বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দীন আহমেদ বলেছেন, অনেকে বলেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নাকি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। আমি বলি ঐতিহ্যের অর্থ কী? ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ তো স্বাধীনতা হরণকারী, গণহত্যাকারী দল। ছাত্রলীগ তো সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ হয়েছে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে আর রাজনীতি করতে পারবে কি না তা দেশের আদালত ও জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত শহীদ পরিবারের গর্বিত সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা, প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে স্বাধীনতা হরণ করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করা যদি ঐতিহ্যের হয় তাহলে আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। ছাত্রলীগের ইতিহাস মানে তো খুনখারাবি, ধর্ষণ, ভোট ডাকাতি। বাংলাদেশে প্রথম ভোট ডাকাতির ইতিহাস ডাকসু নির্বাচনে। ১৯৭৩ সালে ভোট ডাকাতি করে সেসময় ছাত্রলীগ কালো নজির স্থাপন করেছিল। পঁচাত্তরে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টিকারী আওয়ামী লীগ। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি মাত্র ১৩ মিনিটে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে একদলীয় শাসনব্যবস্থায় রূপ দেয়া ও গণতন্ত্র কেড়ে নেয়ার নাম আওয়ামী লীগ। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডের সঙ্গে আঁতাত করে ভারতের কাছে তথাকথিত শান্তিচুক্তির নামে ভূখণ্ড সারেন্ডার করার পাঁয়তারা করেছে এই আওয়ামী লীগ। যেটার কারণে আজও আমরা ভুগছি। তিনি বলেন, মানুষকে সাপের মতো পিটিয়ে মারা, লাশের উপরে দাঁড়িয়ে নৃত্য করার ঐতিহ্য শুধু আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগেরই আছে। অধিকারের তথ্য বলছে, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের হিসেব বাদেই আওয়ামী লীগের শাসনামলে (২০০৯-২৪) ৭ হাজার ১৮৮ জন মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। আওয়ামী লীগের আমলে গুমের শিকার হয়েছেন ৭০৯ জন। এরমধ্যে ১৫৫ জন এখনো ফিরে আসতে পারেননি। আমি হয়তো সৌভাগ্যবান ফিরতে পেরেছি। তাদের ভাগ্যে কি জুটেছে জানি না। যারা ফিরেছেন তারা তো লাকি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সেই আওয়ামী লীগই যদি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন হয় তাহলে রোমানিয়ার ফ্যাসিস্ট সরকার দলও ইতিহাসে তো ঐতিহ্যবাহী হওয়ার কথা, যারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিজ দেশের লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে তারাও তো ঐতিহ্যবাহী হওয়ার কথা। সেটা হয়নি, সংগত কারণে আজকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জনদাবি উঠেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আজকে অনেক ধরনের সাংবিধানিক সংকট তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের বিশ্লেষণ করতে হবে, বিপ্লবোত্তর ফসল কারা নিতে চায়, নষ্ট করতে চায়। রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক সংকট তৈরির পেছনে কারা কাজ করছে, ফ্যাসিবাদের দোসরদের চিহ্নিত করতে হবে। সংকট যাতে না হয়, সেজন্য ফ্যাসিবাদ ও দোসরদের সুযোগকে নস্যাৎ করে দিতে হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- সংগঠনের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।