ঢাকা ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নতুন টাকা ছাপালো বাংলাদেশ ব্যাংক

নতুন টাকা ছাপালো বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ছয়টি দুর্বল ব্যাংকে ২২,৫০০ কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, নতুন মুদ্রা ছাপানোর মাধ্যমে এই অর্থ সহায়তা দেয়া হলেও বাজারে অতিরিক্ত মুদ্রাস্রোত তৈরি করা হবে না। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য তারল্য সহায়তা : গভর্নর বলেন, ‘আমরা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দিচ্ছি। এই সহায়তার উদ্দেশ্য আমানতকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। ইতোমধ্যে ২২,৫০০ কোটি টাকা সরবরাহ করা হয়েছে। তবে এটিকে শুধুমাত্র সহায়তা হিসেবে না দেখে বাজার স্থিতিশীল রাখার একটি উদ্যোগ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।’ গভর্নর আরও জানান, রোববার থেকে ব্যাংকের শাখাগুলোতে গ্রাহকরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা তুলতে পারবেন। এতে করে ব্যাংকগুলোর ওপর যে চাপ ছিল, তা হ্রাস পাবে। তবে একবারে সব গ্রাহক যদি অতিরিক্ত অর্থ তুলতে যান, তাহলে পরিস্থিতি আবারো জটিল হতে পারে।

বাজারে অস্থিতিশীলতা প্রতিরোধে উদ্যোগ : ড. আহসান এইচ মনসুর আশ্বস্ত করেন যে, এই নতুন টাকা সরবরাহ বাজারে মুদ্রাস্ফীতি বাড়াবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন টাকা সরবরাহ করছি এক হাতে, আবার বন্ড ইস্যু করার মাধ্যমে সেই অর্থ তুলে নিচ্ছি। এতে বাজারে অতিরিক্ত মুদ্রাস্রোত তৈরি হবে না, আর মূল্যস্ফীতির ওপরও কোনো প্রভাব পড়বে না।’ এ সময় তিনি মনিটারি পলিসি টাইট রাখার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন। ‘বাজারকে অস্থিতিশীল করতে চাই না। রোববার থেকে গ্রাহকরা ব্যাংকের শাখায় গিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় অর্থ তুলতে পারবেন,’ তিনি বলেন।

আমানতকারীদের উদ্দেশ্যে বার্তা : গভর্নর আমানতকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা যে ব্যাংকেই টাকা রেখেছেন, তা নিরাপদ। আমানতকারীদের সুরক্ষায় আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাই দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। তবে কোনো আমানতকারী যদি একসঙ্গে বড় অঙ্কের টাকা উত্তোলন করতে চান, তাহলে সমস্যা তৈরি হতে পারে। এটি কোনো ব্যাংকই একসঙ্গে সামলাতে পারবে না।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল রাখতে চেষ্টা করছি। বাজারে তারল্য সংকটের সমাধান করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

গভর্নরের আগের অবস্থান থেকে পরিবর্তন : উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ১৩ আগস্ট ড. আহসান এইচ মনসুরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। দায়িত্ব গ্রহণের সময় তিনি জানিয়েছিলেন, নতুন করে টাকা ছাপিয়ে আর কোনো দুর্বল ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দেয়া হবে না। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে এই নতুন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গভর্নর বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল আন্তঃব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে তারল্য সংকট সমাধান করা। কিন্তু পরিস্থিতির জটিলতায় সরাসরি তারল্য সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এজন্য নতুন মুদ্রা ছাপাতে হয়েছে, তবে সেটি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত উপায়ে করা হয়েছে।’

গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, দেশের ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট দূর করতে ২ লাখ কোটি টাকার প্রয়োজন হতে পারে। তবে এই পুরো অর্থ সরবরাহ করলে মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি বাড়বে বহুগুণ। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমিত আকারে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হলো আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। ভবিষ্যতে এই সংকট নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।’ গভর্নরের এই বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকগুলোর স্থিতিশীলতা রক্ষায় দৃঢ়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে এই পদক্ষেপগুলোর সাফল্যনির্ভর করবে বাজারের প্রতিক্রিয়া এবং সরকারের সমন্বিত নীতিমালার ওপর।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত