ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে পুলিশের ১ লাখ ২০ হাজার সদস্য নিয়োগ হয়েছে। এই সময়ে বরাদ্দ বেড়েছে ৪৩৩ শতাংশ। তবে পুলিশকে পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগ নেই; বরং এটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ নির্ভরতায় বাহিনীর কাঠামো ভেঙে পড়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকারের পতনের দেড় মাস পরেও পুলিশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। পুলিশের শীর্ষ পদে পরিবর্তন করেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এ কারণে পুলিশের ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক সংস্কারের দাবি উঠেছে। পুলিশ কমিশন ও অভিযোগ কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা হচ্ছে। পুলিশের বর্তমান ও সাবেক সদস্য এবং বিশেষজ্ঞরা পুলিশ সংস্কারের বিষয়ে দুটি প্রধান পরামর্শ দিয়েছেন: প্রথমত, নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি এবং কর্মপরিবেশের ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, পুলিশকে সেবামুখী করতে এবং বিভিন্ন কার্যক্রমে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে শক্ত কাঠামো গড়ে তোলা আবশ্যক। আগে জনবল সংকট ও বাজেটের অভাবকে পুলিশ পেশাদার হতে না পারার কারণ হিসেবে দেখানো হতো। তবে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৮৩ হাজার ৭০টি পদ সংযোজন, ১ লাখ ২০ হাজার সদস্য নিয়োগ ও ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য ১৭৮টি উচ্চপদ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ নিয়োগ রাজনৈতিক বিবেচনায় হয়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে পুলিশের বরাদ্দ ছিল ৩,৩৩১ কোটি টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেড়ে ১৭,৭৬৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। তবে পুলিশের উন্নয়ন জনগণের কল্যাণের চেয়ে রাজনৈতিক স্বার্থে হয়েছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান পুলিশের সংস্কারের জন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন ও অভিযোগ কমিশন গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন। এই কমিশন নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। পুলিশ সদর দপ্তর এরইমধ্যে সংস্কারের জন্য আটটি কমিটি গঠন করেছে। কমিশনের প্রধান সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব সফর রাজ হোসেন বলেন, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী পুলিশ বাহিনী গঠনের পরামর্শ দেয়া হবে। পদায়ন ও বদলির ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনার দাবি উঠেছে। কর্মকর্তাদের প্রতি রাজনৈতিক চাপ ও অর্থ লেনদেনের কারণে পেশাদারিত্ব বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সঠিক নীতিমালা ও ফিটলিস্ট তৈরির মাধ্যমে পদায়নের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করা যেতে পারে।
পুলিশ সদস্যদের অপরাধের পেছনে ঘুষ ও অবৈধ লেনদেন প্রধান কারণ। অপরাধের তদন্ত পুলিশের দ্বারা হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার পাওয়া যায় না। এজন্য জবাবদিহির কাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন। পুলিশ সংস্কারের জন্য এরইমধ্যে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তবে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি। সাবেক আইজি খোদা বখশ চৌধুরী বলেন, পুলিশের পাশাপাশি বিচারব্যবস্থা ও কারাগার ব্যবস্থাপনাকেও সংস্কার করা উচিত।