টানা প্রায় ছয় ঘণ্টা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় অবরোধ করে রাখার পর কর্মসূচি প্রত্যাহার। গতকালকের কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। দাবি না মানলে আগামী রোববার থেকে গণঅনশনের কর্মসূচির কথা জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এদিকে চলমান আন্দোলন ঘিরে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
গতকাল বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আন্দোলনের সংগঠক আব্দুর রহমান আজকের মতো আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা করেন। এর আগে বেলা ১১টা থেকে তারা সায়েন্সল্যাব মোড়ে ব্লকেড কর্মসূচি শুরু করেন তারা। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং এর প্রভাবে রাজধানীজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। সড়ক আটকে জনদুর্ভোগ তৈরি না করে শিক্ষার্থীদের ধৈর্য্য ধরার এবং ক্লাসরুমে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলছেন, সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন ও আলটিমেটামের মাধ্যমে কোনো নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেয়ার কোনো নজির নেই’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে ৎ‘মুক্তি’ এবং স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে ঢাকার সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অন্যান্য আন্দোলন নিয়ে এক বিবৃতিতে শিক্ষা উপদেষ্টা এ আহ্বান রেখেছেন। গতকাল বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানের পাঠানো বিবৃতিতে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা এবং বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন নানা দাবি নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। একটি সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল অবস্থায় পাওয়া শিক্ষা খাতে শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।
এসব দাবি-দাওয়ার মধ্যে ন্যায্য-অন্যায্য এবং কিছুক্ষেত্রে পরস্পরবিরোধী দাবিও আছে। একটি বৈষম্যবিরোধী দাবি মানলে অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি হতে পারে।’ শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। সাত কলেজের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা নিরসনে গত ২৪ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটিকে সুপারিশ দিতে ৬ সপ্তাহ সময় বেঁধে দেয়া হয়। এই কমিটি বাতিল করে অবিলম্বে কমিশন গঠনের দাবি তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। সেই দাবি নিয়ে বুধবারও সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা আলাদাভাবে মহাখালীর আমতলীতে মিছিল ও রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘শিক্ষা খাতের যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের দাবিপূরণের সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকে এবং এর জন্য তাৎক্ষণিক সমাধান দেয়া কঠিন, অথচ সব কয়টি দাবির পেছনের আন্দোলনকারীরা তাদের দাবিকেই সবচেয়ে অগ্রাধিকার হিসেবে দেখছেন এবং দাবিগুলোকে শুধু রাস্তায় আন্দোলন করে তাৎক্ষণিক সমাধানযোগ্য মনে করছেন। এতে একদিকে যেমন রাস্তা অবরোধের ফলে অপরিসীম জনদুর্ভোগ হচ্ছে, সরকারও দাবিগুলো যথাযথ বিবেচনার সুযোগ পাচ্ছে না।‘ সাত কলেজের সমস্যা নিরসনে গঠিত কমিটি সাত সপ্তাহের মধ্যে দ্রুত একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে বলেও জানিয়েছেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, সমস্যাটির শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগে ঢাকার সাতটি কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতা থেকে বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত করার একটি অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাত কলেজের উভয় পক্ষেরই সমস্যা তৈরি হয়েছে। যে কারণে ওই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধা ও বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে ‘ন্যূনতম কিছু সময়ের’ প্রয়োজন মন্তব্য করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছেন, ‘এরই মধ্যে একটি কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন করেছেন। এরইমধ্যে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনাও হয়েছে। দেশের সমস্যাসঙ্কুল শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির প্রতি একজন আজীবন শিক্ষক হিসাবে অবশ্যই ব্যক্তিগতভাবে আমার সকল সহানুভূতি আছে।