরকারের ধ্বংস করা প্রতিষ্ঠানগুলো মেরামত করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা। আমরা তাদের সে সময় দিতে প্রস্তুত। আমাদের আরো ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। এটাকে চূড়ান্ত বিজয় ভাবার সুযোগ নেই। বাংলার আকাশে এখনও শকুন উড়ছে।
শেখ হাসিনা সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচারের আমলে সবার আগে আঘাত এসেছিল বিডিআরের ওপর। সেই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তারা এখনও শনাক্ত ও বিচারের আওতায় আসেনি। এর মাধ্যমে সেনাবাহিনী ও বিডিআর দুইটা বাহিনীকে ধ্বংস করা হয়েছিল। এরপর হামলা এসেছে জামায়াতে ইসলামীর ওপর। ইসলাম ধর্মের জন্য যারা নির্যাতন সহ্য করে কাজ করে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ আনা হলো। তাদের আটকের পর একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের নামে বিচারবিভাগীয় হত্যাকাণ্ড চালানো হলো। এরপর সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর নির্মম নির্যাতন ও হত্যা করা হলো।
আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে চাওয়ার বিষয়ে ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, সরকার জামায়াত নিষিদ্ধের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে চেয়েছিল। আমরা তাদের পাতা ফাঁদে পা দেইনি। আমরা ধৈর্য ধারণ করেছি ও আল্লাহর সহায়তা চেয়েছি। আল্লাহ আমাদের রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন। এক মাস আগে যা কল্পনা করিনি, আল্লাহ সেই উপহার আমাদের দিয়েছেন।
ছাত্র-জনতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের ওপর চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকব। তারা এ জাতিকে উদ্ধার করেছেন। এবার নিজেদের গড়তে হবে। তোমাদের প্রতি অনুরোধ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে হবে। এটা তোমাদের শেষ আত্মত্যাগ নয়, এটা সবে শুরু। জ্ঞান, দক্ষতা অর্জন ও নিজেরা সৎ হতে হবে। একইসঙ্গে অন্যদের সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করতে হবে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সাংবাদিকরা ওয়াচ টাওয়ারের মতো। তারা উপর থেকে সব দেখেন ও জনগণের ভাষা বুঝেন। এজন্য তাদের জাতির বিবেক বলা হয়। কিন্তু তারা এতদিন মুক্তভাবে কাজ করতে পারেননি। অদৃশ্য উপরের নির্দেশে তাদের কলম বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এমনটা যেন আর না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকবে হবে। আপনাদের সমাজের দর্পণ বলা হয়। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় তা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আপনারা আমাদের সমালোচনা করবেন, আমাদের ভুলভ্রান্তি তুলে ধরবেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের আমির মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, দাবিদাওয়ার নামে যারা বিল্পবকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করবে, তারা পতিত স্বৈরাচারের দোসর। এই সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে ভোট নিশ্চিত করবে। ভোটের মাধ্যমে জনগণের সরকার ক্ষমতায় আসবে, আমরা সেই সরকারের কাছে দাবি-দাওয়া পেশ করব। এর আগে আন্দোলনের নামে সড়ক দখল না করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ দেন।