বাক স্বাধীনতা ও তথ্যের অবাধ অভিগম্যতা নিশ্চিতের মাধ্যমে স্বপ্নের ‘নতুন বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে অপরিহার্য হিসেবে তথ্য কমিশনকে দলীয়করণের সংস্কৃতি থেকে রক্ষা করে আমূল সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক তথ্য জানার অধিকার দিবস-২০২৪ উপলক্ষে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে ১৩ দফা সুপারিশ তুলে ধরেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সুপারিশে বলা হয়েছে, বাকস্বাধীনতা ও ভিন্ন মতের অধিকার নিশ্চিতে তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন, সব আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ, বিশেষ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের মতো কালো আইনের মাধ্যমে সৃষ্ট জনগণের ওপর ডিজিটাল নজরদারি কাঠামো নিশ্চিহ্ন করতে হবে। তথ্য কমিশনকে অধিকতর কার্যকর করার স্বার্থে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যোগ্য ও দলীয় প্রভাবমুক্ত ব্যক্তিদের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দানসহ এই সংস্থাটিকে সম্পূর্ণভাবে ঢেলে সাজাতে হবে। তথ্য প্রকাশ ও তথ্যে অভিগম্যতার সুবিধার্থে ডিজিটাল টুলসের ব্যবহার সহজলভ্য ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং তথ্য অধিকার আইনের পরিপন্থি বিদ্যমান আইনসমূহ সংস্কার ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বাতিল করতে হবে। নতুন কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে তথ্য অধিকারের মূল চেতনার পরিপন্থি কোনো ধারা যাতে সংযোজিত না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তথ্য অধিকার আইনে তথ্যপ্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নজিরবিহীন আত্মত্যাগের বিনিময়ে কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন ঘটিয়ে এ দেশের অজেয় ছাত্র-তরুণ প্রজন্ম আপামর জনগণের মাঝে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভূতপূর্ব প্রত্যয় সঞ্চারিত করেছে। নতুন বাংলাদেশের বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমতের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য উপাদান অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও তথ্যে অভিগম্যতা। তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, সুশাসিত ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণ, সেই প্রত্যয়েরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। পতিত সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার অপচেষ্টার অন্যতম হাতিয়ার ছিল একদিকে বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমত দমন, অন্যদিকে নিরেট মিথ্যাচার এবং তথ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রবাহকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ব্যবহার করা। তিনি বলেন, টিআইবি বিশ্বাস করে, বাকস্বাধীনতা ও তথ্যের অবাধ অভিগম্যতা নিশ্চিতের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে উদ্যোগী হবে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরো বলেন, ‘আইনগত প্রক্রিয়ায় তথ্য চাওয়ার কারণে হামলা-মামলা ও বিভিন্ন হয়রানি, এমনকি জীবনের নিরাপত্তার ঝুঁকির শিকার হওয়াকে স্বাভাবিকতায় পরিণত করা হয়েছে। গোপনীয়তার সংস্কৃতি বর্জন করে স্বচ্ছতার চর্চা নিশ্চিতের অন্যতম উপায় হিসেবে তথ্য অধিকার আইনের যুগোপযোগী সংস্কার ও দলীয় প্রভাবমুক্ত তথ্য কমিশন গঠন করতে অনতিবিলম্বে অগ্রসর হতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।