সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব চাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশজুড়ে সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেয়ার জন্য কয়েকবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল কিন্তু কখনোই বাস্তবায়ন হয়নি। কারণ গত ১৫ বছরে সরকারি কর্মচারীরা তাদের সম্পদের হিসাবের বিবরণ দিতে অনীহা দেখিয়েছেন। এবার দায়িত্ব নেয়ার এক মাস না যেতেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব দিতে হবে। সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী দাখিল করার নির্দেশনা দিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান।

‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’ অনুযায়ী পাঁচ বছর পরপর সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদ বিবরণী দাখিল এবং স্থাবর সম্পত্তি অর্জন বা বিক্রির অনুমতি নেয়ার নিয়ম রয়েছে। বছরের পর বছর সম্পদের হিসাব না দেয়ার জন্য সরকারি কর্মচারীদের কোনো জবাবদিহি ছিল না বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। যদিও টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় ছিল এ সরকার। কয়েক দফা সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা সফল হয়নি।

আওয়ামী লীগ চতুর্থ দফা সরকার গঠনের পর কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার দুর্নীতি প্রকাশিত হয়। তখন প্রশাসনের দুর্নীতির বিষয়টি সর্বমহলে খুবই আলোচিত হয়। সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় গত ২ জুলাই ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’ কার্যকর করে সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সম্পদ হিসাব নিশ্চিতের জন্য নির্দেশনা দেন উচ্চ আদালত।

এর আগে গত ৪ জুলাই ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা যুগোপযোগী করে নতুন বিধিমালা চূড়ান্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। এরপর কোটা সংস্কার আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে দেশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির দিন গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। ওইদিনই বিলুপ্ত হয় মন্ত্রিসভা। পরদিন ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি। পরে ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দাখিলের জন্য বারবার চিঠি দেয়া হচ্ছে। আইনে বলা আছে, প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সম্পদের হিসাব জমা দিতে হবে। কিন্তু চিঠি বা আইনকে পাত্তাই দিচ্ছেন না সরকারি কর্মচারীরা।

১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময় এই আইনটি প্রণয়ন করেছিলেন। এরপর ২০০২ ও ২০১১ সালে তা সংশোধন করা হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় নির্দেশনাগুলো সংশোধন করা হয়নি। তাই ২০১৪ সালে ফের সংশোধন কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু আট বছরেও তা শেষ করতে পারেনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ গত বছর আচরণ বিধিমালা সংশোধন বিষয়ে কয়েকটি কর্মশালা আয়োজন করা হয়। কিন্তু কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব দেয়ার বিষয়ে পরিষ্কার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এই আচরণ বিধিমালায় মোট ৩৪টি নির্দেশনা আছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আসলে আমাদের গোপনীয়তার সংস্কৃতির কারণে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। কোনো কিছু প্রকাশ করা হলেও সেখানে ত্রুটি থেকে যায়।